৫ গোলের রোমাঞ্চ, সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির উত্তাপ ও লাল কার্ডের ছড়াছড়ি। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে ঘটনাবহুল ম্যাচে ভারতের আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটিকে হারিয়েছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস।
চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচটি ৩-২ গোলে জিতেছে বসুন্ধরা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে গোকুলাম কেরালা এফসির কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল অস্কার ব্রুসনের দল।
টানা দ্বিতীয় হারের স্বাদ পেল চেন্নাই। নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালয়েশিয়ার দল টেরেঙ্গানু এফসির কাছে ৫-৩ গোলে হেরেছিল তারা।
ষষ্ঠ মিনিটেই এগিয়ে যায় বসুন্ধরা। বাঁ দিক থেকে নুরুল নাঈম ফয়সালের ক্রসে বখতিয়ার দুইশবেখভ হেড করার পর বল যায় জালাল কুদোর পায়ে। বাঁ পায়ের ভলিতে জাল খুঁজে নেন লেবাননের এই ফরোয়ার্ড। একাদশ মিনিটে ইমন বাবুর কর্নারে জালালের হেড গোলরক্ষক গ্লাভসে নিলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়নি।
২৪তম মিনিটে তৈরি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ইমন বাবু চার্লসকে ফাউল করলে ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু এই অপরাধে ইমনকে হলুদ কার্ড না দেওয়ায় রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়ান চেন্নাইয়ের জাপানি মিডফিল্ডার কাতসুমি ইউসা।
মেজাজ হারিয়ে কাতসুমি মাঠের বাইরে বেরিয়ে এসে চতুর্থ অফিসিয়ালের টেবিল লাথি দিয়ে ভাঙার পর রেফারিকে মারতে তেড়ে যান। এই ঘটনায় চেন্নাইয়ের অফিসিয়ালরা এক পর্যায়ে খেলোয়াড়দের মাঠ ছাড়তেও বলেন। অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের জন্য জাপানের ফরোয়ার্ডকে সরাসরি লালকার্ড দেখান রেফারি। ১২ মিনিট পর ফের শুরু হয় খেলা।
খেলা শুরুর পরই অজিত কুমারের কাটব্যাকে রবার্তো এসলাভার প্রচেষ্টা রুখে দেন বসুন্ধরা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। ৪৩তম মিনিটে আর জাল অক্ষত রাখতে পারেননি তিনি। মাঝমাঠ থেকে চার্লসের থ্রু বল বিশ্বনাথকে ছিটকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শট নেন মাশুরশেরিফ। জিকো ফেরালেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি, ফিরতি শটে লক্ষ্যভেদ করেন হাভিয়ের পেদ্রো।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে উত্তেজনা ছড়ায় ডাগআউটে। একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে বসুন্ধরা কোচ অস্কার ব্রুসন তেড়ে যান চেন্নাই কোচের দিকে। চেন্নাই কোচও পাল্টা তেড়ে আসেন। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কিও হয় দুজনের। রেফারি দুই কোচকেই লালকার্ড দিয়ে বের করে দেন।
৫০তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ হেলায় নষ্ট করেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। বাঁ দিক থেকে দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরার বাড়ানো ক্রস ছোট ডি-বক্সের মধ্যে পেয়ে তালগোল পাকিয়ে শটই নিতে পারেননি ইব্রাহিম। এক ডিফেন্ডার কর্নারের বিনিময়ে বিপদমুক্ত করেন।৫৯তম মিনিটে মাহবুবুর রহমান সুফিলকে তুলে নিয়ে এলিটা কিংসকে নামায় বসুন্ধরা। পরের মিনিটে গোলও পেয়ে যায় স্বাধীনতা কাপের চ্যাম্পিয়নরা। ডান দিক থেকে কলিনদ্রেসের ক্রসে দূরের পোস্টে থাকা বখতিয়ার হেডে জাল খুঁজে নেন।
এগিয়ে যাওয়ার পর ১০ জনের চেন্নাইয়ের রক্ষণে চাপ বাড়াতে থাকে বসুন্ধরা। কিংসলে ক্রসবারের ওপর দিয়ে মেরে এবং কুদো দুর্বল শটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ নষ্ট করেন।
৬৫তম মিনিটে ইমনের বদলি নামেন বিপলু আহমেদ। পরের মিনিটে কিংসলের হেড পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বাইরে মারেন কুদো।
৬৯তম মিনিটে সোলেরাকে ফাউল করে সুয়ারেস দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখলে নয় জনের দলে পরিণত হয় চেন্নাই। এরপরই মাশুর শেরিফের গোলে আবারও সমতায় ফেরে তারা।
৮৫তম মিনিটে কিংসলের হেড শেষ মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে ফেরান চেন্নাই গোলরক্ষক। একটু পর সোলেরার ক্রসে গোলমুখ থেকে ইব্রাহিম টোকা দিতে ব্যর্থ হন।
৮৯তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে রবিউল হাসানের জোরালো শট গোলরক্ষক ফেরানোর পর কুদো ফিরতি শটে স্কোরলাইন ৩-২ করেন।
এ জয়ে দুই ম্যাচে ৩ পয়েন্ট পাওয়া বসুন্ধরার সেমি-ফাইনালে খেলার আশা টিকে থাকল।
চেন্নাই সিটি এফসির বিদায়
গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে গোকুলাম কেরালা এফসি ও টেরেঙ্গানু এফসি গোলশূন্য ড্র করেছে। এই ম্যাচের ফলে বসুন্ধরা কিংসের কাছে হেরে যাওয়া চেন্নাই সিটি এফসির বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। ৪ করে পয়েন্ট গোকুলাম ও টেরেঙ্গানুর। ৩ পয়েন্ট বসুন্ধরার।