জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই আগামী বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে, ৭ মার্চ বেলা ১১টায় তাদের দুজনের শপথ অনুষ্ঠান হবে।
স্পিকারের একান্ত সচিব মো. কামাল বিল্লাহ বলেন, “স্পিকারের কার্যালয়ে নির্বাচিত দুইজন সংসদ সদস্যকে শপথ পড়ানো হবে।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কামাল হোসেনের গণফোরামে নাম লিখিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন সুলতান মনসুর।
আর মোকাব্বির খান গণফোরামের দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে সিলেট-২ আসন থেকে বিজয়ী হন। ওই আসনে ধানের শীর্ষের প্রার্থী না থাকায় বিএনপির সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি।
কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে গত ৩০ ডিসেম্বরের এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ছয়টি আসনে জয় পায় বিএনপি।
নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছে তারা। দলটির নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন শুরুতে তার দলের দুই নেতার শপথের বিষয়টিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখলেও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সুর বদলায়।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু গত রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “তারা (শপথ নিতে) গেলে অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। দলীয় সিদ্ধান্ত ও আইনগত সিদ্ধান্ত যা নেওয়া দরকার, সেগুলো আমরা নেব।”
মন্টুর ভাষায়, “যারা যাচ্ছে তাদের মাথা খারাপ না হলে …. যেখানে মূল দল বলছে, না যাওয়ার কথা। সেখানে দলের পরিপন্থি হয়ে এই কাজ করবে, এটা গ্রহণযোগ্য না।”
অন্যদিকে শপথ নেওয়ার বিষয়ে সুলতান মনসুরের ভাষ্য, যারা ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করেছে, তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতেই তিনি সংসদে যাচ্ছেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি, আওয়ামী লীগের এক সময়ের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে সংস্কারপস্থি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে দলে অপাঙক্তেয় হওয়ার পর কামাল হোসেনের সঙ্গে ভেড়েন।
ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর শপথ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি দাবি করেন, তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে অন্য কোনো দলে যোগ দেননি।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচনের পর পদে থাকার অযোগ্য হবেন কি না, কিংবা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে কি না- এ সম্পর্কিত কোনো বিতর্ক দেখা দিলে বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হবে এবং এ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বিবেচিত হবে।
৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তবে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান দল থেকে পদত্যাগ করেননি। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদে যোগ দিলে এবং ওই অবস্থায় দল তাদের বহিষ্কার করলে পরিণতি কী হবে, সে বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই।
নবম সংসদের শেষের দিকে জাতীয় পার্টি থেকে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এইচ এম গোলাম রেজাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসদে তার সদস্যপদ বহাল ছিল।
অষ্টম সংসদে (২০০১-২০০৬) ক্ষমতাসীন বিএনপি থেকে রাজশাহী-৪ আসনের আবু হেনাকে বহিষ্কার করা হয়। সে ক্ষেত্রেও তার সদস্যপদ বহাল ছিল।
দুটি ক্ষেত্রেই সংসদের ব্যাখ্যা ছিল, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা নিজেরা পদত্যাগ করেননি। সুতরাং তাদের সদস্যপদ বহাল থাকবে।
দশম সংসদে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ বহিষ্কার করে। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।