প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত নির্বাচনে বিরোধী দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় দুবাই প্রবাসী এক ব্যক্তি ‘লন্ডনে টাকা দিয়ে’ মনোনয়নপত্র জমা দিতে হাজির হয়েছিলেন আবু ধাবিতে বাংলাদেশের দূতাবাসে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ‘আদৌ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি’ মন্তব্য করে এর উদাহরণ দিতে গিয়ে গাল্ফ নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে দুবাই প্রবাসী ওই বাংলাদেশির ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুবাইয়ে থাকে এরকম একজনকে তারা (বিএনপি) নাকি মনোনয়ন দেবে বলেছে। তো সেই ভদ্রলোক মনোনয়নপত্র জমা দিতে হাজির হলেন আমাদের (আবু ধাবি) দূতাবাসে। কিন্তু দূতাবাস তাকে বললো, তারা তো মনোনয়নপত্র নিতে পারে না। তাকে কাগজপত্র জমা দিতে হবে (বাংলাদেশে ) রিটার্নিং অফিসারের কাছে। ”
দূতাবাসের পক্ষ থেকে তখন বিষয়টি ঢাকায় নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ওই ভদ্রলোক খুব হতাশ হয়ে পড়লেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন, “আমি লন্ডনে অমুককে অমুককে এত এত টাকা দিলাম… তারা আমাকে বললো আমি এখানেই (সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাস) মনোনয়নপত্র জামা দিতে পারব।”
এ ঘটনাকে বিরোধী দলের ‘অদক্ষতার নমুনা’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচনটা তারা এভাবেই করেছে।”
গত ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে অভাবনীয় জয় পেয়ে চতুর্থবারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে অনিয়মের যে অভিযোগ বিএনপি করে আসছে, সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল গাল্ফ নিউজ।
জবাবে তিনি বলেন, “তারা (বিএনপি) প্রায় ৯০০ প্রার্থীকে (৩০০ আসনের জন্য) মনোনয়ন দিয়েছে, প্রতি আসনে দুই-তিনজন করে। আপনি যদি এক আসনে দুই-তিন জনকে মনোনয়ন দেন, আপনি কীভাবে জিততে পারবেন?”
শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে গাল্ফ নিউজ লিখেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের শরিকরা ক্ষমতায় আসার পর তাদের কর্মকাণ্ডে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল বলেই ২০০৭ সালে দেশে ‘জরুরি অবস্থা জারির মত পরিস্থিতির’ সৃষ্টি হয়।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর চতুর্দশ আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে (আইডিইএক্স-২০১৯) অংশ নিতে গত রোববার থেকে তিন দিন সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সফরের ফাঁকেই তিনি গাল্ফ নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। কিন্তু প্রথম থেকেই বাংলাদেশ বলে এসেছে যে, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে হবে, বিশ্বকে সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে তারা সেভাবে উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।
“এটা স্পষ্ট, রোহিঙ্গারা কেবল তখনই ফিরে যেতে রাজি হবে, যখন তারা দেখবে যে মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা আর মর্যাদা নিয়ে বাঁচার নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে।”
আর এ জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য যারা দায়ী, সেজন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।