ব্যাট ছিল বেজার হয়ে। তবু মুখে ছিল হাসি। রান না পাওয়ার প্রশ্নে বারবারই হাসিমুখে তামিম ইকবাল বলছিলেন, “দুর্ভাবনা নেই, রান আসবে।” অবশেষে হাসল তামিমের ব্যাটও। এনামুল হকের সঙ্গে গড়লেন শতরানের উদ্বোধনী জুটি। জুনাইদ খানের বোলিংয়ে পরে লড়াই করল খুলনা। শেষ দিকে দারুণ জমল ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত অটুট থাকল তামিমেরই হাসিই। বড় রান তাড়ায় জিতল কুমিল্লা।
৪২ বলে ৭৩ রান করেছেন তামিম। এনামুলের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটি ১১৫ রানের। বিপিএলে খুলনা টাইটানসকে ৩ উইকেটে হারাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
শুক্রবার সিলেটে জুনায়েদ সিদ্দিকের দারুণ ইনিংসে খুলনা তুলেছিল ২০ ওভারে ১৮১ রান। দুর্দান্ত শুরুর পর হুট করে পথ হারিয়ে কুমিল্লা শেষ দিকে পেয়েছে জয়ের পথ। থিসারা পেরেরার চার ও ছক্কায় জয় ধরা দিয়েছে ২ বল বাকি থাকতে।
তামিম ইঙ্গিতটা দিয়েছিলেন রান তাড়ার প্রথম ওভারেই। হ্যাটট্রিক শূন্যর শঙ্কায় শুরু করেছিলেন। প্রথম ওভারেই লাসিথ মালিঙ্গাকে দৃষ্টিনন্দন ওক ড্রাইভে চার মেরে জানিয়ে দেন রানে ফেরার বার্তা। সময়ের সঙ্গে স্পষ্ট হয়েছে তার ফিরে আসার ছবি।
তৃতীয় ওভারে জুনাইদ খানকে মারেন এক ছক্কা, দুই চার। ষষ্ঠ ওভারে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে এক ওভারেই চার বাউন্ডারি।
সঙ্গী এনামুল যেন স্রেফ দর্শক। ৭ ওভার শেষে এনামুলের রান ১৬, তামিমের স্কোর তখন তিনগুণ! মৌসুমের প্রথম পঞ্চাশ স্পর্শ করেন তামিম ২৮ বলে।
ফিফটির পরও থামাথামি নেই। আল আমিনের অফ স্পিনকে এক ওভারে বাউন্ডারিতে পাঠান তিনবার। এনামুলের ব্যাটও তখন কথা বলতে শুরু করেছে। ১০ ওভারেই কুমিল্লা ছাড়িয়ে যায় একশ।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে মালিঙ্গা থামান তামিমকে। স্লোয়ারে স্লগ করতে গিয়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ধরা পড়েন শান্তর হাতে। আগের পাঁচ ইনিংস মিলিয়ে করেছিলেন ৬০ রান। এদিন ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৭৩।
ভালো শুরুটাকে কাজে লাগিয়ে বড় রান করতে পারেননি এনামুল। ৪০ করে ফিরেছেন ৩৭ বলে।
তিনে নেমে ইনিংসের গতি ধরে রাখেন ইমরুল। ৩ ছক্কায় করেছেন ১১ বলে ২৮ রান। কিন্তু ইমরুল ও লিয়াম ডসনকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান জুনাইদ খান। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ৪ ওভারে ২৯ রানের সমীকরণ হয়ে যায় ৩ ওভারে ২৮ রান।
একটি করে চার ও ছক্কায় আফ্রিদির ১২ রান করে যান আফ্রিদি। থিসারা ছিলেন বলেই কুমিল্লা ছিল সম্ভাবনায় এগিয়ে। শেষ ওভারে ব্যাথওয়েটকে চার ও ছক্কাসহ ৭ বলে ১৮ রান করে লঙ্কান অলরাউন্ডার ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে।
