চার জেলা থেকে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল চুরির খবর এসেছে।
বৃহস্পতিবার এ চার জেলায় চাল উদ্ধারের পাশাপাশি কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে; যাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জে এক আওয়ামী লীগ নেতাও রয়েছেন।
এর আগেও বিভিন্ন জেলা থেকে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির চাল চুরির খবর পাওয়া গিয়েছিল।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির ৬০ বস্তা চাল আত্মসাতের অভিযোগে দিগদাইড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনা জানিয়ে তাড়াইল থানার ওসি মুজিবুর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে এএসআই অরুণ কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দিগদাইড় ইউনিয়নের বরুহা সেতু এলাকা থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি চালের ৬০টি বস্তা ভর্তি একটি ট্রলি ও চালক উজ্জ্বলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে চালক তাদের জানান, ‘দিগদাইড় ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার নির্দেশে তার গুদাম থেকে ওই চাল তাড়াইল বাজারের চাল ব্যবসায়ী চাঁন মিয়ার দোকানে নিয়ে যাচ্ছিলেন।”
চালকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ডিলার আওয়ামী লীগ নেতা ও চাল ব্যবসায়ী চাঁন মিয়াকে আটক করে বলে জানান তিনি।
এ ঘটনা জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মাহমুদের নির্দেশে ওই ডিলারের গুদাম সিলগালা করা দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মাহমুদ বলেন, “খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের ৬০ বস্তা চাল কালোবাজারে বিক্রির অপরাধে দ্রুত থানায় মামলা দায়েরের জন্য খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাকে বলেছি।”
তাড়াইল থানার ওসি মুজিবুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা জিন্নাত সামসুন্নাহার বাদী হয়ে কালোবাজারে চাল বিক্রির অপরাধে আটক তিনজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন।
নওগাঁ
এ জেলার রাণীনগর উপজেলায় আবারো ১৮ বস্তা ওএমএস-এর চাল উদ্ধার করার পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রানীনগর থানায় মামলার পর আসামিকে বিকালে তাকে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আটক শাহিন আলম (৩২) জলকৈ গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে।
বুধবার রাতে উপজেলার জলকৈ গ্রাম থেকে ১৮ বস্তা ওএমএস এর চাল উদ্ধার করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে রানীনগর থানার ওসি জহুরুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার শাহিন আলম সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ১৮ বস্তা চাল কিনে বাড়িতে মজুত করে।
ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি হলে বুধবার রাত অনুমানিক ১১টা নাগাদ চাল তার বাড়ি থেকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সময় লোকজন আটক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে খবর দেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ৩০ কেজির ১৮ বস্তা চাল উদ্ধার করে এবং শাহিন আলমকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে বলে জানান তিনি।
উদ্ধারকৃত চাল একডালা ইউনিয়ন পরিষদে হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন।
এর আগে গত ২ এপ্রিল উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের রাতোয়াল শলগাড়ীয়া পাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আয়েত আলীর (৬৫) বাড়ি থেকে প্রায় ছয় মেট্রিক টন ভিজিডি ও ভিজিএফের চাল উদ্ধার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
পিরোজপুর
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় হতদরিদ্র পরিবারের ১০ টাকা কেজি দরে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়ম ও কালো বাজারে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নাজিরপুর থানার এস আই মো: সাইদুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের বৈঠাকাটা বাজারে তাদের এ বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, আবুল কালাম (৫৫) নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য এবং কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কলারদোয়ানিয়া গ্রামের আব্দুর জব্বারের ছেলে এবং গোলাম মোস্তফা (৫০) কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ এবং কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের উত্তর কলারদোয়ানিয়া গ্রামের হেমায়েত উদ্দিনের ছেলে।
এ সময় ইউনিয়নের বৈঠাকাটা বাজারে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ওএমএস ডিলার মহসিনের গুদামে তল্লাশি করে ওই কর্মসূচির ২৬ বস্তা চাল উদ্ধার করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও ইউএনও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান জানান, নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নে ওই কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়ম ও কালো বাজারে বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে তিনি ওই গুদামে অভিযান চালান। সেখান থেকে ২৬ বস্তা চাল উদ্ধার করেন।
“ওই চাল মার্চ মাসে বিতরণ করার কথা কিন্তু গ্রাহক না আসায় বিতরণ করা সম্ভব হয়নি বলে বিতরণের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ গোলাম মোস্তফা দাবি করে। তবে এ সময় তিনি মার্চ মাসের চাল বিতরণের রেজিস্ট্রারসহ ওই ইউনিয়নের ভুক্তভোগীদের তালিকা দেখাতে পারেননি। এক পর্যায়ে মাস্টাররোল উপস্থাপন করলেও তার সাথে চালের হিসেবে গড়মিল পাওয়া যায়।
“এছাড়া ওই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম বিরুদ্ধে ওই ওয়ার্ডের তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের না জানিয়ে তাদের নামের চাল তুলে নিয়ে বিতরণ না করার অভিযোগ পাওয়া যায়।”
ফরিদপুর
ফরিদপুরে অতি দ্ররিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি (ওএমএস) এর ২৩ বস্তা চাল জব্দ করেছে পুলিশ।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ আল ফারুক বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর বাজারের কাছে একটি ভ্যান বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার সময় আট বস্তা চাল আটক করে স্থানীয় জনতা। খবর পেয়ে পুলিশ তা জব্দ করে।”
এ ঘটনার পর স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে উত্তর শোভারামপুর এলাকার আক্কাস শেখের বাড়ি থেকে আরো নয় বস্তা চাল এবং অম্বিকাপুর পুরান বোর্ড অফিস থেকে আরো ছয় বস্তা চাল উদ্ধার করে পুলিশ বলে জানান তিনি।
“আক্কাস শেখ দরিদ্রদের কাছ থেকে কম দামে চাল কিনে পরবর্তী সময়ে সেই চাল বেশি দামে বিক্রি করে আসছিল। আমরা তাকে আটক করার জন্য খুঁজছি।”
এ ঘটনায় থানায় নিয়মিত একটি মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।