আগামীকাল ২১ আগস্ট। দেড় দশক আগে এই দিনে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালায় হরকাতুল জিহাদের একদল জঙ্গি, যা ছিল ছয় বছর ধরে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলা ও শেখ হাসিনাকে হত্যার ধারাবাহিক চেষ্টার এক চূড়ান্ত রূপ।
একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি যোগাযোগ এবং সরকারের উদাসীনতা ও ক্ষেত্রবিশেষে সহযোগিতা বা পৃষ্ঠপোষকতায় একটি উগ্রপন্থী গোপন সংগঠন কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, সেটারও একটা বড় উদাহরণ হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী (হুজি-বি)একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি যোগাযোগ এবং সরকারের উদাসীনতা ও ক্ষেত্রবিশেষে সহযোগিতা বা পৃষ্ঠপোষকতায় একটি উগ্রপন্থী গোপন সংগঠন কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, সেটারও একটা বড় উদাহরণ হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী (হুজি-বি)।
১৯৯৯ সালের মার্চ থেকে ২০০৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় বছরে এই জঙ্গিগোষ্ঠী দেশে ১৩টি বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে ১০৬ জন নিহত হন। আহত হন ৭০০–র বেশি মানুষ। আওয়ামী লীগ ও সিপিবির সমাবেশ, উদীচী ও ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর এসব হামলা হয়। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকেই হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে অন্তত চার দফা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক বছরের মধ্যে হুজি–বির প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি গ্রেপ্তার হন। শীর্ষ জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। দীর্ঘদিন এই জঙ্গিগোষ্ঠীর কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নেই। তবে দেশে জঙ্গি হামলার ঝুঁকি শেষ হয়ে যায়নি। আইএস ও আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের মতাদর্শ অনুসরণকারী একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী নতুন মাত্রার ঝুঁকি তৈরি করেছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে সেটার ভয়ংকর রূপ দেখা গেছে। সম্প্রতি ঢাকায় কয়েকটি পুলিশ বক্সের কাছে বোমা পেতে রেখে এবং পুলিশের একটি গাড়িতে সময়নিয়ন্ত্রিত বোমা ফাটিয়ে আইএস মতাদর্শী জঙ্গিরা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দেশে এখন আলোচনায় রয়েছে প্রধানত তিনটি জঙ্গিগোষ্ঠী—জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আইএসপন্থী নব্য জেএমবি ও আল-কায়েদাপন্থী আনসার আল ইসলাম। হোলি আর্টিজানের হামলা বাদ দিলে এই তিনটি গোষ্ঠীর কেউই হুজি-বির মতো এত বেশিসংখ্যক বড় হামলা চালাতে পারেনি।
আফগানফেরত মুজাহিদদের গড়া সংগঠন হুজি-বি এ দেশে জঙ্গিবাদের গোড়াপত্তন করেছিল। বাংলাদেশ থেকে যেসব ব্যক্তি তৎকালীন সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই এর সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁরা ছিলেন কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষিত। সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছিলেন। ১৯৯২ সালে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করার পর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছিল হুজি-বির বিস্তারপর্ব। শুরুতে তাদের লক্ষ্য ছিল ভারতের কাশ্মীরে এবং মিয়ানমারের আরাকানে স্বাধীনতাকামী মুসলমানদের হয়ে লড়াই করা। কাশ্মীরের ও রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্তও ছিল হুজি-বি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের পর থেকে হুজি-বি রোহিঙ্গাদের থেকে মনোযোগ সরিয়ে এ দেশের ভেতরে নাশকতামূলক তৎপরতা শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু করে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের (১৯৯৬-২০০১) শেষ তিন বছর হুজি-বির জঙ্গিরা আটটি বড় ধরনের বোমা হামলা চালিয়েছিল। তখন তিন দফা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালায় এই জঙ্গিরা। এর মধ্যে প্রথম চেষ্টা হয়েছিল ২০০০ সালের জুলাইয়ে; গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল ও হেলিপ্যাডের কাছে দূরনিয়ন্ত্রিত দুটি শক্তিশালী বোমা পুঁতে রেখে। কোটালীপাড়ায় হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর ২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হুজি। কিন্তু তিন দিন আগে ২৭ মে সেতুর কাছাকাছি রূপসা নদী থেকে দুটি ইঞ্জিন নৌকাভর্তি ১৫ জঙ্গি ধরা পড়ে যাওয়ায় সেটিও আর সফল হয়নি। এই ১৫ জনের একজন মাসুম বিল্লাহ ওরফে মুফতি মইন ঢাকায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর এই মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। গ্রেপ্তার হওয়া সবাই কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে যান।
