আয়নায় নিজেদের দিকে খুব সম্ভবত একবার ফিরে তাকিয়েছিলেন সিলেট সিক্সার্সের ক্রিকেটাররা। চমৎকার একটি দল নিয়েও এবারের বিপিএলে পড়ে পড়ে মার খাচ্ছিল দলটি। আজকের আগ পর্যন্ত চারটি ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছিল মাত্র একটিতে। কিন্তু আজ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিজেদের দর্শকদের সামনে কী দুর্দান্ত ক্রিকেটটাই না খেলল তারা। দলীয় সামর্থ্যের পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার রংপুর রাইডার্সকে ২৭ রানে হারিয়ে নিজেদের প্রমাণ রাখল তারা। আর রংপুরের চতুর্থ হার।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে লিটন দাস আর ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে স্কোরবোর্ড ১৮৭ রান তুলেছিল সিলেট। এমন একটা স্কোরকে পুঁজি করে লড়াইটা যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমনই করল বোলাররা—নির্দিষ্ট করে বলতেই হচ্ছে পাকিস্তানি সোহেল তানভীর, তাসকিন আহমেদ আর মেহেদী হাসান রানার নাম। এই মেহেদী রানাই শুরুতে আরেক ‘মেহেদী’ মেহেদী মারুফ আর ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলসকে ফিরিয়ে সিলেটের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। তবে রংপুরকে প্রথম ধাক্কাটা কিন্তু দিয়েছিলেন সোহেল তানভীর—ক্যারিবীয় তারকা ক্রিস গেইলকে আউট করে।
১৮৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে ১১ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর লড়াইয়ের বাসনাটাই দমে যায়। বিশেষ করে ব্যাটিং-স্তম্ভ গেইল আর হেলসদের হারালে যা হয় আর কি! কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকান রাইলি রুশো আর মোহাম্মদ মিথুন লড়াইটা চালিয়ে গেছেন। রুশো এক সময় ভয়ংকরই হয়ে উঠেছিলেন, দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল সিলেট অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের মুখে। কিন্তু এবার সিলেটের ত্রাতা তাসকিন। চোট ও ফর্ম মিলিয়ে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার বাজে সময়টা যে তাসকিন পেরিয়ে আসছেন ধীরে ধীরে, সেটি বোঝা গেল তাঁর বোলিংয়েই। রুশোকে ৫৮ রানে বোল্ড করে সিলেটকে তিনি দিলেন নতুন করে উজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ। সেই সঙ্গে রংপুরের শরীরে বড় একটা আঘাত। মিথুন এরপরও লড়ে যাচ্ছিলেন বুক চিতিয়ে। কিন্তু ২৯ বলে ৩৫ রান করে সেই তাসকিনের বলেই সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে রংপুরের সম্ভাবনাকেও প্রায় শেষ করে দেন।
গোটা ম্যাচেই সিলেটকে মনে হলো বেশ উজ্জীবিত। অবশ্যই ঘরের মাটিতে গতকাল কুমিল্লার বিপক্ষে ম্যাচটি এতে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। ঘরের মাঠে আশাবাদী দর্শকের সামনে ৬৮ রানে গুটিয়ে যাওয়াটা তো কাজের কথা নয়। তারপরেও দর্শকেরা আজ মাঠে এসেছেন। সেই দর্শকের প্রত্যাশা মেটানোর একটা দায়ভার ঠিকই অনুভব করেছেন সিলেট সিক্সার্সের ক্রিকেটাররা। তার ওপর অধিনায়ক ওয়ার্নার ব্যাটিংয়ের পর ফিল্ডিংয়ে নিজেকে এমনভাবে উজাড় করে দিলেন যে দলের খেলোয়াড়েরা আর অন্য কিছুর সুযোগই পায়নি। তবে ভুল-ভ্রান্তি আজও সিলেট করেছে। দুটি সহজ ক্যাচ ফেলেছেন মেহেদী রানা ও আফিফ হোসেন। অ্যান্টিক্লাইমেক্সই বটে। কিন্তু সর্বোপরি দলের পারফরম্যান্সটা আজ এতটাই ভালো হয়েছে যে সেই ভয়ংকর ভুল দুটি খুব বড় হয়ে দেখা দেয়নি।
রংপুর নিজেদের ইনিংসটা শেষ অবধি টানতে পেরেছে ১৬০ রান পর্যন্ত। অধিনায়ক মাশরাফি বোলিংয়ে আজ ব্যর্থ। কিন্তু ব্যাট হাতে চেষ্টা করেছেন। রংপুরের সমর্থকেরা কিন্তু প্রত্যাশা করে বসেছিল ‘ম্যাশ’ ব্যাটি দিয়ে কিছু একটা করবেন। কিন্তু ঐ যে সিলেটের বোলাররা ছিলেন এতটাই দুর্দান্ত যে মাশরাফি খুব বেশি কিছু করতে পারেননি।
বিপিএল জমছে না জমছে না বলে একটা রব উঠেছিল। অভিযোগটা অবশ্য ছিল সত্যিই। বিপিএল আসলেই জমছিল না। কিন্তু আজ সিলেটের মাঠে যে ক্রিকেটটা দুই দলই উপহার দিল, তাতে বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো উজ্জীবিত হতেই পারে। ব্যাটে-বলে-ঘটনার ঘনঘটায় দারুণ একটা ম্যাচ দেখলেন সিলেটবাসী।