দিপু চাকমাকে দিয়ে শুরু হয়েছিল সোনা জয়ের উৎসব। সোমবার সকালে রোমান সানার হাত ধরে এলো অষ্টাদশ সোনার পদক। এরপর শুরু নতুন ইতিহাস গড়ার ক্ষণ গণনা। বিকেলে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ছেলেদের ক্রিকেটে ধরা দিল সোনা। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের (এসএ) ইতিহাসে নিজেদের সাফল্যের নতুন গল্প লিখল বাংলাদেশ। ১৯ সোনা জয়ে ছাড়িয়ে গেল আগের সব আসরকে।
সাফল্যের নতুন শিখরে পা রাখল বাংলাদেশ। এবারের আগে সেরা সাফল্য ছিল ২০১০ সালে। সেবার দেশের মাটিতে প্রাপ্তি ছিল ১৮টি সোনা।
দেশের বাইরের গেমসে আগের সেরা সাফল্যকে পেরিয়ে এবার যোজন যোজন এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ১৯৯৫ মাদ্রাজ আসরে পাওয়া ৭ সোনা ছিল আগের সেরা।
কাঠমান্ডু-পোখারার আসের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশকে প্রথম সোনার পদক এনে দিয়েছিলেন দিপু, তায়কোয়ান্দো থেকে।
তৃতীয় দিনে তিনটি সোনার পদক জেতে বাংলাদেশ। তিনটিই কারাতে থেকে। পুরুষ একক কুমিতের অনূর্ধ্ব-৬০ কেজিতে পাকিস্তানের জাফরকে ৭-৩ পয়েন্টে হারান আল আমিন।
কুমিতে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজিতে পাকিস্তানের কৌসরা সানাকে ৪-৩ পয়েন্টে হারিয়ে সোনা জেতেন মারজান আক্তার প্রিয়া। এরপর অনূর্ধ্ব-৬১ কেজিতে স্বাগতিক নেপালের অনু গুরুংকে ৫-২ পয়েন্টে মাহফুজা আক্তার অন্তরা উড়িয়ে দেন।
প্রতিযোগিতার সপ্তম দিনে আরও তিনটি সোনা জয়ের উৎসবে মাতে বাংলাদেশ। পোখারায় মেয়েদের ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচে ৮০ কেজি এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৫ কেজি মিলে মোট ১৮৫ কেজি ওজন তুলে সেরা হন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত।
ছেলেদের ৯৬ কেজিতে স্ন্যাচ (১২০ কেজি) ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক (১৪২ কেজি) মিলিয়ে ২৬২ কেজি তুলে সেরা হন জিয়ারুল ইসলাম। এরপর ফেন্সিংয়ে মেয়েদের সেইবার ইভেন্টের এককের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের রাবিনা থাপাকে ১৫-১০ পয়েন্টে হারান ফাতেমা মুজিব।
প্রতিযোগিতার অষ্টম দিনটি ছিল বাংলাদেশের জন্য সোনায় মোড়ানো। সব মিলিয়ে ধরা দেয় ৭টি সোনা। পোখারায় আর্চারির রিকার্ভ দলগত ইভেন্টের ফাইনালে ভুটানকে ৫-৩ সেট পয়েন্টে হারায় রোমান সানা, তামিমুল ইসলাম ও হাকিম মোহাম্মদ রুবেলে গড়া দল।
ওই পদকেই দেশের বাইরে সাফল্যের নতুন রেকর্ড গড়া হয়ে যায়। এরপর কেবল নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার পালা।
সেদিন সকালেই রিকার্ভ মহিলা দলগতের ফাইনালে ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার মনিরা ও বিউটি রায় ৬-০ সেট পয়েন্টে সোনা জিতেন। সেরার পদক আসে রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্ট থেকেও।
দুপুরে কম্পাউন্ড পুরুষ দলগত বিভাগের ফাইনালে ভুটানকে ২২৫-২১৪ স্কোরে হারায় অসীম কুমার দাস, সোহেল রানা ও মোহাম্মদ আশিকুজ্জামানে গড়া দল। কম্পাউন্ড মহিলা দলগত ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২২৬-২১৫ ব্যবধানে জিতে সুস্মিতা বণিক, শ্যামলী রায় ও সোমা বিশ্বাসে গড়া দল। কম্পাউন্ড মিশ্র দ্বৈতে সেরা হন সোহেল-সুস্মিতা জুটি।
একই দিনে ক্রিকেট থেকে মেয়েরা উপহার দেয় সোনার পদক।
সোমবার প্রতিযোগিতার নবম দিনের সকালে সোনালি হাসির শুরু আর্চারির মেয়েদের কম্পাউন্ড এককের ফাইনাল থেকে। শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীকে ১৪২-১৩৪ স্কোরে হারান সুমা বিশ্বাস। এরপর পুরুষ এককের ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ১৩৭-১৩৬ স্কোরে ভুটানের প্রতিযোগীর বিপক্ষে জিতে যান সোহেল।
মেয়েদের রিকার্ভ এককে ভুটানের প্রতিযোগী দেমা সোনমের বিপক্ষে ৭-৩ সেট পয়েন্টে ইতি খাতুন এবং ছেলেদের রিকার্ভ এককের ফাইনালে ভুটানের কিনলে তিসেরাংকে ৭-১ সেট পয়েন্টে রোমান সানা উড়িয়ে দিলে ২০১০ সালের এসএ গেমসে পাওয়া সাফল্যকে স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
ছেলেদের ক্রিকেটের সাফল্য নিয়ে শঙ্কার অবকাশ ছিল যথেষ্টই। ফাইনালের পোশাকি লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কাছে স্রেফ উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩। তবে ফাইনালে বদলে যায় চিত্র। ৭ উইকেটের অনায়াস জয়ে দেশকে সোনার পদক এনে দিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
সব মিলিয়ে ১৯ সোনায় বাংলাদেশ ছাপিয়ে গেছে ৯ বছর আগের সাফল্যকে। আসরের বাকি সময়টায় অপেক্ষা কেবল এবারের রেকর্ডকে আরও সমৃদ্ধ করার।