‘দুর্নীতির মাধ্যমে’ বিপুল সম্পদ অর্জন করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের নামে থাকা ২৫টি বাড়ি-প্লট ও জমি জব্দ করা হয়েছে, যার মধ্যে ঢাকায় ১৫টি বাড়ি ও প্লট রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে থাকা কয়েকটি অ্যাকাউন্ট এবং রুবিনার নামে থাকা ‘টয়োটা হ্যারিয়ার’ ২০০০ সিসির একটি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, আদালতের আদেশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার সাবেক হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল ও তার স্ত্রীর এসব সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, আবজাল হোসেন ১৯৯৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি আঞ্চলিক প্রকল্পে ‘অফিস সহকারী’ পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন। পরে তিনি হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে অধিদপ্তরের মহাখালী এডুকেশন শাখায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অধিদপ্তরের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আছেন।
আর আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানম একই অধিদপ্তরের আরেকটি আঞ্চলিক প্রকল্পে ‘স্টেনোগ্রাফার’ পদে ১৯৯৮ সালে যোগ দিয়ে ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে আবজাল দম্পতির নামে দেশে-বিদেশে ‘বিপুল পরিমাণ’ সম্পদের তথ্য পাওয়ার কথা জানান দুদক কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু পর আবজাল হোসেনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া এই দম্পতির বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুদক।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আবজাল হোসেনের নামে জব্দ করা সম্পদের তালিকা হল-
>> ঢাকার মিরপুরে আড়াই কাঠা জমির ওপর টিনসেড বাড়ি
>> পল্লবীতে ছয় কাঠা জমি
>> উত্তরার ১৫/সি নম্বর সেক্টরে তিন কাঠা জমির ২৪ নম্বর প্লট
>> উত্তরার ১৫/সি নম্বর সেক্টরে তিন কাঠা জমির ২৬ নম্বর পল্ট
>> খিলক্ষেতে তিন কাঠা জমি
>> বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় চার কাঠার প্লট
>> ফরিদপুরের কোতয়ালী পৌরসভা মৌজা এলাকায় সাড়ে ১০ শতাংশ জমিতে দোতলা বাড়ি
>> একই এলাকার রঘুনন্দনপুর মৌজায় সাড়ে ১৩ শতাংশ জমি
>> জেলার পশ্চিম টেপাখোলা এলাকায় ১১৩ শতাংশ জমি
>> রাজবাড়ী জেলার বসন্তপুর ইউনিয়নে ২৩০ শতাংশ জমি
>> খুলনা সিটি করপোরেশনের খালিশপুর বয়রা মৌজায় সাড়ে ৫ কাঠা জমি
>> একই সিটি করপোরেশনের মুজগুনি আবাসিক এলাকায় সাড়ে তিন কাঠা প্লট
আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনার নামে থাকা জব্দ সম্পত্তি হল-
>> রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কে সাড়ে তিন কাঠা প্লটে ছয়তলা বাড়ি
>> উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কে তিন কাঠা প্লটে ছয়তলা বাড়ি
>> ঢাকার মিরপুরে একটি টিনসেড বাড়ি
>> পল্লবীতে আড়াই কাঠা জমি
>> বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পকের ৩০৬৭ নম্বর ব্লকে তিন কাঠার একটি প্লট
>> বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের ৩০৬৬ নম্বর ব্লকে তিন কাঠার একটি প্লট
>> ঢাকার কেরাণীগঞ্জের একটি মার্কেটে দোকান
>>ঢাকার সাভারে ১৫ শতাংশ জমি
>> ফরিদপুরের কোতয়ালী পৌরসভার হাবেলী গোলাপপুরে দোতলা বাড়ি
>> একই জেলার চর পশ্চিম টেপাখোলা এলাকায় আট শতাংশ জমি
>> জেলার একই এলাকায় আরেকটি নয় শতাংশ জমি
>> জেলার একই এলাকায় সাড়ে পাঁচ শতাংশের আরেকটি জমি
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বলা হয়, ওই সব সম্পত্তির বাইরে আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের নামে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি বাড়ি রয়েছে, হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়ে দুই লাখ ডলারে বাড়িটি কিনেছেন। এছাড়া তাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ জমা আছে।
এজন্য ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, এবি ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে দুদক কর্মকর্তা প্রনব কুমার জানিয়েছেন।
দুর্নীতির মাধ্যমে ‘বিপুল পরিমাণ’ এসব সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ১০ জানুয়ারি আবজাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
এছাড়া একই ‘সিন্ডিকেটে’ যুক্ত থাকার অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (বাজেট) ডা. আনিসুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (লাইন ডিরেক্টর) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ও লাইন ডিরেক্টর (চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি) অধ্যাপক ডা. আবদুর রশীদকে তলব করেছে দুদক।