অ্যালেক্স হেলসের পর সেঞ্চুরি করলেন রাইলি রুশো। তাদের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে বিপিএলে প্রথমবারের মতো কোনো ম্যাচে হলো জোড়া সেঞ্চুরি। চিটাগং ভাইকিংসের বোলারদের চোখের পানি-নাকের পানি এক করে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়া রংপুর রাইডার্স জিতল সহজেই।
৭২ রানে জিতেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ২৪০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৮ উইকেটে ১৬৭ রান করে চিটাগং।
বিপিএলে চট্টগ্রাম পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ উইকেটে ২৩৯ রান করে রংপুর। সর্বোচ্চ রানের আগের রেকর্ডটি ছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের। ২০১৩ সালে মিরপুরে রংপুরের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ২১৭ রান করেছিল তারা।
রংপুর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দুইশ ছাড়ানো সংগ্রহ পেল। গত আসরের ফাইনালে তারা ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ১ উইকেটে করেছিল ২০৬ রান।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবার শুরুতেই ক্রিস গেইলকে হারায় রংপুর। দ্বিতীয় ওভারে অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা বলে ক্যারিবিয়ান বাঁহাতি ওপেনারকে এলবিডব্লিউ করে বিদায় করেন আবু জায়েদ চৌধুরী।
প্রথম দুই ওভারে আসেনি কোনো বাউন্ডারি। তৃতীয় ওভারে রবি ফ্রাইলিঙ্ককে পরপর দুই চার হাঁকিয়ে ডানা মেলেন হেলস। পরের ১৭ ওভারের প্রতিটি থেকে রংপুরের ব্যাটসম্যানরা তুলে নেন অন্তত একটি করে বাউন্ডারি।
চতুর্থ ওভারে আবু জায়েদকে চার বলের মধ্যে তিনটি চার হাঁকান হেলস। পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে এসে বল ফেলার যেন জায়গা পাচ্ছিলেন না সৈয়দ খালেদ আহমেদ। ইংলিশ ওপেনার এই পেসারের ওভারে দুটি করে ছক্কা-চারে তুলে নেন ২২ রান।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসা সানজামুল ইসলামও থামাতে পারেননি হেলস ঝড়। বাঁহাতি স্পিনারকে দুটি চার ও একটি ছক্কা মেরে তুলে নেন ১৫ রান। প্রথম চারে ২৩ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন এই বিস্ফোরক ওপেনার।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৬৯ রান সংগ্রহ করে রংপুর। সে সময় পর্যন্ত শান্ত ছিলেন রুশো। সপ্তম ওভারে শট খেলতে শুরু করেন বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। তাই পাওয়ার প্লের পরও ভাটা পড়েনি রানের গতিতে।
রবিউল হককে চার মারার পর সানজামুলকে ছক্কায় উড়ান রুশো। রান আসতে থাকে বানের স্রোতের মতো। ৪৬ বলে জুটির রান যায় তিন অঙ্কে। ১০ ওভার শেষে রংপুরের স্কোর ছিল ১০৯/১।
আক্রমণে ফিরে রুশোর তোপের মুখে পড়েন খালেদ। নিস্তার পাননি বাঁহাতি স্পিনার সানজামুলও। রবিউলকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২৯ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন দারুণ ছন্দে থাকা রুশো।
ফিফটি করার পরপরই আউট হতে পারতেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। সীমানায় ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান সানজামুলের ব্যর্থতায়। দক্ষিণ আফ্রিকান বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান রবিউলের পরের দুটি বল উড়ান ছক্কায়। পরে ছক্কা মারেন সিকান্দার রাজাকে।
দুই রান নিয়ে ৪৭ বলে হেলস স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। পরের বলে ফিরেন ক্যাচ দিয়ে। তার ৪৮ বলের টর্নেডো ইনিংসটি গড়া ১১ চার ও ৫ ছক্কায়। তার বিদায়ে ভাঙে ৭৮ বল স্থায়ী ১৭৪ রানের জুটি।
চারে নামা ডি ভিলিয়ার্সকে দ্রুত ফেরান আবু জায়েদ। একটি করে ছক্কা-চারে ১০ বলে ১৫ রান করে ফিরেন মোহাম্মদ মিঠুন। মাত্র ৪ বলে একটি করে ছক্কা-চারে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন নাহিদুল ইসলাম।
ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ ছাড়িয়ে ৫১ বলে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন রুশো। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর আর স্ট্রাইক পাননি। তার বিস্ফোরক ইনিংসটি গড়া ৮টি ছক্কা ও ৬টি চারে।
বড় রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি চিটাগংয়ের। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা মোহাম্মদ শাহজাদকে বোল্ড করে বিদায় করেন ফরহাদ রেজা। সিকান্দার রাজাকে বোল্ড করে ফেরান মাশরাফি।
শফিউল ইসলামকে তিন ছক্কা হাঁকানো মুশফিকুর রহিমকে এলবিডব্লিউ করে থামান নাজমুল ইসলাম অপু। বেশিক্ষণ টিকেননি নাজিউল্লাহ জাদরান।
৭৯ রানে ৪ উইকেট হারানো চিটাগং কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে ইয়াসির আলী চৌধুরী ও মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটে। এক ছক্কায় ১৪ রান করা মোসাদ্দেককে ফিরিয়ে ৪১ রানের জুটি ভাঙেন মাশরাফি। পরের ওভারে বিদায় করেন ইয়াসিরকে।
ক্যারিয়ার সেরা ৬৩ ছাড়িয়ে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ফিরেন ৭৮ রান করে। তার ৪৮ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংস গড়া ছয় চার ও তিন ছক্কায়। ইয়াসিরের বিদায়ের পর বেশি দূর এগোয়নি চিটাগংয়ের ইনিংস।
অধিনায়ক মাশরাফি ৩ উইকেট নেন ৩৪ রানে। অলরাউন্ডার রেজা ২ উইকেট নেন ২৯ রানে।
নয় ম্যাচে পঞ্চম জয় পেল রংপুর। আট ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো হারল চিটাগং।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ২৩৯/৪ (গেইল ২, হেলস ১০০, রুশো ১০০*, ডি ভিলিয়ার্স ১, মিঠুন ১৫, নাহিদুল ১১*; ফ্রাইলিঙ্ক ২-০-১৪-০, আবু জায়েদ ৪-০-৩৫-২ খালেদ ৩-০-৫০-০, সানজামুল ৩-০-৩৭-০, রবিউল ৪-০-৫৪-১, রাজা ৪-০-৪৮-১)
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৬৭/৮ (শাহজাদ ২০, ইয়াসির ৭৮, রাজা ৩, মুশফিক ২২, জাদরান ১, মোসাদ্দেক ১৪, সানজামুল ৪, রবিউল ৭, আবু জায়েদ ১০*, খালেদ ৬*; নাজমুল ৪-০-৩১-১, মাশরাফি ৪-০-৩৪-৩, রেজা ৪-০-২৯-২, শফিউল ৩-০-৩৫-০, নাহিদুল ১-০-৯-০, শহিদুল ৪-০-২৮-১)
ফল: রংপুর রাইডার্স ৭২ রানে জয়ী