বাণিজ্যিক ব্যবহার ও শিল্প কারখানায় সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, দাম বাড়বে কি বাড়বে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে বিইআরসি।
এলএনজি আমদানির প্রেক্ষাপটে গত বছর গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে গণশুনানির পর ‘সার্বিক বিবেচনায়’ মূল্য না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
তবে ভোট শেষে নতুন সরকার গঠনের পরই ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসিতে গ্যাসের মূল্যহার বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো, যে প্রস্তাবে বিভিন্ন ধরনের গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে এসেছে।
আগামী ১৮ মার্চ থেকে এ বিষয়ে গুণশুনানি করবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এই আলোচনার মধ্যেই শনিবারই ঢাকায় এক কর্মসূচিতে গৃহস্থালিতে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি জানোনো হয়েছে।গ্যাসের দাম বাড়ালে আন্দোলনের হুমকি ।
এদিকে শনিবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন এফইআরবি-এর নৌবিহারে গিয়ে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, “বাণিজ্যিক ও শিল্পে গাসের মূল্য বৃদ্ধি বা সমন্বয় করার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি। সেই ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ যে গ্যাসটা নেয় সেই ক্ষেত্রেও আমরা কিছু প্রস্তাব করেছি সমন্বয় করার জন্য।”
গ্যাসের সঞ্চালন ট্যারিফ ও বিতরণ ব্যয় বাড়ানোর জন্য গত বছর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে আবেদন করে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণকারী কোম্পানিগুলো। সেই প্রেক্ষিতে গত বছরের জুনে কমিশন ছয় দিন শুনানি করে।
পরে ১৬ অক্টোবর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন জানায়, গ্যাসের উৎপাদন, এলএনজি আমদানি, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার পরও সার্বিক বিবেচনায় কমিশন ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যহার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কমিশন ওই দিন ‘প্রাকৃতিক গ্যাস মূল্যহার বণ্টন’ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে, যেখানে বলা হয়, “প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণের উপর গণশুনানি অন্তে ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের বিদ্যমান মূল্যহার অপরিবর্তিত রাখা হল।”
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, “ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম না বাড়লেও গ্যাসের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয়ে প্রায় সতেরশ কোটি টাকা ভর্তুকি বেড়েছে।”
সেটি চ্যালেঞ্জ করেই গত সপ্তাহে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন ক্যাবের আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
তবে এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে ‘ডুয়েল ফুয়েল’চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে তেলের পরিবর্তে গ্যাস সরবরাহ করতে পারলে এমনিতেই দামের সমন্বয় হয়ে যাবে বলে মনে করছেন নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, “যেসব ডুয়েল ফুয়েল আছে সেগুলো বন্ধ করে গ্যাসে চালালে খরচ কম পড়বে। সেখানে আমরা দেখেছি গ্যাস যদি দিতে পারি তাহলে দামের অ্যাডজাস্টমেন্ট হয়ে যাবে।
“তবে এখন এটা সম্পূর্ণ বিইআরসির ওপর নির্ভর করছে। বিইআরসি যদি গণশুনানি করে, সবার সঙ্গে বসে তারা যদি সিদ্ধান্ত দেন যে, তারা মূল্য সমন্বয়ে যাবেন তাহলে সমন্বয় হবে।”
সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসার পর ২০২৩ সালের দিকে বেশ কয়েকটি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হবে।”
অনুষ্ঠানে কয়লা উত্তোলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, ইমিডিয়েট আমাদের উত্তরবঙ্গের কয়লাখনির বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। নিজস্ব কয়লা রেখে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি আমাদের জন্য ব্যয়বহুল হবে।
“আমি মনে করি, সেটা অবশ্যই অবশ্যই পরিবেশের কথা চিন্তা করে, রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনাকে মাথায় রেখে সেই ধরনের চিন্তাভাবনা নেওয়া উচিত। আমরা যাচ্ছি সেদিকেই। কীভাবে সব কিছু সমন্বয় করে একটা ভালো সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা কীভাবে আমাদের নিজেদের কয়লাটা ব্যবহার করতে পারব।”
এফইআরবি চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার ও নির্বাহী পরিচালক সদরুল হাসানসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদকরা মিট দ্যা রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে এফইআরবির ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী।