বাণিজ্যিক উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছেন বন্দিরা, পাবেন লভ্যাংশও

বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনে কারাবন্দিদের কাজে লাগানো হচ্ছে এবং উৎপাদিত পণ্যের বিক্রির লভ্যাংশও তারা পাবেন।

pm-5c44282e3f275

এর ফলে বন্দির পরিবারের সদস্যদের যেমন অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না, আবার দীর্ঘ কারাভোগের পর বেরিয়ে দক্ষ শ্রমিক হিসেবেও তারা কাজের সুযোগ করে নিতে পারবেন।

রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে কারাবন্দিদের নিয়ে এই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, কারা মহাপরিদর্শক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, “কারাগারগুলোতে যেমন নতুন ভবন তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে আমরা নতুন নতুন আইডিয়াও নিয়ে এসেছি।”

তিনি বলেন, “এখন আমরা শুরু করেছি প্রশিক্ষণ দেওয়া। এটা আগেও ছিল, কিন্তু সীমিত আকারে।

“প্রশিক্ষণ দিয়ে দিয়ে তাদেরকে দিয়ে কিছু উৎপাদন করানো এবং বাজারজাত করে সেটার লভ্যাংশ যারা কাজ করবে তাদের জন্যই রেখে দিলাম। (লভ্যাংশ) হয় তাদের পরিবার লোকেরা নিয়ে যাবে অথবা সে যখন মুক্তি পাবে ওই টাকা নিয়ে যেন একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে।”

“সেই ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই। সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কারাবন্দিদের দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে তা বাজারজাত করা হয়। উন্নত দেশগুলোতে বন্দিরা কফি প্যাকেজিং, পোশাক, থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স এমনকি যুদ্ধাস্ত্র তৈরির মতো ভারী কাজেও শ্রম দেন।

বাংলাদেশেও কারাবন্দিদের শ্রম কাজে লাগানো শুরু হয়েছে।

অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল হাসান বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কারবন্দিদের শ্রম মূল ধারার কাজে যুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছি। বন্দিশালা বলতে যা বোঝানো হত, তা আর থাকছে না। কারাগারকে সংশোধনাগার বানোনো হচ্ছে।”

কারাবন্দিদের দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে তা বাজারজাত করলে ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ তাদের দেওয়া হবে- এমন একটি নীতিমালা ইতোমধ্যেই অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

একসময় বাংলাদেশে বন্দিদের দিয়ে কারাগারের মধ্যে কায়িক পরিশ্রম করানো হলেও তার পেশাগত বা বাণিজ্যিক মূল্য তেমন ছিল না।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, “আপনারা যদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের রোজনামচা বইটা পড়েন, তাহলে দেখবেন, প্রথম অধ্যায়েই কারাগারের ভেতরের কথাগুলো চমৎকারভাবে লেখা আছে। একটা অপরাধী আরও পাকাপোক্ত অপরাধী কীভাবে হয়, সেটাও কিন্তু সেখানে চমৎকারভাবে তিনি তুলে ধরেছেন।”

ইকবাল হাসান জানান, বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে বর্তমানে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৯৩ হাজার; যার মধ্যে ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ কয়েদি অর্থাৎ দণ্ডিত, বাকিটা হাজতি বা বিচারধীন মামলার আসামি।

এই বন্দিদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৬০ এর মধ্যে। তাই শ্রমিক হিসেবে সংখ্যার দিক দিয়েও তারা সামান্য নন।

ইকবাল হাসান বলেন, “বেশ কিছু দিন কারাবন্দি থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাদের কেউ কাজে নিতে চান না। কারণ কারাবন্দিদের নিয়ে একটা ট্যাবু আছে যে, তারা কাজ জানে না। আমরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের যদি দক্ষ শ্রমিক হিসেবে তৈরি করতে পারি, তাহলে তাদের মুক্তির পর বাইরে কাজ পেতে অসুবিধা হবে না।”

বাংলাদেশের কারাবন্দিদের গার্মেন্টস, বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, বেকারিসহ ৩৮ ধরনের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে বলে জানান এই অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক।

ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে ও প্রশিক্ষণ আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা থেকে তাদের সহায়তা করা হচ্ছে।

Pin It