পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দেওয়ার নির্দেশনা আসার পর ১৫ দিনে ২৬ লাখ নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস বিকাশে আগে প্রতিদিন ২০ হাজারের মত নতুন অ্যাকাউন্ট যোগ হত। আর ৬ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে খোলা হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ নতুন অ্যাকাউন্ট।
ডাচ–বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ এই সময়ে নতুন সাত লাখ এবং ডাক বিভাগের আর্থিক সেবা ‘নগদ’সাত লাখের কাছাকাছি নতুন গ্রাহক পেয়েছে।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করেছে। সেই টাকা ব্যাংক হিসাব অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, “এমএফএসগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, শ্রমিকদের মধ্যে যাদের অ্যাকাউন্ট নেই, ২০ এপ্রিলের মধ্যে তা খুলে দিতে হবে। সে কারণেই এ সময়ে প্রচুর অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।”
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস তৈরি পোশাক খাতে ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক জড়িত, যাদের একটি বড় অংশ নারী।
তাদের একটি অংশের বেতন আগে থেকেই মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে হত। কত শ্রমিক এখনও অ্যাকাউন্টের বাইরে আছেন তা স্পষ্ট নয়।
বিকাশের কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় ঘরে বসে কেনাকাটাসহ প্রয়োজনীয় লেনদেন সারতে এমনিতেও বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে।
“তবে নতুন করে যে সাড়ে ১২ লাখ হিসাব খোলা হয়েছে, এর বড় অংশই পোশাক খাতের শ্রমিকদের। আমরা নিজেরা অনেক হিসাব খুলে দিয়েছি। আবার কারখানাগুলোর উদ্যোগেও হিসাব খোলা হয়েছে।”
ডালিম জানান, ৪০০ পোশাক কারখানার প্রায় ৪ লাখ শ্রমিকের বেতন আগে থেকেই বিকাশের মাধ্যমে হত। নতুন সাড়ে ১২ লাখ গ্রাহক পাওয়ার আগে বিকাশের হিসাব সংখ্যা ছিল ৪ কোটির মত।
ডাচ–বাংলা ব্যাংকের সেবা রকেটের মাধ্যমে আগে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৬০০ প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হত। এর বেশির ভাগই পোশাক খাতের কোম্পানি বলে রকেটের কর্মকর্তারা জানান।
ডাচ–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “আমরা নতুন করে ৭ লাখ শ্রমিকের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব খুলেছি। এর ফলে আমাদের হিসাব সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ।”
ডাক বিভাগের সেবা নগদ নতুন করে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ হিসাব খুলেছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানার ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ এবং বিকেএমইএ সদস্য কারখানার ২ লাখ ২৯ হাজার শ্রমিকের অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, “আমরা নতুন করে প্রচার চালিয়েছি। শ্রমিকদের হিসাব খোলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। এর ফলে প্রায় ৭ লাখ নতুন করে হিসাব খোলা সম্ভব হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরের নির্দেশনা অনুযায়ী এখনও হিসাব খোলা অব্যাহত রেখেছে এমএফএসগুলো।
শ্রমিকদের বেতন সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, যে সব কারখানা সচল আছে সে সব কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের চলতি এপ্রিল, মে এবং জুন মাসের বেতন-ভাতা প্রণোদনা তহবিল থেকে দেওয়া হবে।