পরিস্থিতির চাপ প্রচণ্ড। শর্ট বলের তোপ প্রচুর। স্কিলের পরীক্ষা প্রবল। চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক। সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ জবাব দিলেন দুর্দান্ত ব্যাটিং স্কিল ও সাহসিকতায়। অসাধারণ সেঞ্চুরিতে সৌম্য নাম লেখালেন রেকর্ড বইয়ে। মাহমুদউল্লাহ পেরিয়ে গেলেন ফিফটি। নিউ জিল্যান্ড সফরের সম্ভবত সেরা সময়টুকু উপহার দিল বাংলাদেশ।
হ্যামিল্টন টেস্টের চতুর্থ দিন সকালে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। লাঞ্চের সময় রান ৪ উইকেটে ৩১০। এক সেশনেই বাংলাদেশ তুলেছে ২৯ ওভারে ১৩৬ রান!
বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ছুঁয়েছেন সৌম্য। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে অপরাজিত তিনি ১২৩ রানে। ১৩৭ বলের ইনিংসে চার ১৬টি, ছক্কা ৫টি। ৯ চার ও ১ ছক্কায় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ খেলছেন ৬৫ রানে।
চতুর্থ উইকেট দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এসেছে ১৮৪ রান। জুটির রান রেট প্রায় সাড়ে চার!
আগের দিন শেষ বিকেলটা কোনোরকমে পার করেছিলেন দুজন। কিন্তু এ দিন সকাল থেকেই দুজন ছিলেন সাবলীল। দিনের শুরুতেই দারুণ এক পুল শটে মাহমুদউল্লাহ জানিয়ে দেন আত্মবিশ্বাসের বার্তা।
ট্রেন্ট বোল্টকে বাউন্ডারির পর ওই ওভারেই দারুণ হুক শটে ছক্কায় সৌম্য ফিফটি স্পর্শ করেন ৬০ বলে।
নিউ জিল্যান্ড অনুমিতভাবেই শর্ট বল করেছে একের পর এক। নিল ওয়েগনার স্টাম্পের দুপাশ থেকেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাক করেছেন শরীর। এমনকি বোল্টের মতো সুইং বোলারও বেছে নিয়েছেন টানা শর্ট বোলিংয়ের পথ। সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহ জবাব দিয়েছেন দারুণ। কখনও ব্যাট ঢাল করেছেন, কখনও আড়াল করেছেন শরীর। পুল শট খেলেছেন নিয়ন্ত্রিত, হুক শটে করেছেন পাল্টা আক্রমণ।
ওয়েগনারের শর্ট বলে দুই ইনিংসেই শাফল করে খেলে সফল হয়েছিলেন তামিম ইকবাল। সৌম্যও শাফল করে খেলে পেয়েছেন সাফল্য। তার শাফল করে খেলা শট থামাতে এক পর্যায়ে শর্ট ফাইন লেগ রাখা হলো ফিল্ডার। সৌম্য সেটিও সামাল দিয়েছেন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে।
দিনের প্রথম ঘণ্টায় ১৪ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৭৮ রান, যাতে ছিল ১১ চার ও ৩ ছক্কা!
প্রথম ইনিংসে শর্ট বলে ৫ উইকেট নেওয়া ওয়েগনারের ৭ ওভারের স্পেলে আসে ৪৭ রান। বোল্টের ৬ ওভারে এসেছে ৩১।
বাধ্য হয়ে লেগ স্পিনার টড অ্যাস্টলকে আক্রমণে আনেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। মাহমুদউল্লাহ স্বাগত জানান প্রথম ওভারেই দৃষ্টিনন্দন দুটি বাউন্ডারিতে।
বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল সৌম্যর। শেষ পর্যন্ত নতুন রেকর্ড গড়তে না পারলেও ছুঁয়েছেন ঠিকই। ৯৪ বলে করেছেন সেঞ্চুরি। ২০১০ সালে লর্ডসে ৯৪ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটি এতদিন একার ছিল তামিমের।
লাঞ্চের আগে দুজনই আবার সময়ের দাবি মিটিয়ে ছিলেন সাবধানী। লাঞ্চের ঠিক আগের ওভারে অ্যাস্টলের বাজে দুটি বলে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছেন সৌম্য, তবে এর আগের ১০ ওভারে বাউন্ডারি ছিল কেবল ১টি!
দুই বছর আগে বাংলাদেশের নিউ জিল্যান্ড সফরে প্রথম টেস্টে ওয়েলিংটনে পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। এই টেস্টে সেই দুজন নেই, তবে তাদের কীর্তিতে নিশ্চয়ই চোখ থাকবে সৌম্য-মাহমুদউল্লাহর!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৩৪
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৬৩ ওভারে ৭১৫/৬ (ইনিংস ঘোষণা)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৭২ ওভারে ৩১০/৪ (আগের দিন ১৭৪/৪) (সৌম্য ১২৩*, মাহমুদউল্লাহ ৬৫*; বোল্ট ১৭-২-৮৪-২, সাউদি ১৭-২-৭১-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮-১-২০-০, ওয়েগনার ১৯-২-৮৫-১, অ্যাস্টল ১১-৩-৫০-০)