৭০ প্রাণ গেছে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে

রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭০ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

Chakbazar-5c6e68ba3de97

বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে এতথ্য জানানো হয়।

অবশ্য এর আগে নিহতের সংখ্যা ৭৮ বলে জানিয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতাল।

বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো। তবে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট দুর্ঘটনস্থলে থাকবে।

আগুনে নিহতদের অধিকাংশকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ; খোঁজ নেই অনেকের। নিহতদের মধ্যে ৬১ জন পুরুষ, পাঁচজন নারী ও চারটি শিশু রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে জানান, অগ্নিকাণ্ডে ৭০টি মরদেরহ উদ্ধার হয়েছে। আগুনের কারণ এখনও জানা যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে; যা আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদনে দেবে বলে জানান তিনি।

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি জানান, আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সকাল ৭টার দিকে মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ এক ব্রিফিংয়ে জানান, বিভিন্ন ক্যামিক্যাল, বডি-স্প্রে, প্লাস্টিক দ্রব্য প্রভৃতির কারণে আগুন ছড়িয়েছে। আর সরু রাস্তার কারণে আগুন নেভানোর কাজে সমস্যা হয়েছে।

বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টা মসজিদের পাশে হাজী ওয়াহেদ মিয়ার বাড়িতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে আশপাশের আরও চারটি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

রাতেই দগ্ধ-আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া শুরু হয়। দগ্ধ, আহত ও তাদের স্বজনের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

ঘটনাস্থল থেকে রাত ২টার দিকে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সমকালকে বলেন, চারটি ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বডি স্প্রের গুদাম থাকায় একটি ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের জিয়াউর রহমান বলেন, চকবাজারে চুড়িহাট্টা মসজিদ গলির একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

তিনি জানান, কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। পাঁচতলা আবাসিক ভবনের নিচে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।


স্থানীয়রা জানান, আগুন ছড়িয়ে পড়া ৫টি ভবনের প্রতিটির নিচে বিভিন্ন ধরনের দোকান, পারফিউমারি ও প্লাস্টিক সামগ্রীর গুদাম রয়েছে। ওপরের তলাতে লোকজন বসবাস করেন। পানি সংকটের কারণে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের।

রাতেই শত শত স্বেচ্ছাসেবী আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেন। অনেক ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মচারীদের মালপত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায়। কেউ কেউ দোকানের সামনে পাহারা দিচ্ছিলেন। বিদ্যুৎ না থাকায় পুরো এলাকায় ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এলাকাবাসী কারও কারও ভাষ্য, ওয়াহেদ মিয়ার বাড়িতে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। তাই আগুন লাগার পরপর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

তবে অন্য একজন জানান, ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে একটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়ে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এ সময় প্রাইভেটকারের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভবনে আগুন লাগে। আগুনের পরপরই অনেকেই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন।

এর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১২৪ জনের মৃত্যু হয়।

Pin It