ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক, ইনিংসে খুব বেশি প্রভাব হয়তো ফেলতে পারেনি। তবে ওই হ্যাটট্রিকেই আন্দ্রে রাসেল ছুঁয়েছেন একটি রেকর্ড। এর আগেও দুবার হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। টি-টোয়েন্টিতে তিনটি হ্যাটট্রিক করা মাত্র তৃতীয় বোলার রাসেল।
বিপিএলে বুধবার চট্টগ্রামে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন রাসেল। শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ফিরিয়ে দেন মুশফিকুর রহিম, ক্যামেরন দেলপোর্ত ও দাসুন শানাকাকে।
টি-টোয়েন্টিতে তিনটি হ্যাটট্রিক করতে পেরেছেন আর কেবল ভারতের অমিত মিশ্র ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ড্রু টাই।
রাসেল প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন ২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের হয়ে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে। বেঙ্গালুরুতে সেদিন ২০ ওভারে ২২১ রান করেছিল ভারত ‘এ’। কিন্তু ইনিংসের ১৯তম ওভারে রাসেল শুধু হ্যাটট্রিকই করেননি, টানা চার বলে ফিরিয়েছিলেন কেদার যাদব, যুবরাজ সিং, নামান ওঝা ও ইউসুফ পাঠানকে।
রাসেলের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক ছিল গত বছর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে জ্যামাইকা তালাওয়াহসের হয়ে।
প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে তিনটি হ্যাটট্রিকের কীর্তি প্রথম গড়েছিলেন অমিত মিশ্র। ভারতীয় লেগ স্পিনারের তিনটি হ্যাটট্রিকই আইপিএলে। প্রথমটি ২০০৮ আইপিএলে, পরেরটি ২০১১ ও সবশেষটি ২০১৩ আইপিএলে।
টাই তিনটি হ্যাটট্রিক করেছেন এক বছরের মধ্যেই। দুটি বিগ ব্যাশে, একটি আইপিএলে। এই পেসার ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্রিজবেন হিটের হয়ে করেছিলেন প্রথমটি, এপ্রিলে আইপিএলে গুজরাট লায়ন্সের হয়ে দ্বিতীয়টি, ডিসেম্বরে পার্থ স্কর্চার্সের হয়ে তৃতীয়টি।
টি-টোয়েন্টিতে দুটি করে হ্যাটট্রিক আছে বাংলাদেশের আল আমিন হোসেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহির, পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজ, নিউ জিল্যান্ডের টিম সাউদি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেনক্স কাশ ও ভারতের যুবরাজ সিংয়ের।
যুবরাজ আবার একটি জায়গায় অনন্য। দুইবার নিজে হ্যাটট্রিক করেছেন, দুইবার নিজে হ্যাটট্রিকের শিকারও হয়েছেন!
টানা চার বলে উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রাসেল ছাড়া আছে আর কেবল আল আমিনের। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টিতে ইউসিবি-বিসিবি একাদশের হয়ে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন ডানহাতি এই পেসার। ইনিংসের শেষ ওভারে তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ বলে আউট করেছিলেন নাজমুল হোসেন মিলন, সোহরাওয়ার্দী শুভ, নাঈম ইসলাম জুনিয়র ও নাবিল সামাদকে।
ওই ওভারের প্রথম বলে মেহেদি মারুফকেও আউট করেছিলেন আল আমিন। দুর্দান্ত সেই ওভারে তাই তার উইকেট ছিল ৫টি।
ঢাকাকে হারিয়ে শেষ চারে চিটাগং
বিপিএলে বুধবারের প্রথম ম্যাচে ১১ রানে জিতেছে চিটাগং। ১৭৪ রান তাড়ায় ঢাকা ৯ উইকেটে করে ১৬৩ রান।
১১ ম্যাচে সপ্তম জয় পাওয়া চট্টগ্রামের পয়েন্ট ১৪। শেষ চার নিশ্চিত করা রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সেরও পয়েন্ট ১৪ করে। ১০ ম্যাচের পাঁচটিতে হারা ঢাকার পয়েন্ট ১০। শেষ চারের আশা টিকে আছে সাকিবদের।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ শাহজাদের সঙ্গে ৫ ওভার ২ বল স্থায়ী ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ভালো শুরু এনে দেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। ১৫ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ২১ রান করা শাহজাদকে ফিরিয়ে শুরুর জুটি ভাঙেন সুনিল নারাইন।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ইয়াসির আলী চৌধুরীর সঙ্গে ৬ ওভার ১ বলে ৪৬ রান যোগ করেন ডেলপোর্ট। নারাইনকে সুইপ করে সীমানায় ইয়াসির ধরা পড়লে ভাঙে জুটি।
