নির্বাচন একসঙ্গে করলেও বিএনপি জোটের ভরাডুবির প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ তাদের জোটসঙ্গীদের সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসাতে চাইলেও তাতে নারাজ এই দলগুলোর নেতারা।
এক প্রতীকে ভোট করার পর এখন তাদের বিরোধী দলে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তারা এখন জোটের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোট গড়ে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এই মহাজোটে ১৪ দলীয় জোটের বাইরে জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় পার্টি (জেপি), বিকল্প ধারা ছিল।
ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, মহাজোট ৩০০ আসনের সংসদে ২৮৮ আসনেই জিতেছে। আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছে ২৫৭টি আসন। বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জিতেছে মাত্র আটটি আসনে।
এই পরিস্থিতিতে ২২ আসনে বিজয়ী এইচ এম এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিকে সংসদে গতবারের মতোই বিরোধী দলের আসনে বসানো হচ্ছে। এরশাদ হচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গতবারের সরকারে জাতীয় পার্টিকে রাখলেও এবার রাখা হয়নি। জোট শরিক কোনো দলের নেতাকেই মন্ত্রিসভায় রাখেননি তিনি।
জাতীয় পার্টির অবস্থান ঠিক হলেও ১৪ দলীয় জোটভুক্ত বিভিন্ন দল থেকে বিজয়ী সাতজন এবং বিকল্প ধারা থেকে বিজয়ী দুজনের অবস্থান নিয়ে কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি।
ভোটের পর গত ৩ জানুয়ারি বৈঠক হয়েছিল ১৪ দলের, কিন্তু সেখানে অবস্থান নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি
তবে আগামী ৩০ জানুয়ারি বসতে যাওয়া সংসদে জোট শরিক অন্য দলগুলোর নেতাদেরও বিরোধী দলের আসনে বসাতে আওয়ামী লীগ চাইছে বলে ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন নেতার কথায় ইঙ্গিত মিলছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, “উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী দলগুলো গঠনমূলক সমালোচনা করে সংসদে যে ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনভাবে আমরা জোট শরিক দলগুলোকেও শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকায় দেখতে চাই।
“তাই সংসদে বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা পালন করতে শিগগিরই শরিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হবে।”
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেপি, তরীকত ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তাদের আপত্তির বিষয়টি জানা যায়।
তিনটি আসনে জয়ী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “এই বিষয়টায় আমরা এখনও সমাধানে আসতে পারিনি। তবে আমরা যেহেতু ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আছি, সেহেতু ১৪ দলেই থাকব। গণতন্ত্র রক্ষার আমাদের ভূমিকা থাকবে।”
বিরোধী দলের আসনে বসবেন কি না- জানতে চাইলে গত সরকারের মন্ত্রী হিসেবে সরকারি দলের আসনে থাকা মেনন বলেন, “না, আমরা ১৪ দলেই আছি।”
মেননের মতো ১৪ দল থেকে গত সরকারে মন্ত্রী ছিলেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তাদের দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দশম সংসদে সরকারি দলের আসনেই ছিলেন।
তার আগে নবম সংসদেও সরকারি দলের আসনে ছিল এই দলগুলোর নেতারা। সেবার শেখ হাসিনা জোট শরিক দলগুলো থেকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী করেছিলেন সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়াকে।
মঞ্জুর দল জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম সরাসরিই বলেছেন, তারা বিরোধী দলে যাবেন না এবং অন্যদেরও বিরোধী দলে যাওয়ার সুযোগ নেই।
শেখ শহীদ বলেন, “মহাজোট থেকে যারা নৌকা মার্কায় নির্বাচন করেছে, তাদের বিরোধী দলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর্টিকেল ৭০ অনুযায়ী বিরোধী দলে গেলে তাদের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে।
“আমাদের পার্টি নির্বাচনে বাইসাইকেল প্রতীকে একটি আসন পেয়েছে। ইচ্ছা করলে আমরা বিরোধী দলে যেতে পারি, কিন্তু যেহেতু আমরা ১৪ দলীয় জোটে আছি, সেই হিসেবে আমরা বিরোধী দলে যাচ্ছি না।”
একটি আসনে জয়ী তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যন নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীও বিরোধী দলের আসনে বসতে আপত্তি নিয়ে এখন জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা বিরোধী দলে যাব কেন? আমরা সরকারের সঙ্গে আছি। আমাদের দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা বিরোধী দলে যাব না।”
এবারের নির্বাচনে আসন বণ্টনে ভাগে ‘কম’ পেলেও তাতে অসন্তুষ্ট নন জানিয়ে মাইজভাণ্ডারী আবার বলেন, “সরকারে সঙ্গে আমরা কাজ করছি, করে যাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের কাজ করে যেতে বলেছেন। তিনি যা ভালো মনে করবেন, আমরা সেভাবেই থাকতে চাই।”
দুটি আসনে জয়ী জাসদের একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এ বিষয়ে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।
তিনি বলেন, “আমরা ১৪ দলীয় জোটে আছি, জোটের সঙ্গে থাকব।”
বিরোধী দলে যাবেন কি না- জানতে চাইলে গত সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, “সেই সিদ্ধান্তটা আমরা জোটগত ভাবে নিতে চাই। আরেকটা বৈঠক না হলে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারব না। ওখানে যা সিদ্ধান্ত হয়, তা আমরা পরে জানাব।”
১৪ দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের কাছে জোট শরিকদের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এক কথায় বলেন, “এখন কিছু বলা যাবে না।”