হৃদরোগ বনাম হার্ট ফেইলিওর: পার্থক্য কোথায়?

heartdisease-freepik-010125-01-1735736724

হার্ট ফেইলিওরের প্রধান কারণ হচ্ছে হৃদরোগ। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও নির্দিষ্ট সংক্রমণের মতো অন্যান্য কারণও অবদান রাখতে পারে হার্ট ফেইলিওরে।

হৃদরোগ ও হার্ট ফেইলিওর এমন ধরনের শব্দ যা স্বাস্থ্য সম্পর্কে কথা বলার সময় প্রায়ই শোনা যায়। তবে এ দুটো এক বিষয় নয়।

উভয়েরই হার্টের সঙ্গে যোগসুত্র রয়েছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে এরা। তাই এদের মধ্যে পার্থক্য বোঝা গেলে তা স্বাস্থ্যের আরও ভাল যত্ন নিতে সহায়তা করতে পারে। এদের মধ্যে পার্থক্যকে সহজ করে তুলে ধরা হয়েছে সাম্প্রাতিক এক গবেষণায়।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ল্যানসেট-এ।

হৃদরোগ বলতে বোঝায় যা মানুষের হার্টকে প্রভাবিত করে এমন কোনও অবস্থা। এর মধ্যে রয়েছে করোনারি ধমনী রোগ, অস্বাভাবিক হার্টবিট বা অ্যারিথমিয়াস ও হার্টর ভালভ বা বিভিন্ন পেশীর মধ্যে সমস্যার মতো নানা ঘটনা।

হৃদরোগের মধ্যে করোনারি ধমনী রোগ সবচেয়ে সাধারণ একটি রোগ। এর ফলে ধমনীতে প্লাক তৈরি হয় ও হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ কমে যায়, যা বুকে ব্যথা বা এনজিনা, এমনকি হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে এটি।

অন্যদিকে, হার্ট যখন পুরো শরীরে রক্ত পাম্প করতে পারে না ওই সময় ঘটে হার্ট ফেইলিওর। এর মানে এই নয় যে, হার্ট নিজের কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে এ সময় হার্টের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

হৃদরোগ’সহ অন্যান্য কারণে হার্ট দুর্বল হওয়ার পরে যে কারো হার্ট ফেইলিওর হতে পারে। যেমন– ধমনী যদি পর্যাপ্ত অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তকে হৃৎপিণ্ডের পেশীতে পৌঁছাতে না পারে তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হার্ট দুর্বল হতে পারে। ফলে দেখা দেয় হার্ট ফেইলিওর।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, হার্ট ফেইলিওরের প্রধান কারণ হচ্ছে হৃদরোগ। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও নির্দিষ্ট সংক্রমণের মতো অন্যান্য কারণও অবদান রাখতে পারে হার্ট ফেইলিওরে।

গবেষণায় হার্ট ফেইলিওর হয়েছে এমন হাজার হাজার রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে।

গবেষকরা বলেছেন, হৃদরোগের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করে যেমন– কোলেস্টেরল কমিয়ে আনা বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জীবনে হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

হৃদরোগ ও হার্ট ফেইলিওরের বিভিন্ন লক্ষণে মিল থাকতে পারে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো আলাদা। হৃদরোগের বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে বুকে ব্যথা, ব্যায়ামের সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া বা হার্ট অ্যাটাক।

হার্ট ফেইলিওরের সঙ্গে প্রায়ই ক্লান্ত বোধ করার সম্পর্ত আছে। এমনকি বিশ্রামের সময়ও শ্বাসকষ্ট হয় বা শরীরে পানি জমার কারণে পা ও পায়ের নীচের অংশে ফোলাভাব দেখা দেয়। এসব পার্থক্য বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে ডাক্তারদের সহায়তা করে এসব পার্থক্য।

হৃদরোগ ও হার্ট ফেইলিওরের মধ্যে চিকিৎসারও পার্থক্য রয়েছে। যেমন– ওষুধ দিয়ে কোলেস্টেরল কমানো বা ব্লক ধমনী খোলার জন্য অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির মতো চিকিৎসা পদ্ধতি।

জীবনযাত্রার বিভিন্ন পরিবর্তন যেমন ধূমপান ত্যাগ করা, হার্টের জন্য উপকারী স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়াম করা। সুখবর হচ্ছে, হৃদরোগ ও হার্ট ফেইলিওর উভয় সঠিক যত্ন নিয়ে পরিচালনা করলে মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে।

এজন্য প্রাথমিক শনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত চেক-আপ, রোগীর পারিবারিক ইতিহাস জানা ও বিভিন্ন লক্ষণকে গুরুত্ব দিলে তা বড় পার্থক্য আনতে পারে হৃদরোগ ও হার্ট ফেইলিওরের ক্ষেত্রে।

গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মতো বিভিন্ন কারণ সক্রিয়ভাবে ঠেকানো গেলে তা রোগীদের হৃদরোগ ও হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে।

Pin It