৪৩ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রানের গতি বাড়ান ডেলপোর্ট। রুবেল হোসেনকে ছক্কা হাঁকিয়ে ডানা মেলেন মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে তারা গড়েন ৭৯ রানের জুটি।
ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে আন্দ্রে রাসেলকে উড়ানোর চেষ্টায় লং অনে শুভাগত হোম চৌধুরীর হাতে ধরা পড়েন মুশফিক। ২৪ বলে খেলা তার ৪৩ রানের ঝড়ো ইনিংস গড়া চারটি চার ও দুটি ছক্কায়।
পরের বলে লং অফ সীমানায় শুভাগতর হাতে ধরা পড়েন বাঁহাতি ওপেনার ডেলপোর্ট। চলতি আসরে নিজের প্রথম ফিফটি পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান এই ব্যাটসম্যান ৫৭ বলে চারটি ছক্কা ও পাঁচটি চারে করেন ৭১ রান।
মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে স্কুপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে মিজানুর রহমানের হাতে ধরা পড়েন দাসুন শানাকা। ক্যারিয়ারের তৃতীয় হ্যাটট্রিক করেন রাসেল। টি-টোয়েন্টিতে তিনটি করে হ্যাটট্রিক আছে কেবল ভারতের অমিত মিশ্র ও অস্ট্রেলিয়ান অ্যান্ড্রু টাইয়ের।
বিপিএলের চলতি আসরে এনিয়ে হল তিনটি হ্যাটট্রিক। আগের পাঁচ আসর মিলিয়ে হয়েছিল মোটে দুটি।
রাসেল ৩ উইকেট নেন ৩৮ রানে। আঁটসাঁট বোলিংয়ে ২০ রানে ২ উইকেট নেন নারাইন।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি ঢাকার। ২৩ রানের মধ্যে ফিরে যান টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান। নারাইন ও রনি তালুকদারকে ফিরিয়ে দেন আবু জায়েদ চৌধুরী। রান আউট হয়ে ফিরে যান মিজানুর রহমান।
চতুর্থ উইকেটে সাকিবের সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়েন প্রমোশন পেয়ে পাঁচ নম্বরে নামা নুরুল হাসান সোহান। ২৩ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে ৩৩ রান করা কিপার-ব্যাটসম্যান সোহানকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ডেলপোর্ট। পরের বলে রান আউট হয়ে ফিরে যান মিডল অর্ডারের অন্যতম ভরসা কাইরন পোলার্ড।
সাকিবের সঙ্গে রাসেলের ৬৬ রানের জুটিতে ম্যাচে ফিরে ঢাকা। ক্রিজে গিয়েই বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া রাসেলকে ফিরিয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন শানাকা। ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের ২৩ বলে খেলা ৩৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস গড়া চারটি চার ও দুটি ছক্কায়।
সময়ে দাবি মেটাতে পারেননি শুভাগত। শানাকার স্লোয়ার বলে নাঈম হাসানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন আশা হয়ে টিকে থাকা সাকিব। ৪২ বলে খেলা ঢাকা অধিনায়কের ৫৩ রানের ইনিংস গড়া ছয়টি চারে।
ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে অবদান রেখে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ডেলপোর্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৭৪/৫ (শাহজাদ ২১, ডেলপোর্ট ৭১, ইয়াসির ১৯, মুশফিক ৪৩, শানাকা ০, রাজা ৬*, মোসাদ্দেক ১*; বার্চ ৪-০-৩৫-০, রাসেল ৪-০-৩৮-৩, সাকিব ৩-০-২৪-০, নারাইন ৪-০-২০-২, রুবেল ৪-০-৪০-০, মাহমুদুল ১-০-৮-০)
ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৬৩/৯ (মিজানুর ১১, নারাইন ০, রনি ৬, সাকিব, নুরুল ৩৩, পোলার্ড ০, রাসেল ৩৯, শুভাগত ৫, বার্চ ৭*, মাহমুদুল ২, রুবলে ০*; আবু জায়েদ ৪-০-২৫-৩, খালেদ ৪-০-৩৫-০, নাঈম ৪-০-৩৭-১, ডেলপোর্ট ৪-০-৩১-১, শানাকা ৪-০-৩৪-২)
ফল: চিটাগং ভাইকিংস ১১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ক্যামেরন ডেলপোর্ট