হলিউডের অভিনেত্রী ও জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বিশেষ দূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার চাকমারকুল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করেন জোলি। এ সময় নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের সঙ্গে কথা বলেন এবং রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান তিনি।
ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান ভুইয়া বলেন, দুপুরে চাকমারকুল রোহিঙ্গা শিবিরে পৌঁছান জোলি। তার পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট, কালো প্যান্ট ও মাথায় সাদা ওড়না। তিনি সেখানে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের পালিয়ে আসার কারণ এবং রাখাইনে তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা শোনেন।
মাহবুবুর রহমান ভুইয়া আরও বলেন, জুলি প্রায় তিন ঘণ্টা কাটান এই ক্যাম্পে। এই সময় সেখানে কোনো সংবাদকর্মীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
সরকারী কর্মকর্তা ও কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, দুপুরে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ক্যাম্পে পৌঁছায়। এরপর গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে উঁচু ক্যাম্পের পাহাড়ের তীরে বসবাসকারী জি-ব্লকে যান। সেখানে শরণার্থীদের ঝুপড়ি ঘরে ঢুকে মিয়ানমার সেনাদের হাতে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় রোহিঙ্গাদের দুটি পরিবারের সঙ্গে বিশেষ ভাবে কথা বলেন। পরে সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ডি ও ই ব্লক ঘুরে দেখেন এবং আশ্রিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের নির্যাতনের কাহিনী শুনেন।
ক্যাম্পে পরিদর্শনকালে নুর হারেছা নামে এক রোহিঙ্গা শিশুর সঙ্গে কথা বলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। তার কাছে জোলি জানতে চান, হারেছা তুমি কেমন আছ, তুমি কি লেখাপড়া করো, কেন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছ? জবাবে রোহিঙ্গা শিশুটি জানায়, সে ভালো আছে, লেখাপড়া শিখতে চায়। প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা জীবনে অনেক সেলিব্রেটির দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এতো কড়াকড়ি কখনো দেখেনি।
আবদুল শুক্কুর নামে এক রোহিঙ্গা জানান, অনেক বড় বড় সেলিব্রিটি লোক আসে-যায়, কিন্তু আমাদের কি উপকার হয়? তারা শুধু আসে ঘুরে চলে যায়। অনেক মানুষ আসলেন আর গেলেন, আমরা বিচার কী পেয়েছি?
জুলি কুতুপালং ক্যাম্পে নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সঙ্গেও কথা বলেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জোলি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করেন। এরপর তিনি কক্সবাজারের দিকে রওনা হন। তিনি কক্সবাজারের একটি তারকা হোটেলে অবস্থান করেন। মঙ্গলবারও তার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা রয়েছে। দুপুরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে তার প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে ইউএনএইচসিআরের এক কর্মকর্তা জানান।
জোলি ২০১২ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত হন। এর পর থেকে তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষ বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন নির্যাতনের প্রতিরোধে সোচ্চার ভূমিকা রাখছেন।
এর আগে, গত বছরের মে মাসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী সাবেক বিশ্বসুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। প্রিয়াঙ্কা জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। বিদেশের আরও বহু তারকা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন।