প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এক হাজার ১০৪ কোটি ১৯ লাখ (১১.০৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা।
এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।
গত শেষ মাস ডিসেম্বরে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিটেন্স পেয়েছে বাংলাদেশ; ২০১৯ সালের মে মাসে।
আর রেমিটেন্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারায় রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কার পরও বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।
দুই শতাংশ হারে প্রণোদনার কারণেই রেমিটেন্সে সুবাতাস বইছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
তবে চীনের উহান থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস চীনের বাইরের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়লে রেমিটেন্স নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
রোববার তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস এখন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে।এটা যদি চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে আমাদের রেমিটেন্সে কোনো সমস্যা হবে না। আর যদি মধ্যপাচ্যসহ অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সমস্যা হবে।শেষ পর্যন্ত এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।”
“যদি এই ভাইরাস চায়নার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে তাহলে গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকে তছনছ করে দেবে,” বলেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর।
বাংলাশে ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারির চেয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে প্রায় ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স বেশি এসেছে।
গত অর্থবছরের এই সাত মাসে ৯০৯ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।চলতি অর্থবছরের সাত মাসে এসেছে ১ হাজার ১০৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার।
শতাংশ হিসাবে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ‘সুখবর’ নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছর।
প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।অগাস্টে আসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
অক্টোবর মাসে আসে ১৬৪ কোটি ডলার। নভেম্বরে এসেছিল ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।
রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।প্রবাসীরা এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি ঔ ১০০ টাকার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা তুলতে পারছেন।
বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত।
রিজার্ভ ৩২.৩ বিলিয়ন ডলার
রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ খানিকটা কমে এসেছিল।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ৩১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
এর পর তা বেড়ে ৩২ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। ৭ জানুয়ারি আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার দেনা শোধের পর আবার কমে যায়।
গত এক মাসে তা বেড়ে ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে; রোববার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আকুর বিল পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপরেই অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।