জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজন করেছে বিশেষ ভার্চুয়াল ওয়েবিনার ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা’ বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান। বুধবার অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আনিসুল হক এমপি। সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং সদস্য সচিব, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
অনুষ্ঠানে এটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম বলেন, ইতিহাসবিদদের মতে অমর থাকেন তারাই যারা কিছু লিখে যান। ১৫ আগস্ট আমরা জাতির পিতাকে হারিয়েছি, কিন্তু আমার মনে হয় তিনি আছেন, উনি আছেন আমার অনুভূতিতে। এই অনুভূতির কারন হলো বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য যে লেখা গুলো রেখে গেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন এসব পড়লেই অনুভব করা যায়। আর এসবের পিছনে একমাত্র অনুপ্রেরণা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তাঁর অনুপ্রেরণায় তিনি লিখে গেছেন।
শ ম রেজাউল করিম এমপি বলেন, সবচেয়ে জঘন্নতম যেটা- ৯ এপ্রিল ১৯৭৯ সালে ইন্ডেমিটি অধ্যাদেশে জিয়াউর রহমান স্বাক্ষর করেন, যা পার্লামেন্টে উঠেছিলো ৬ই এপ্রিল। এই আইনের মাধ্যেমে বঙ্গবন্ধু খুনিদের পশ্রয় দেন জিয়াউর রহমান। একইভাবে ২১শে আগস্ট ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার মদদ দেন খালেদা জিয়া। একভাবে যেমন জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদদ দিয়েছেন জিয়া তেমনভাবেই তার স্ত্রী ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার খুনিদের প্রশ্রয় দেন খালেদা জিয়া।
যারা সেনাবাহিনীকে ভুল বুঝিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করেছিল তা কমিশন গঠন করে রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যদি জাতি প্রকৃত অপরাধীদের না চিনতে পারে তাহলে কোন দিনই জাতীয় বেইমানদের মুখোশ উন্মোচন হবে না। একুশে আগস্ট খালেদা জিয়া জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেও খুনিদের দেশ থেকে পালাতে সাহায্য করেছিল। এখন আমার মনে হয়, শেখ হাসিনাকে রক্ষা না করলে বাংলাদেশ রক্ষা হবে না, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রক্ষা হবে না, তেমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ রক্ষা হবে না।
প্রধান অতিথি আনিসুল হক বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলা বিচারের সময় দেখি, স্বাক্ষীরা বলছে- বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়েছিলো তখন তিনি বলেছেন আমাকে এইখানে হত্যা কর। মানুষ কিন্তু তাঁর জীবন বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা করে।কিন্তু তিনি তা করেননি।বঙ্গমাতা খুনিদের বলেছিলো, আমাকে এখানেই হত্যা করো, আমি কোত্থাও যাবো না। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন, একটা দেশকে পরিচালনা করার যে অবকাঠামো দরকার সেটা হচ্ছে একটা সংবিধান। একটা দেশ যখনই উদীয়মান হচ্ছিলো, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আজ জাতিসংঘ বঙ্গবন্ধুকে বলছে বিশ্ববন্ধু। বঙ্গবন্ধুর অমরত্ব এখানেই, তিনি বলেছেন “মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ” এবং তিনি কিন্তু সেটা করে দেখিয়েছেন। আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এটা প্রমাণ করে বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল, ভালোবাসা , প্রেম সবকিছু ছিলো।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালের পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তিনি আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করার জন্য যাতে করে জিয়া সহ যারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত ছিল তাদের সবার মরণোত্তর বিচার করা যায়। যাতে করে জাতি জানতে পারে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন এর সাথে একমত পোষণ করে অবিলম্বে কমিশন গঠনের জন্য আইনমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
এডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির পরাজিত পক্ষ তাদের পরাজয়ের বদলা নিতেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। জিয়া সহ যারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত ছিল তাদের সবার মরণোত্তর বিচার দাবি করেন এবং অবিলম্বে আইনমন্ত্রীকে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি আরো বলেন পরাজিত শত্রুদের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনো নেত্রী শেখ শেখ হাসিনা এখনো নিরাপদ নয়। পরাজিত শত্রুরা তাকে হত্যা করার জন্য তাড়া করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে দেশ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাবে।
এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এমপি বলেন, ভুয়া আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধু সহ যারা ১৫ আগস্ট শহীদ হয়েছিলেন তাদের বিচার বন্ধ করেছিল। এরকম আইন থাকা সত্ত্বেও সাংবিধানিকভাবে বিচার করা সম্ভব ছিল। কেননা এমন আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা সংসদেরও নেই। তাই আইনের চোখে ওই আইনের কোনো মূল্যই ছিল না। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা ছিল তাদের বিচারের দাবি জানান আব্দুল মতিন খসরু।
সঞ্চালক শেখ ফজলে নূর তাপস অনুষ্ঠানে বলেন, জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন। একুশ বছর আমরা বিচার পাইনি পিতা-মাতা হত্যার। অন্যায়ের বিচার হবে এটাই একজন ভুক্তভোগীর দাবি। মানবতার দোহাই দিয়ে অপরাধীদের দেশে না ফেরত পাঠানো কোনভাবেই সমীচীন নয়।
এক্সিকিউটিভ কমিটি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, সত্তরের নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তান জনগণের রায় প্রতিস্ঠিত করেনি। কিন্তু তারা প্রতিষ্ঠা করে গেছে বাঙালির নেতা কে ছিলেন। সকল হুমকিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা ব্যর্থ হলে ব্যর্থ শক্তি সংগটিত হবে এবং আওয়ামী লীগকে আক্রমণ করবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে ষড়যন্ত্রকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
https://www.facebook.com/awamileague.1949/videos/610452432998440/