এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু উপলক্ষে আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টাকা এক মাস কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। পরীক্ষা শুরুর সাত দিন আগে থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ পরীক্ষা সামনে রেখে রোববার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত ‘জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটি’র বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
প্রায় সব ধরনের পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের মধ্যে গত বছরও এসএসসির তিন দিন আগ থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার।
এবছর পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, কেন্দ্রগুলোতে এবার প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সীলগালা করার পরিবর্তে নিরাপত্তামূলক ফয়েল পেপারে মুড়ে পাঠানো হবে। এতে এই প্যাকেট আগে খোলা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত করা যাবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি করা থাকবে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটলেও ২০১৮ সালে কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। সেই আলোকে এবারও ২০১৮ সালের মতোই পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা থাকবে। অতীতে দেখা গেছে, প্রশ্ন যতো না ফাঁস হয়েছে, তার চেয়ে প্রচার ও গুজব ছড়ানো হয়েছে বেশি। এবার গুজব রটনাকারীদের সনাক্ত করা গেলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে। বিটিআরসিকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে আমরা জঙ্গীবাদ দমন করতে পেরেছি। মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশ্নফাঁসও ঠেকাতে সমর্থ হবো। এই কাজে কেউ যুক্ত হবেন না।
ডা. দীপু মনি আরও বলেন, এসবের পাশাপাশি বেশকিছু সচেতনামূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ছাড়া অন্য কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এবারও কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধুমাত্র কেন্দ্রসচিব একটি সাধারণ মোবাইল ফোন (স্মার্ট ফোন নয়) ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা কেউ প্রশ্ন খুঁজতে বের হবে না।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারাদেশের চার হাজার ৯৬৪টি কেন্দ্রে ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫১ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পর্যায়ের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে শুধুমাত্র এসএসসি পরীক্ষায় ৩ হাজার ৪৯৪টি কেন্দ্রে ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০৭ জন, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে দাখিল পরীক্ষায় ৩ লাখ ১০ হাজার ১৭২ জন এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় ৭৫৯টি কেন্দ্রে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি হবে তত্ত্বীয় পরীক্ষা। আর ২৬ ফেব্রুয়ারি সংগীত বিষয়ের এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চের মধ্যে অন্য বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এবারও বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) অংশের উত্তর আগে দিতে হবে। পরে নেওয়া হবে সৃজনশীল/রচনামূলক অংশের পরীক্ষা। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে নির্ধারিত আসনে বসতে হবে।
রোববার প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক ছাড়াও জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।