এরপর ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে নির্বাচনী জনসভায় হত্যার পরিকল্পনা করেন হুজির জঙ্গিরা। কিন্তু শেখ হাসিনা সিলেট পৌঁছান নির্ধারিত সময়ের অনেক পর। জনসভা ছিল সিলেট শহরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। তিনি সভাস্থলে পৌঁছার পর রাত আটটার দিকে কাছাকাছি এলাকায় একটি মেস ঘরে জঙ্গিদের তৈরি বোমা কোনো কারণে বিস্ফোরিত হয়ে যায়। শেখ হাসিনা তখন সভামঞ্চে ছিলেন। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে দুই জঙ্গি নিহত হন। আহত অবস্থায় হুজি-বির দুই সদস্য মাসুদ আহমেদ (শাকিল) ও আবু ওবায়দা গ্রেপ্তার হন। তখন আসামি মাসুদ আহমেদ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার বিবরণ দিলেও কিছুদিন পর পুরো বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। পরে ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর ও ১৯ নভেম্বর হুজির দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাওলানা আবু সাইদ ও মুফতি হান্নানের দেওয়া জবানবন্দিতে এই হত্যাচেষ্টার কথা বলেন। পরে এই ঘটনার নতুন করে তদন্ত শুরু হয়।
এক সরকারের উপেক্ষা, আরেক সরকারের ধামাচাপা
২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখার ঘটনার পর হুজি-বি ও এর অন্যতম নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের নাম আলোচনায় আসে। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার এবং এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে এবং কার্যকর তদন্ত করতে সক্ষম হয়নি। এর আগের বছর যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলায়ও জঙ্গিদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয় তদন্তে। বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতাদের আসামি করায় পুরো তদন্তই ভিন্ন খাতে চলে যায়। এরপর ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টনে সিপিবির সমাবেশে, ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে, ৩ জুন গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জায়, ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলা ও ব্যাপক প্রাণহানির পরও এই জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়নি তখনকার সরকার।
২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তারাও এসব মামলার সুষ্ঠু তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি। উল্টো ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। এই চেষ্টার শুরু থেকেই এ বিষয়সহ হুজি-বির তৎপরতার বিষয়ে টানা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে ২১ আগস্ট মামলার নতুন করে তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেয় এবং বিচার শুরু করে।
এদিকে যখন হুজি-বির বিষয়ে উদাসীনতা বা তাদের কার্যক্রম ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছিল, সেই সুযোগে দেশে আত্মপ্রকাশ করে নতুন এক জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবি। হুজি হানাফি মাজহাব হলেও জেএমবি সম্পূর্ণ সালাফি মতাদর্শী। এই গোষ্ঠীটি ২০০১ সাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় সিনেমা হল, যাত্রা অনুষ্ঠান, মাজার ও বিভিন্ন এনজিওতে হামলা শুরু করে। ২০০৪-০৫ সালে এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। তখনো এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু ২০০৪ সালে রাজশাহীতে চরমপন্থী দমনের নামে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জেএমবির (তখন ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা’ নাম ব্যবহার করেছিল) তৎপরতায় স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা ছিল। তখন বিএনপির কয়েকজন মন্ত্রী ও সাংসদের বিরুদ্ধে এই জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ ওঠে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার পর বিএনপি সরকার জেএমবি দমনে অভিযান শুরু করলেও হুজি-বির বিষয়ে শেষ পর্যন্ত নির্লিপ্তই থেকে যায়।
নেপথ্যে অন্য কোনো শক্তির অন্য কোনো উদ্দেশ্য?
