ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ ও কক্সবাজারে মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে চারজন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুরান ঢাকার পার-গেণ্ডারিয়া, খুলনার নিরালা আবাসিক এলাকার দীঘির পাড়, ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড মহল্লা এবং টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া এলাকায় গোলাগুলির এসব ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও বিজিবি কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
ঢাকায় নিহত ব্যক্তির নাম হযরত আলী, বয়স ৩৭। খুলনায় নিহত হয়েছেন নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন বসুপাড়া বাঁশতলা এলাকার আব্দুল হকের ছেলে মাসুদ রানা (৩৫)।
আর ময়মনসিংহে নিহত আব্দুর রশিদ (৫০) ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড মহল্লার আব্দুর রফিকের ছেলে। কক্সবাজারে নিহত মো. বিল্লাল হোসেন (২৫) লক্ষ্মীপুর জেলার সদর লক্ষ্মীপুর উপজেলার জিএমহাট ইউনিয়নের শাকচর এলাকার মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, নিহতরা সবাই মাদক ‘চোরাকারবারি’, তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে।
ঢাকা
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ পার গেণ্ডারিয়া এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে যায়।
“সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলি থামার পর হযরত আলীকে সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।”
তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান ওসি।
তিনি বলেন, হযরত আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতি ও মাদক পাচারের অর্ধশত মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থলেও তার কাছে একটি ছোরা, একটি ককটেল, ১১শ ইয়াবা পাওয়া গেছে।
এ অভিযানে পুলিশের দুই সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জানান ওসি।
খুলনা
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, গভীর রাতে নিরালা আবাসিকের দীঘির পাড় এলাকায় মাদক কেনাবেচার খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযানে যায়।
“পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি চালায়। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে মাসুদ রানা গুলিবিদ্ধ হয়, অন্যরা তখন পালিয়ে যায়।”
গুলিবিদ্ধ মাসুদ রানাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিঠু।
তিনি বলেন, নিহত মাসুদ রানার বিরুদ্ধে মাদক আইনের ‘বেশ কয়েকটি’ মামলা রয়েছে থানায়।
ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, ছোরা, চাপাতি, ১০০ ইয়াবা এবং ৫হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করার কথাও জানিয়েছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
ময়মনসিংহ
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, একদল ‘মাদক চোরাকারবারি’ ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হোমিও মেডিকেল কলেজের মাঠে জড়ো হয়েছে খবর পেয়ে রাত পৌনে ১টার দিকে পুলিশ সেখানে অভিযানে যায়।
“পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা ঢিল ও গুলি ছোড়ে, পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটে গেলে সেখানে গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।”
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রশিদকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান ওসি।
তিনি বলেন, আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান ও ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। এ অভিযানে পুলিশের দুজন কনস্টেবলও আহত হয়েছেন।
কক্সবাজার
বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আছাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের মরিচ্যা এলাকায় যৌথ তল্লাশির সময় বিল্লাল হোসেন নামে একজনকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়।
এরপর জিজ্ঞাসাবাদে ‘তার কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে’ শুক্রবার ভোর রাতে তাকে সঙ্গে নিয়ে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া সীমান্তে ‘মাদকের একটি বড় চালান’ আটকাতে যায় বিজিবির একটি দল।
“বিজিবি সদস্যরা সেখানে পৌঁছে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে মিয়ানমারের দিক থেকে আসা কয়েকজন লোককে দেখতে পেয়ে বিজিবির সদস্যরা থামার সংকেত দেয়। এ সময় তারা বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। বিজিবিও তখন আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে বিল্লাল গুলিবিদ্ধ হয়।”
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিল্লালকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান আছাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৯ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছেন বিজিবি সদস্যরা।