যদি জিজ্ঞেস করা হয় ইন্টারনেটে প্রতি মিনিটে কী কী ঘটে যাচ্ছে তাহলে উত্তর কী হতে পারে? উত্তর খুঁজতে যদি আপনাকে ভাবতে বলা হয়, তাহলে কত বড় পরিসরে আপনি ভাবতে পারবেন? যদি বলা হয়, আপনার এই পরিচ্ছেদ পড়তে পড়তে বিশ্বজুড়ে অনলাইনে ১০ লাখ মার্কিন ডলারের কেনাবেচা হয়ে গেছে তাহলে?
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, বাস্তবতা এটাই। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ক্লাউড সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডোমো তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এমন সব চমকপ্রদ তথ্য।
বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ক্লাউড সেবা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত সেবা দেয় ডোমো। ‘ডাটা নেভার স্লিপস’ শিরোনামে প্রতিবছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। ইন্টারনেট দুনিয়ায় মাত্র ১ মিনিটে কেমন ডাটা বা তথ্য আদান-প্রদান করা হয়ে থাকে সেই তথ্যই জানায় প্ল্যাটফর্মটি।
সম্প্রতি ২০২০ সাল নিয়ে নিজেদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডোমো। এতে বলা হয়, প্রতি ১ মিনিটে গড়ে বিশ্বজুড়ে ১০ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণে অনলাইনেই কেনাকাটা করেন গ্রাহকেরা। মার্কিন ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজন প্রতি সেকেন্ডে ছয় হাজার ৬৫৯টি পার্সেল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত করে।
প্রতি মিনিটে দেড় লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজেদের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান করে থাকেন। প্রায় দেড় লাখ ছবি প্রতি মিনিটে ফেসবুকে আপ করেন ব্যবহারকারীরা। পিছিয়ে নেই ফেসবুকের মালিকানাধীন অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোও। তাৎক্ষণিক বার্তা আদান-প্রদানের প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়িয়ে গেছে ফেসবুককেও। হোয়াটস অ্যাপে প্রতি মিনিটে চার কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ জন ব্যবহারকারী বার্তা আদান-প্রদান করছেন। ইন্সটাগ্রামে তিন লাখ ৪৭ হাজার ২২২ জন ব্যবহারকারী তাদের স্টোরিতে ছবি আপলোড করছেন।
আরেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে প্রতি ৬০ সেকেন্ডে নতুন ৩১৯ জন ব্যবহারকারী যুক্ত হন। ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটগুলোতেও চোখ আটকে বসে থাকেন লাখ লাখ ব্যবহারকারী।
ডোমো বলছে, ইউটিউবে প্রতি সেকেন্ডে যেসব ভিডিও আপলোড করা হয় তা একসাথে ৫০০ ঘণ্টার বেশি। আর নেটফ্লিক্সে যেসব ভিডিও প্রতি মিনিটে স্ট্রিমিং করেন ব্যবহারকারীরা তার সম্মিলিত যোগফল ৪ লাখ ৪ হাজার ৪৪৪ ঘণ্টা।
বিনোদনের পাশাপাশি ‘সিরিয়াস’ প্ল্যাটফর্মগুলোতেও বেশ আনাগোনা থাকে নেটিজেনদের। ক্যারিয়ার ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংকড ইন-এ বিশ্বজুড়ে ৬৯ হাজার ৪৪৪টি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেন ব্যবহারকারীরা। আর করোনার কারণে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা জুম-এ প্রতি মিনিটে দুই লাখ আট হাজার ৩৩৩ জন ব্যবহারকারী কোন না কোন ভার্চুয়াল সভায় অংশ নিচ্ছেন।
ডোমো বলছে, বিশাল আকার ও বিপুল সংখ্যক এই তথ্য আদান প্রদান প্ল্যাটফর্মগুলোকেও এসব তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে। আর এসব তথ্য পেয়ে প্ল্যাটফর্মগুলো দিনে দিনে শক্তিশালী হচ্ছে। তথ্যের আদান-প্রদান কমে যাবে বা প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে তথ্যভাণ্ডার কমে যাবে; এমন কোন সম্ভাবনাও দেখছে না ডোমো। কাজেই ব্যবহারকারীদের এসব বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ভেবে দেখুন কী পরিমাণ তথ্য প্রতি মিনিটে তৈরি হচ্ছে! এসব ডাটার গোপনীয়তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যের সংবেদনশীলতা তুলনা করে সেগুলোকে শ্রেণিভুক্ত করতে এখনই আমাদের একটি গাইডলাইন দরকার আর সংবেদনশীল তথ্যগুলোকে স্থানীয় পর্যায়েই রেখে দিতে হবে।