তার ম্যাচের প্রথম ভাগে ঝড় তুলেছিলেন জাতীয় দলে তার উদ্বোধনী জুটির এক সময়কার সঙ্গী জুনায়েদ। ৪১ বলে ৭০ রানের ইনিংসে বাঁহাতি ওপেনার মনে করিয়ে দেন তার সেরা সময়কে। মৌসুমের প্রথম ম্যাচ আল আমিন দেখান সামর্থ্যের ঝলক। এই দুজনের সৌজন্যে ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে বড় একটি স্কোর গড়তে পারে খুলনা।
রান উৎসবের শুরুটা যদিও ছিল বিষাদ দিয়ে। ম্যাচের প্রথম বলেই স্কুপ খেলতে গিয়ে পারেননি জহুরুল ইসলাম। ওই ওভারেই আরেকটি বাজে শটে আউট হন শূন্য রানে।
পরের ওভার থেকেই শুরু জুনায়েদের ঝড়। নতুন বলে বরাবরই ব্যাটসম্যানকে আটকে রাখেন যিনি, সেই অফ স্পিনার মেহেদি হাসানকে আমন্ত্রণ জানালেন জুনায়েদ চার ও ছক্কায়। তিনে নামা আল আমিনের ব্যাট থেকেও এলো চার।
দুজনের ব্যাটে বাউন্ডারি আসতে থাকে প্রায় প্রতি ওভারে। থিসারা পেরেরার প্রথম ওভারে আল আমিনের ব্যাটের নান্দনিকতা ও টাইমিংয়ে আসে ছক্কা ও চার। পাওয়ার প্লেতে ওঠে ৬ ওভারে ৬৫ রান।
৭১ রানের জুটি ভাঙে আল আমিনের বিদায়ে। শহিদ আফ্রিদির প্রথম বলেই স্টাম্পে থাকা ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে বোল্ড, সম্ভাবনাময় ইনিংসটি থামে ১৯ বলে ৩২ রান করে।
মাহমুদউল্লাহ শুরু করেছিলেন প্রথম বলে ছক্কা মেরে। পরের ওভারে ওয়াহাব রিয়াজের বাউন্সারেও ছক্কা মারেন হুক করে। কিন্তু খুলনা অধিনায়ক এ দিনও বড় করতে পারেননি ইনিংস। আফ্রিদির নিচু হয়ে যাওয়া বলে বোল্ড তিনিও।
আরেক প্রান্তে জুনায়েদ ছুটছিলেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ছক্কায় ফিফটি স্পর্শ করেন ৩০ বলে। ফিফটির পর এক ওভারেই দুটি ছক্কা মারেন আফ্রিদিকে। ডাভিড মালানের সঙ্গে তার জুটিতেও আসে পঞ্চাশ।
শেষ পর্যন্ত জুনায়েদ থেমেছেন ৭০ রানে রান আউট হয়ে। জুটির সঙ্গীকে হারিয়ে খুব বেশিক্ষণ আর টেকেননি মালানও। আফ্রিদিকে ছক্কায় ওড়ানোর পর তার তৃতীয় শিকার হয়েছেন ২৫ বলে ২৯ করে।
শেষ দিকে ব্র্যাথওয়েট-আরিফুলরা প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি। শুরুটা দারুণ ছিল বলে এরপরও খুলনা গড়েছিল বড় স্কোর।
কিন্তু এই দিনই তামিম ফিরলেন ছন্দে। লম্বা ব্যাটিং লাইন আপের সুবিধায় কুমিল্লা গেল খুলনার রান টপকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১৮১/৭ (জহুরুল ০, জুনায়েদ ৭০, আল আমিন ৩২, মাহমুদউল্লাহ ১৬, মালান ২৯, ব্র্যাথওয়েট ১২, আরিফুল ১৩, শান্ত ১*; সাইফ ৪-০-২৯-১, মেহেদি ৪-০-৩৮-০, থিসারা ২-০-২০-০, ওয়াহাব ৪-০-৩৪-২, ডসন ১-০-৮-০, আফ্রিদি ৪-০-৩৫-৩, শামসুর ১-০-১৪-০)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯.৪ ওভারে ১৮৬/৭ (তামিম ৭৩, এনামুল ৪০, ইমরুল ২৮, শামসুর ১, ডসন ৪, থিসারা ১৮*, আফ্রিদি ১২, জিয়াউর ০, সাইফ ১*; মালিঙ্গা ৪-০-২২-১, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-৩৬-১, জুনাইদ ৪-০-৩২-৪, ব্র্যাথওয়েট ৩.৪-০-৫০-০, তাইজুল ২-০-১৭-০, আরিফুল ১-০-১৩-০, আল আমিন ১-০-১৬-০)।
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল