নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে বাইরে রাখার ‘উদ্দেশ্য হাসিলের’ পর এবার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “মিথ্যা দণ্ড দিয়ে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার সাধ পূর্ণ করলেন, এবার মুক্তি দিন। প্রধানমন্ত্রী আপনি দেয়ালের ভাষা পড়ুন, চারিদিকে মানুষ চোখে-মুখে কী বলছে, বোঝার চেষ্টা করুন। পৃথিবীটা ক্ষণিকের, কিন্তু কর্মফল অনন্তকালের। এখনও সময় আছে, এবার দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন।”
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাবাসের বছর পূর্ণ হওয়ার দুদিন পর রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন রিজভী।
জিয়া এতিমখানা ও দাতব্য ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।
আদালতকে ব্যবহার করে তাদের নেত্রীকে জেলে রাখা হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তার কর্মফল ভোগ করছেন এবং এক্ষেত্রে আদালতের উপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
রিজভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আপনি অনুগ্রহ করে ফেরাউন-নমরুদ-হিটলার অথবা কল্পরাজ্যের হিরকের রাজাকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা করবেন না। দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় তাকে একবছর কারারুদ্ধ করে রাখা অন্যায়, অবিচার ও জুলুম।”
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাধবায়ক সরকার আমলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মামলা হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তখন তার মাথার উপর ১৫টি দুর্নীতি মামলা ছিল। সেগুলো আদালতের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
“আর বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলাগুলোকে চলমান রেখে এখন সাজা দেওয়া হচ্ছে আইন-আদালতকে কব্জা করে। উদ্দেশ্য তাদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।”
কারাঅন্তরীণ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, “তার অসুস্থতা দিনে দিনে বাড়লেও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। পুরনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখে প্রচণ্ড ব্যথা, পা ফুলে গেছে, হাঁটতে পারছেন না। নির্যাতন সহ্য করতে গিয়ে তার পূর্বের অসুস্থতা এখন আরও গুরুতর রূপ ধারণ করেছে।
“এইরকম শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও অমানবিকভাবে কারাগারের ভেতরে স্থাপিত ছোট্ট অপরিসর কক্ষের ক্যাংগারু আদালতে তাকে ঘন ঘন হাজির করা হচ্ছে। চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকলেও তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার জিঘাংসা চরিতার্থ করে চলেছে সরকার।”
খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার একবছর পূর্তিতে শনিবার চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা এবং বরিশালের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাসরিনকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান রিজভী।
নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার বিষয়টি ‘চূড়ান্ত নয়’
৩০ ডিসেম্বরের ভোটে অনিয়মের ঘটনায় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা রিজভী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কথা-বার্তা হচ্ছে, এখনও চূড়ান্ত হয়নি। মামলায় যাব কী যাব না, কীভাবে যাব, সব আসন থেকে যাব কি না, এটা আলাপ-আলোচনার মধ্যেই আছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে আমরা গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেব।”
ভোটের পর বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণা দিয়েছিল, তারা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আসনভিত্তিক মামলা করবে।
শনিবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন আসনের প্রায় ৩০/৪০ জন ধানের শীষের প্রার্থীর সঙ্গে স্কাইপে কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর সঙ্গে ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, সেলিম রেজা হাবিব।