অ্যাডিলেডে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। সেঞ্চুরি করেছেন বিরাট কোহলি ।
বিরাট কোহলি ও মহেন্দ্র সিং ধোনি উইকেটে। মাইক হাসি মাইক্রোফোনের সামনে। রান তাড়ায় এমন ‘ত্রিমুখী’ মজা লুটে নেওয়ার সুযোগ মেলে খুব কমই। অ্যাডিলেডে আজ এমন উপলক্ষই পেয়েছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। রান তাড়ায় খেলাটির তিন ‘সেরা’ এভাবেই নিজ নিজ ভূমিকা পালন করেছেন। কিছুটা ভুল হলো। কোহলি আর হাসি আছেন আগের মতোই। রান তাড়ায় কোহলি তো বরাবরই অনন্য। ভূমিকা পাল্টানোর পর হাসি মাইক্রোফোনের সামনেও সমান পারদর্শী। কিন্তু ধোনি, এত দিন কোথায় ছিল সেই জাদুকাঠি!
রান তাড়ায় এক সময় ভারতীয় ক্রিকেটের শেষ কথা ছিল ধোনি। কোহলি ব্যাপারটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন তা সত্য, আর তাই আজ দুজনকে একসঙ্গে উইকেটে থাকায় দুর্দান্ত কিছু দেখার আশা ছিল সমর্থকদের। কোহলি সেই দাবি মেটালেও ধোনি শুরুতে পারেননি। ৪ বল হাতে রেখে ভারতের ৬ উইকেটের জয়ে আসল ধোনিকে দেখা গেছে শেষ দিকে যিনি বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতেন। ৫৪ বলে ৫৫ রানের ইনিংসে তিনি ভারতকে জেতালেন মাত্র দুই ছক্কায়!
জয়ের জন্য ২৯৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল ভারত। অম্বতি রাইড়ু (৩৪) ফিরলে উইকেটে আসেন ধোনি। জয়ের জন্য ভারতের তখন দরকার ১১৪ বলে ১৩৮ রান। উইকেটে অন্য প্রান্তে কোহলি তখন ‘সেট’—৬৮ বলে ৫৩। এখান থেকে শেষ ৬০ বলে জয়ের সমীকরণ ৮৩ রানে নামিয়ে আনেন দুজন। কোহলি তখন ১০০ বলে ৯৫, ধোনি ২৪ বলে ১২! অর্থাৎ, ধোনির মন্থর ব্যাটিং পুষিয়ে নেওয়ার চাপটা ছিল কোহলির ওপর। ভারতীয় অধিনায়ক সেই চাপ উবে তুলেছেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। ১০৪ রানে তিনি যখন ফিরলেন জয়ের জন্য ভারত তখনো ৩৮ বলে ৫৭ রানের দূরত্বে। এখান থেকে ভারতকে জেতানোর দায়িত্ব পড়ে ধোনি ও দীনেশ কার্তিকের কাঁধে। শুধু ম্যাচ জেতানো নয় সিরিজ বাঁচানোরও গুরুদায়িত্ব।
তার আগে ভারতের ইনিংসকে একাই টেনেছেন কোহলি। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা (৪৩) ও শিখর ধাওয়ান (৩২) ভালো শুরু পেলেও থাকতে পারেননি। কোহলি তিনে নেমে এই রান তাড়ার শেষে পর্বে শুধু থাকতে পারেননি। তার আগে ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ঠিকই তুলে নিয়েছেন ঝকঝকে সেঞ্চুরি। তাঁর ক্যারিয়ারের এই ৩৯তম সেঞ্চুরিটি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফরকারি কোনো দলের ব্যাটসম্যানেরও ১১তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিও—যা আবার সর্বোচ্চ।
দলের জয়ের শেষ পর্বে থাকতে না পেরে কোহলির নিশ্চয়ই আক্ষেপ হয়েছে? অধিনায়ক ফেরার পর কার্তিকের ‘সিনিয়র’ হিসেবে দায়িত্বটা একার কাঁধে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন ধোনি। আর তাই ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারিটি (ছক্কা) মেরেছেন ৩৮তম বলে। নাথান লায়নের ওই ওভারে (৪৫তম) ধোনি ১১ রান নিয়ে সমীকরণটি নামিয়ে আনেন ৩০ বলে ৪৪ রানে। হাতে ৬ উইকেট, ব্যাটিংয়ে ধোনি আর কার্তিক—হাস্যকর কিছু করে না বসলে ভারতের জেতাই স্বাভাবিক।
ঝাই রিচার্ডসনের করা পরের ওভারে ১০ রান তুলেছেন দুজন। একটি চারও মেরেছেন কার্তিক। অর্থাৎ শেষ ২৪ বলে দরকার ছিল ৩৪। স্টয়নিসের করা ৪৭তম ওভারে ভারতের ৯ রানে একটি চারের ভূমিকা ছিল কার্তিকের। ভারত শেষ তিন ওভারে ২৫ রানের দূরত্বে থাকতেও ধোনির ৪১* রানের ইনিংসে বাউন্ডারি বলতে ছিল এক ছক্কা! সিঙ্গেলস-ডাবলস পুঁজি করেই এই পথটুকু এসেছেন ধোনি। এই ৩৭ বছর বয়সে নিয়েছেন তিন রানও। সেটি ৪৭তম ওভারে, ধোনি-কার্তিকের দুর্দান্ত রানিং বিটুইন দা উইকেটের কল্যাণে বাউন্ডারি ছাড়াই ওভারে ৯ রান তোলে ভারত। শেষ দুই ওভারে ১৬ রানের দূরত্বে ছিল ভারত।
বোঝাই যাচ্ছিল, শেষ ওভারে লক্ষ্যটা যত সম্ভব ছোট রাখার চেষ্টা করবেন ধোনি-কার্তিক। তাই ঝুঁকি যা নেওয়ার ৪৯তম ওভারেই নিতে হবে। কিন্তু ওই ওভারেও কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ৯ রান নিয়েছেন ধোনি-কার্তিক। এর মধ্যে কার্তিকের একটি স্কুপ শটে ধোনি দৌড়েই নিয়েছেন ৩ রান। জয়ের শেষ ওভারে ৭ রান দরকার ছিল ভারতের। বেহরেনডফের করা প্রথম বলেই ধোনি বুঝিয়ে দেন ঠিক কোন সময় ছক্কা মারা উচিত। লং অফের ওপর দিয়ে ভাসানো ছক্কায় ফিফটিও তুলে নেন এই ‘মাস্টার ফিনিশার’। পরের বলে ১ রান নিয়ে সিরিজটা ১-১ করেছেন সেই ধোনিই।
ভারতের এই দুর্দান্ত ৬ উইকেটের জয় ধোনির ৫৪ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের পাশাপাশি কার্তিকের ১৪ বলে ২৫ রানের ইনিংসটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ২টি চার মারলেও সীমানায় অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডারদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ডাবলস চুরি করেছেন কার্তিক। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের তাতে মোটেও খুশি হওয়ার কথা নয়।