এসএমএসে বৈধ-অবৈধ হ্যান্ডসেট যাচাই এবং এখাতে অন্যান্য সুবিধা তৈরিতে মোবাইল হ্যান্ডসেটের তথ্য নিয়ে একটি ডেটাবেইজ চালু করল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
বিটিআরসি কার্যালয়ে মঙ্গলবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ডেটাবেইজ উদ্বোধন করেন।
যে কেউ নিজের সেটের তথ্য যাচাইয়ে KYD<Space> ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে ১৬০০২ নম্বরে পাঠিয়ে দিলে ফিরতি মেসেজে জানানো হবে, তার সেটটি ডেটাবেইজে সংরক্ষিত রয়েছে কি না।
‘এনওসি অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডেটাবেইজ (এনএআইডি) সেবা পেতে কোনো ধরনের নিবন্ধন প্রয়োজন হবে না।
বর্তমানে ব্যবহৃত সব নম্বর এ ডেটাবেইজে পাওয়া যাবে না। শুধু ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বৈধভাবে আমদানিকৃত এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের বেশিরভাগ আইএমইআই নম্বর এই তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে।
অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসে এটি মাইলফলক মুহূর্ত। চুরি করে হ্যান্ডসেট আমদানি করায় যে রাজস্ব ক্ষতি হত, তা (ঠেকানো) প্রযুক্তি ছাড়া সম্ভব নয়, এখন করা যাবে।”
সরকারি কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ব্যবসায়ীদের হিসাবে, বাজারে যত মোবাইল হ্যান্ডসেট আছে, তার প্রতি তিনটির একটিই নকল বা অবৈধ।
তাদের হিসাবে প্রতি বছর এক কোটির বেশি অবৈধ ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজার আসছে, যার বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
দুটি ফোনের আইএমইআই নম্বর কখনও এক হয় না। নকল ফোনে আইএমইআই নম্বর থাকে না, থাকলেও সেটি হয় জাল। সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এ ধরনের আইএমইআই নম্বরবিহীন সেটই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযোগ।
মন্ত্রী বলেন, “যত ডিজিটাল হচ্ছি, তত ডিজিটাল অপরাধ বাড়ছে এগুলো নরমাল পদ্ধতিতে প্রতিরোধ সম্ভব নয়, ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে এসব মোকাবেলা করতে হবে।”
নির্বাচনের আগে অপপ্রচার রুখতে বিটিআরসির কাজের প্রশংসা করেন তিনি।
“এত রাতে খবর পেয়েছি সেনাবাহিনীর নামে ৭৬০টা লিংক তৈরি করা হয়েছিল, সেনাবাহিনীর নামে গুজব রটানো প্রতিরোধ করা কঠিন ছিল। বিটিআরসি চমৎকারভাবে এসব প্রতিরোধ করেছে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফেইসবুকের সহায়তা ছাড়া অপপ্রচারকারীদের আইনের হাতে নিয়ে এসেছে।”
এই ডেটাবেইজ চালু হওয়ায় চুরি বা ছিনতাই হওয়া ফোন বন্ধ করার সুযোগও তৈরি হল।
শুধু হ্যান্ডসেট নয় অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “মাদারবোর্ড তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে এবং এটি গর্ব করার মতো বিষয় হবে।”
বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উদ্যোগ এবং ফাইভ জির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ তৃতীয় সাবমেরিন কেবলে প্রবেশ করতে নতুন একটি কনসোর্টিয়ামে যোগ দেবে।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, এনএআইডি বাজার চাহিদার সঙ্গে বাজার পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে আইএমইআই ব্লক করার মাধ্যমে চুরি যাওয়া হ্যান্ডসেট বন্ধ করা সম্ভব হবে।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বলেন, ৯ কোটি মানুষ ১৫ কোটি সিম ব্যবহার করে এবং আনুমানিক ১০ কোটি হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে থাকে। এ ডেটাবেইজ চালু হওয়ায় এখন প্রকৃত সংখ্যাই বলা যাবে।
বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট নিয়ে এলে তা বৈধ করার প্রক্রিয়া কী হবে- সাংবাদিকদের প্রশ্নে নাসিম পারভেজ বলেন, “কাস্টমসকে বললে সেট নিয়ে আসলে ট্যাক্সসহ বা ট্যাক্স ছাড়া রশিদ দেবে তাতে ওইসব হ্যান্ডসেট ব্যবহার করা যাবে।
“যারা ইতোমধ্যে নিয়ে এসেছে, তাদের চিন্তার কোন কারণ নেই, কারণ ভবিষ্যতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডিনটেটি রেজিস্টার (এনইআইআর) স্থাপিত হলে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।”
মোবাইল ফোন ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, এখাতে এখন সৎভাবে যারা ব্যবসা করছে, তাদের জন্য ব্যবসা সহজ হবে এবং অসৎ ব্যবসায়ীরা থাকতে পারবে না।
বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আর্থিক সহায়তায় চালু হয়েছে এনএআইডি। বিটিআরসির সার্ভার কক্ষে সিস্টেমটির ডেটাবেইজ ও সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে।
এখন মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের আমদানি-অনাপত্তি (এনওসি) প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে এবং আমদানি ও স্থানীয়ভাবে তৈরি হ্যান্ডসেটের আইএমইআই সংরক্ষিত থাকবে।
কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে
>> হ্যান্ডসেট আমদানিকারকরা আমদানি অনাপত্তিপত্র (এনওসি) গ্রহণ করতে অনলাইনে আবেদন ও অনলাইনে তা গ্রহণ করতে পারবেন।
>> ক্রেতারা হ্যান্ডসেট কেনার আগে আইএমইআই ডেটাবেইজ থেকে আইএমইআই নম্বর যাচাই করতে পারবেন, ফলে অবৈধ আমদানি করা হ্যান্ডসেট এ ডেটাবেইজে পাওয়া যাবে না। ফলে ক্রেতারা অবৈধ হ্যান্ডসেট কেনায় নিরুৎসাহিত হবেন। এতে অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানি হ্রাস পাবে বলে যুক্তি বিটিআরসির।
>> অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানি হ্রাসের ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি কমে আসবে।
>> দেশের মোবাইল ফোন খাতের সার্বিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে। তা বিশ্লেষণ করে গ্রাহকের ধরন, ফিচার ফোন থেকে স্মার্টফোন গ্রহণের প্রবণতা, কী পরিমাণ হ্যান্ডসেট দেশের বাজারে বিক্রি হয়, বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও সেটের সংখ্যা ইত্যাদি যাচাই করে এ সেক্টরে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
>> সিস্টেসটিতে কাস্টমস হাউজের জন্য আলাদা মডিউল এবং একটি ডিভাইস থাকবে যাতে কমিশন থেকে দেওয়া এনওসিতে উল্লেখিত আইএমইআই নম্বর যাচাই করে শুল্কায়ন করতে পারবে। ফলে ভুল আইএমইআই নম্বর বিশিষ্ট মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রবেশ করতে পারবে না।
>> ভবিষ্যতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডিনটেটি রেজিস্টার (এনইআইআর) স্থাপন করা হলে এই সিস্টেমটি তার ডেটাবেইজ হিসেবে কাজ করবে। তখন সিস্টেমটির ডেটাবেইজ ব্যবহার করে মোবাইল ফোন চুরি, ছিনতাই রোধসহ অপরাধমূলক কাজ বন্ধ করা সম্ভব হবে।