আগের ম্যাচের পর বিরতি পাঁচদিনের। কিন্তু মুশফিকুর রহিমের ব্যাটের ধার কমল না যেন একটুও। সেদিন ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলার পর এবার আরেকটি ঝড়ো ইনিংস। দারুণ ইনিংস খেললেন ইয়াসির আলি চৌধুরী রাব্বিও। প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে তাণ্ডব চালালেন দাসুন শানাকা। রানে পাহাড় গড়ে জিতল চিটাগং ভাইকিংস।
সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচটি ছিল এখানে চিটাগংয়ের প্রথম ম্যাচ। সেই ম্যাচেই এবারের বিপিএলকে প্রথম দুইশ রানের স্কোর উপহার দিল চিটাগং। খুলনা টাইটানস হারল ২৬ রানে।
দিনের আগের ম্যাচেই চলতি আসরের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর গড়া হয়েছে দুইবার। সিলেটের ১৯৪ ছাপিয়ে রংপুর করেছিল ১৯৫। টানা তৃতীয় ইনিংসে পেছনে পড়ল আগের সর্বোচ্চ। ২০ ওভারে চিটাগং তুলল ২১৪ রান। খুলনা যেতে পেরেছে ১৮৮ রান পর্যন্ত।
চিটাগংয়ের ইয়াসির করেছেন ৩৬ বলে ৫৪ রান, ৩৩ বলে ৫২ মুশফিক। টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার শানাকা করেছেন ১৭ বলে ৪২। খুলনার রান দুইশর কাছাকাছি গেলেও বাজে শুরুর পর তারা সেভাবে জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি কখনোই।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চিটাগংয়ে শুরুটায় ছিল এমন ধ্বংসযজ্ঞের ইঙ্গিত। প্রথম তিন ওভারে রান ছিল ১৩, আসেনি কোনো বাউন্ডারি। চতুর্থ ওভারে ক্যামেরন দেলপোর্তকে ফেরান শরিফুল ইসলাম।
শুরুর ঘাটতি পুষিয়ে দেন মোহাম্মদ শাহজাদ। শরিফুলের ওই ওভারেই মারেন একটি ছয় এ দুটি চার। টানা দুটি ছক্কায় ওড়ান তাইজুলকে। আফগান ব্যাটসম্যানের ১৭ বলে ৩৩ রানের ঝড় থামান তাইজুলই।
সেখান থেকেই জুটি গড়েন ইয়াসির ও মুশফিক। দুজনের ব্যাটে চার-ছক্কা আসতে থাকে নিয়মিত। ৩৪ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ফিফটি স্পর্শ করেন ইয়াসির। লাসিথ মালিঙ্গাকে টানা তিনটি বাউন্ডারি মেরে মুশফিক ফিফটি করেন ২৯ বলে।
দুজনই আউট হন ফিফটির পরপর। তবে দারুণ খেলতে থাকা দুজনর বিদায়ও শাপেবর হয়ে ওঠে চিটাগংয়ের জন্য। শানাকা যে খেলতে থাকেন খুনে মেজাজে!
চার ছক্কা ও তিন চারে ১৭ বলে ৪২ রান করেন শানাকা। টানা দুটি চার ও এক ছক্কায় ইনিংস শেষ করেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। ৫ বলে করেছেন তিনি ১৬।
শুভাশিস রায়ের করা শেষ ওভার থেকে আসে ২৩ রান। শেষ ৫ ওভার থেকে চিটাগং তোলে ৭২।
বিপিএলের ছয় আসর মিলিয়েই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর চিটাগংয়ের ২১৪। ২০১৩ আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ২১৭ রান এখনও সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড।
বিশাল রান তাড়ায় খুলনার হোঁচট খায় শুরুতেই। পল স্টার্লিং আউট হয়েছেন প্রথম ওভারে। জুনায়েদ সিদ্দিক এ দিন পারেননি ঝড় তুলতে। আল আমিনও ব্যর্থ। চার ওভারেই নেই তিন উইকেট।
দারুণ কিছু শটে এরপর এবারের আসরে নিজের প্রথম ফিফটি করেছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে আউট হয়ে গেছেন চার ছক্কায় ২৬ বলে ৫০ করেই। দুটি করে চার ও ছক্কায় ব্রেন্ডন টেইলর করেছেন ১৬ বলে ২৮।
সাতে নেমে ৪ ছক্কায় ২০ বলে ৪০ করেছেন ডেভিড ভিসা, আটে নেমে তাইজুল ইসলাম ২১ বলে ২২। তাতে মোটামুটি ভদ্রস্থ হয়েছে হারের ব্যবধান।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে খুব আলোচনায় ছিল না যে দল, সেই চিটাগং পাঁচ ম্যাচে চার জয় নিয়ে উঠে এলো পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে। সাত ম্যাচের ছয়টিতেই হেরে খুলনার সম্ভাবনা টিকে থাকল কেবল অঙ্কের হিসেবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ২১৪/৪ (শাহজাদ ৩৩, দেলপোর্ত ১৩, ইয়াসির ৫৪, মুশফিক ৫২, শানাকা ৪২*, নাজিবউল্লাহ ১৬*; শুভাশিস ৪-০-৩৮-০, মালিঙ্গা ৪-০-৪৪-০, শরিফুল ৩-০-৪৭-১, তাইজুল ৪-০-৪৫-১, ভিসা ৪-০-২৬-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১৩-০)।
খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১৮৮/৯ (স্টার্লিং ০, জুনায়েদ ১২, আল আমিন ৫, টেইলর ২৮, মাহমুদউল্লাহ ৫০, আরিফুল ১১, ভিসা ৪০, তাইজুল ২২*, শরিফুল ৯, মালিঙ্গা ৫*; আবু জায়েদ ৪-০-৩৩-৩, খালেদ ৪-০-২৯-২, সানজামুল ৪-০-৪৬-০, শানাকা ২-০-৩২-০, নাঈম ২-০-২২-১, দেলপোর্ত ৪-০-২৫-২)।
ফল: চিটাগং ভাইকিংস ২৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম