স্ত্রী-সন্তান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত খুলনার রূপসার শেখ জাহিদ ২০ বছর কনডেম সেলে থাকার পর আপিল বিভাগের রায়ে মুক্তি পেয়েছেন।
সোমবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. ওমর ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মুক্তি পাওয়ার পর জাহিদ আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমি মুক্তি পাবো তা কখনও ভাবিনি। সব সময় মৃত্যু কামনা করেছি। মনে হচ্ছে আবার নতুন করে জন্মগ্রহণ করেছি। এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। এখন সরকার যদি কিছু ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে কিছু করে খেতে পারবো। আমি কোন ভারি কাজ করতে পারবো না। আমার স্ত্রীর আগের স্বামী তাকে হত্যা করেন। কিন্তু আমার শ্বশুর সন্দেহজনক হিসেবে আমার নামে মামলা করেন।
এর আগে বিকেল ৫টায় বাগেরহাট থেকে জাহিদের খালাস হওয়ার কাগজপত্র খুলনা জেলা কারাগারে আসে।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে দেড় বছরের মেয়েসহ স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগের মামলায় গত মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহিদ শেখকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
১৯৯৭ সালের ১৬ জানুয়ারি জাহিদ শেখের শ্বশুর বাগেরহাটের ফকির হাট থানার উত্তর পাড়ার ময়েন উদ্দিন থানায় এজাহার দায়ের করেন। ওই এজাহার মতে, ময়েন উদ্দিনের মেয়ে রহিমার সঙ্গে ঘটনার তিন বছর আগে খুলনার রূপসা থানার নারিকেলি চাঁদপুরের ইলিয়াছ শেখের ছেলে জাহিদ শেখের বিয়ে হয়। বিয়ের পর জাহিদ ঘরজামাই থাকতেন। পরে তাদের একটি মেয়ে সন্তান হয়।
ঘটনার তিন মাস আগে রহিমা তার জামাই এবং সন্তানসহ বাবার বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি পাকা ঘরে বসবাস শুরু করেন।
১৯৯৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ময়েন উদ্দিনের স্ত্রী আনজিরা বেগম মেয়ের বাড়িতে গেলে দেখেন ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢুকে খাটের ওপর কাঁথা ও লেপের নিচে সন্তানসহ রহিমার গলায় মাফলারের গিট দেওয়া মরদেহ দেখতে পান।
সেদিন সকাল নয়টার দিকে জাহিদকে টেম্পু করে খুলনার দিকে অনেকেই যেতে দেখেন। ময়েন উদ্দিনের সন্দেহ হয় জাহিদ শেখ তার মেয়ে ও নাতনিকে রাতের যে কোনো সময় হত্যা করে পালিয়ে গেছেন।
২০০০ সালে এ মামলায় বিচারিক আদালত জাহিদ শেখকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এর বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০০৪ সালে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। পরে কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জাহিদ শেখ আপিল করেন। শুনানি শেষে গত মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) তার আপিল মঞ্জুর করা হয়।