কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সঙ্কটের মধ্যেও এপ্রিল মাসের ২২ দিনে ৬৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশি টাকায় প্রবাসী আয়ের এই পরিমাণ ৫ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার মত।
এই অংক আগের মাসগুলোর তুলনায় বেশ কম; গত মার্চ মাসের ২২ দিনে ১১০ কোটি ডলারের মত রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। পুরো মার্চ পাঠিয়েছিলেন ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব এখন অবরুদ্ধ। প্রায় সব দেশেই চলছে লকডাউন। কোথাও কোনো কাজ নেই।
“এর মধ্যেও প্রবাসীরা দেশে তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। আমরা ভেবেছিলাম এই সঙ্কটের সময়ে দেশে রেমিটেন্সের পরিমাণ একেবারে তলানিতে নেমে আসবে। তবে তা হয়নি।
ছাইদুর রহমানের ভাষায়, এই পরিস্থিতির মধ্যেও প্রবাসীরা যে টাকা পাঠাচ্ছেন, তাকে ‘খুব খারাপ অংক’ বলা যাবে না।
“এই কঠিন সময়েও রেমিটেন্স পাঠিয়ে প্রবাসী ভাইয়েরা আবার প্রমাণ করলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তারা কতটা অবদান রাখেন।”
মাস শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ছাইদুর।
তবে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সামনের দিনগুলো নিয়ে অতটা আশাবাদী হতে পারছেন না।
তিনি বলেন, “এটা ভালো দিক যে এখনও কিছু রেমিটেন্স আসছে। তবে কত দিন এটা আসবে সে বিষয়ে সংশয় আছে।
“এখন উপার্জন বা কাজের টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন না তারা। জমানো টাকা যেটা ছিল সেখান থেকেই পরিবারের-পরিজনের বিপদের দিনে কিছু পাঠাচ্ছেন। সেটা ফুরিয়ে গেলে আর পাঠাতে পারবেন না।”
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের রেমিটেন্সের বড় অংশ আসে মধ্যপাচ্য থেকে। জ্বালানি তেলের দাম একেবারে কমে আসায় তেলনির্ভর অর্থনীতির ওই দেশগুলোতেও দেখা দিয়েছে বড় সঙ্কট।
“সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে রেমিটেন্সের জন্য খুব ভালো খবর আসবে বলে মনে হয় না।”
বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মত। দেশে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এই রেমিটেন্সই কেবল আশার আলো জাগিয়ে রেখেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত মার্চ মাসে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। আর আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম।
মার্চ মাসের রেমিটেন্স গত এক বছর তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল।
করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়ার পর এই মার্চ মাসেই অনেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন।
এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফিরে আসেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩০ জন।
মার্চে অধঃগতি দেখা দিলেও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে রেমিটেন্সে এখনও ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে এক হাজার ১৮৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে এক হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।
গত অর্থবছরের পুরো সময়ে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশে রেমিটেন্স কমবে ২২ শতাংশ
এদিকে বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এ বছর সারাবিশ্বে রেমিটেন্স কমবে ২০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে কমবে ২২ শতাংশ।
বুধবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত অভিবাসন ও উন্নয়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেশ ও অঞ্চলভিত্তিক ২০২০ সালের রেমিটেন্সের প্রক্ষেপণ রয়েছে।
কভিড-১৯-এর আয়নায় অভিবাসন’ শিরোনামের রিপোর্টে অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ উভয় অভিবাসনের সম্ভাব্য অবস্থার পর্যালোচনা রয়েছে।
বাংলাদেশে গত বছর (২০১৯ সাল) প্রবাসীরা ১৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। আগের বছরের চেয়ে যা ১৮ শতাংশ বেশি ছিল।
বিশ্বব্যাংক বলছে, এ বছর বাংলাদেশে রেমিটেন্স কমে ১৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে ২০২০ সালে রেমিটেন্স কমবে বলে বলে জানিয়েছে এই দাতা সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, কভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে, তার প্রভাবে মানুষের নিজ দেশে অর্থ প্রেরণের ক্ষমতা কমে যাবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
“এ বিবেচনায় বিশ্বব্যাংক রেমিটেন্স পাঠানোর ব্যয় কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেবে।”