পলাতক এই ১৬ আসামি এখনও রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই ১৬ জনের মধ্যে বর্তমানে চারজনের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিস রয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলটির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের নামে রেড নোটিস থাকলেও তা সরিয়ে নিয়েছে ইন্টারপোল।
ওই হামলার ১৫বছর পূর্তির আগে মঙ্গলবার সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জিজ্ঞাসায় বলেন, গত বছর রায়ের সময় ১৮ জন পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাইদ হাসান এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান খান আদালতে আত্মসমর্পণ করায় এখন পলাতক ১৬ জন।
ইন্টারপোল বাংলাদেশ শাখার ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোতে (এনসিবি) কর্মরত এআইজি মহিউল ইসলাম জানান, এই ১৬ জনের মধ্যে চারজনের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিস বহাল আছে। তারেক রহমান এবং কায়কোবাদের নামে রেড নোটিস সরিয়ে নিয়েছে ইন্টারপোল।
বাদ দেওয়া দুজনের নাম পুনর্বহালে ইন্টারপোলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পলাতক যে চারজনের নাম বহাল আছে, তারা হলেন জঙ্গিনেতা মাওলানা মো. তাজউদ্দিন মিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, রাতুল আহমেদ বাবু এবং হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
তারা লবিস্ট নিয়োগ করে রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে নোটিস তুলেছিল বলে মহিউল জানান।মহিউল জানান, তারেক রহমানের রেড নোটিস জারি হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল। ইন্টারপোল তুলে নেয় পরের বছরের ২৬জানুয়ারি। অন্যদিকে কায়কোবাদের নামে রেড নোটিস জারি হয় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর। ইন্টারপোল তুলে নেয় গত বছরের ৪ মে।
চারটি কারণে ইন্টারপোল রেড নোটিস জারি করে না, সেগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক, ধর্মীয়, জাতিগত এবং বর্তমানে কর্মরত আছে এমন সেনা সদস্য।
বর্তমানে যে চারজনের নামে রেড নোটিস আছে তাদের এবং অন্য পলাতকদের অবস্থান কোথায়, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই বাংলাদেশ পুলিশের কাছে।
তবে তাজউদ্দিন সাউথ আফ্রিকা অথবা পাকিস্তানে, হারিছ চৌধুরী মালয়েশিয়ায় অথবা লন্ডনে, কায়কোবাদ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে, হানিফ ভারত অথবা মালয়েশিয়ায়, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এ টি এম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে ও সাইফুল জোয়ারদার কানাডায়, রাতুল সাউথ অফ্রিকায়, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা।
খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক এক দশক ধরেই যুক্তরাজ্যে রয়েছেন সপরিবারে। তাকে ফেরত আনতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বিভিন্ন সময়ে সরকার বলেছে, তবে তা এখনও ফলপ্রসূ হয়নি।
রেড নোটিস যাদের বিরুদ্ধে হয়নি, পলাতক এই ১০ জন হচ্ছেন- অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন আহমদ, মো. ইকবাল, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, জাহাঙ্গির আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই।
এনসিবি ঢাকা অফিস বলছে, সিআইডির কাছ থেকে ১০জনের বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো তথ্য দিতে পারছে না। ফলে ইন্টারপোলে নথিপত্র পাঠানোই যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, ১০ আসামির সব তথ্য তাদের কাছে নেই বলে তারা দিতে পারছেন না।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল অবশ্য হতাশ না হয়ে বলেন, এই ১০ জনের তথ্য নেওয়ার কাজ চলছে। পুরো তথ্য পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন। সমাবেশে উপস্থিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার শ্রবণশক্তি।
একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ের পর বছর গড়াতে চললেও পলাতক আসামিদের বিষয়ে পুলিশের কাছে নতুন কোনো তথ্য নেই।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিতের চেষ্টার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জঙ্গিনেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।
দুই বছর পর ২০০৯ সালে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ হলে আরও দুই বছর সময় নিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন সিআইডি কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকসহ ৩০ জন আসামির তালিকায় যোগ হন। সব মিলিয়ে আসামির সংখ্যা সাত পুলিশ কর্মকর্তাসহ দাঁড়ায় ৫২ জনে। এর মধ্যে জামায়াত নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদ, জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নান ও বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় আসামি কমে আসে ৪৯ জনে।
এই ৪৯ জনের মধ্যে ১৯ জনের ফাঁসি, ১৯ জনের যাবজ্জীবন, ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় হয় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর।
এদিকে আলোচিত এই ঘটনার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে ডেথ সেলে রয়েছেন।