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলের (২০০১–০৬) প্রথম তিন বছর হুজি চুপচাপ ছিল। ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে আবার নাশকতা শুরু করে। তিন মাসের মাথায় ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে তাঁর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন আইভী রহমানসহ দলের ২২ নেতা–কর্মী। আহত হন শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা–কর্মী। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ কিবরিয়াসহ পাঁচজনকে হত্যা করে।
জঙ্গিবাদবিষয়ক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভ্রান্ত হলেও প্রত্যেক জঙ্গিগোষ্ঠীর একটা মতাদর্শ থাকে। কিন্তু হুজি-বি সেখান থেকে দূরে সরে একপর্যায়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার ক্রীড়নকে পরিণত হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার পরিকল্পনাও সেই সূত্রে গাঁথা বলে ধারণা করা হয়।
এসব হামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সিআইডির এমন একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে এই জঙ্গিনেতা বলেছেন, শেখ হাসিনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা অনেক বড় জায়গা থেকে এসেছে। তিনি কেবল তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। ‘বড় জায়গা’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত বলেননি। আদালতে দেওয়া তাঁর জবানবন্দিতেও এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। তবে আদালতে তিনি বলেছেন, ২০০০ সালের জুলাই মাসে হুজির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। আর, ২১ আগস্ট হামলার ঘটনায় তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপির নেতা তারেক রহমানের সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন।
দীর্ঘদিন জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. নুর খান। তিনি বলেন, হুজির সব হামলা ছিল অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর। তারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে দেশে অস্থিতিশীল একটা পরিস্থিতি তৈরি এবং রাষ্ট্রকাঠামোকে দুর্বল করে এখানে একটা যুদ্ধক্ষেত্র বানাতে চেয়েছিল। এর পেছনে অন্য কোনো শক্তির অন্য কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টাও ছিল বলে মনে হয়।
অস্ত্রের চালান ও গোয়েন্দা যোগাযোগ
হুজি-বি জঙ্গিদের একটা অংশ ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সক্রিয় জঙ্গিগোষ্ঠীর জন্য অস্ত্র-গ্রেনেড পাঠানোর কাজেও যুক্ত হয়। এতে যুক্ত ছিলেন বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নান, কাশ্মীরের হিজবুল মুজাহিদীনের নেতা ইউসুফ ওরেফ মাজেদ বাটসহ অনেকে। মুফতি হান্নান ও মাজেদ বাটসহ গ্রেপ্তার হওয়া অন্যান্য জঙ্গির জবানবন্দিতে এটা এসেছে। কাশ্মীরি জঙ্গিদের জন্য পাকিস্তান থেকে আসা আর্জেস গ্রেনেডের একটা অংশ ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে বলেও তাঁরা আদালতকে জানান।
হুজি–বি বিএনপি সরকার আমলে গোয়েন্দা সংস্থার একটা অংশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পেয়েছে, সেটা পরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের তৎকালীন কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার সাজাও হয়েছে এই মামলার রায়ে। গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ কিছু কর্মকর্তার পরামর্শে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে ও পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন নামে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করে হুজি-বি।
জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণে, তবে ঝুঁকি রয়ে গেছে
হুজি–বির ছোট একটা অংশ নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকাতিতেও যুক্ত হয়েছে বলে সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে। যদিও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, হুজির পর্ব আপাতত শেষ। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখন দুটি গোষ্ঠী হুমকি হয়ে আছে, তারা হলো আইএস ও আল–কায়েদা। এই দুটিরই অনুসারী এখানে আছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো শাফকাত মুনীর বলেন, হুজি–বির কার্যক্রম এখন অনেকটাই স্তিমিত। তবে হুজি–বির সদস্য বর্তমানে কী অবস্থায় আছে; তারা অন্য কোনো সংগঠনে যোগদান বা নতুন কোনো সংগঠনের সঙ্গে যোগসাজশ গড়ে তুলেছে কি না বা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে কি না; সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলিষ্ঠ পদক্ষেপের মাধ্যমে এ দেশে জঙ্গিবাদের হুমকি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। জঙ্গি বা সহিংস উগ্রবাদের ঝুঁকিকে কোনো অংশেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।