হাতে লাল-সবুজের পতাকা আর কণ্ঠে জয় বাংলা স্লোগানে জনস্রোতে মিশেছিল হাজারো দর্শক-শ্রোতা।
‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ নিয়ে আসে শূন্য ব্যান্ড। এরপর নিজেদের জনপ্রিয় গান ‘তোমার হাসি শ্রবণ হলে’ ও ‘শোন মহাজন’ পরিবেশন করে তারা।
শূন্যর পর মঞ্চে আসে লালন ব্যান্ড। ‘মালকা বানুর দেশেতে আগুন লাগে মনেতে’ গান দিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ কণ্ঠে তোলেন সুমী। এরপর একে একে পরিবেশন করেন ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই ….. মুক্তি চাই’। মঞ্চ ছাড়ার আগে ‘মাগো এখনই সময়’ গানটি পরিবেশন করে লালন।
পড়ন্ত বিকালে দর্শকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কানায় কানায় পূর্ণ হতে থাকে স্টেডিয়াম। এ সময় কনসার্টে উপস্থিত হন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যরা।
স্টেডিয়ামের মাঝখানে তাদের জন্য নির্ধারিত আসনে বসে কনসার্ট উপভোগ করেন তারা। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ অনেকে।
নসরুল হামিদ বলেন, আগামীতে এই আয়োজন আরও বেশি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
সন্ধ্যার আগেই সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই হাজির হন। দর্শক সারিতে দেখা যায় অভিনেত্রী তারিন, অভিনেতা হিল্লোল, অন্তু করিম, উপস্থাপিকা সোনিয়াসহ অনেককে।
অন্তু করিম বলেন, “এত সুন্দর আয়োজনে হাজার হাজার মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে কনসার্ট উপভোগ করছে, দেখতেই ভালো লাগছে। বিশেষ করে তরুণদের জন্য এটি একটি অভাবনীয় সুযোগ।”
কনসার্টে আসা জান্নাতুল মাওয়া নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রতিবারই আমি আসি। বলা চলে, বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকি এমন আয়োজনের। এবারের আয়োজনটা অনেক গোছানো মনে হয়েছে।”
বিকেল ও সন্ধ্যার নামাজের বিরতির ফাঁকে মঞ্চ মাতায় আর্বোভাইরাস। দেশত্মোবোধক গান ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পড়ে ঠেকাই মাথা’ গেয়ে দর্শকদের মন কাড়ে দলটি। ব্যান্ডের নিজস্ব গান ‘হারিয়ে যাও তুমি’ গাওয়ার সময় দর্শকেরা মোবাইলের আলো জ্বেলে স্বাগত জানায় ব্যান্ডটিকে। শেষে ব্যান্ড দলটিরে ড্রামের তালে তালে হাজারো কণ্ঠ গেয়ে ওঠে ‘আয় আয় বন্ধুরা ফিরে আয় …’।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের দিনে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে জয়বাংলা কনসার্টের আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান‘ইয়াংবাংলা।কানায় কানায় পূর্ স্টেডিয়ামে গভীর রাত পর্যন্ত চলা এই কনসাটের অংশ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানাও। তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে ও সিআরআই ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় স্টেডিয়ামের মূল ফটক খুলে দেওয়া হলেও তার আগে থেকেই রোদ উপেক্ষা করে দর্শকদের ভিড় ছিল স্টেডিয়ামের সামনে।
বিকাল নামতে দীর্ঘ লাইন দেখা যায় ফুটপাতজুড়ে। সন্ধ্যা নামার আগেই জনস্রোতের গন্তব্য হয়ে দাঁড়ায় আর্মি স্টেডিয়াম। প্রবেশ পথে জনস্রোত মুহুর্মুহু ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তোলে তরুণরা।
মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চে উঠে চট্টগ্রামভিত্তিক রক ঘরানার ব্যান্ড ‘বে অব বেঙ্গল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ দিয়ে শুরু হয় তাদের পরিবেশনা। শিল্পীর সঙ্গে কণ্ঠ মেলায় শ্রোতারাও।
সন্ধ্যা ৭টায় দেখানো হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। তারপর পারফর্ম করে ক্রিপটিক ফেইট ও নেমেসিস।
এরপর মঞ্চে আসে চিরকুট। ‘যাদুর শহর’, ‘কানামাছি সত্য’, ‘কানামাছি মিথ্যা’সহ বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করে ব্যান্ডটি।
অনুষ্ঠানের সবশেষে মঞ্চে উঠে আর্টসেল। দীর্ঘ নয় বছর পর এবার সাজু-সেজান-লিংকন ত্রয়ী একসঙ্গে মঞ্চে উঠার আগেই ‘আর্টসেল আর্টসেল’ বলে শোর তোলেন দর্শকরা।
লিংকন বলেন, “সাজু-সেজান অল্প সময়ের জন্য দেশে এসেছে। ওরা অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। আমি সাজু-সেজানকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। ফয়সাল ভাই নতুন মেম্বার। তাকেও ধন্যবাদ জানাই।”
নজরুলের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু গান’ পরিবেশন করে আর্টসেল। পরপর চারটি গান গেয়ে মঞ্চ ছাড়ে তারা। আর্টসেলে পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের আয়োজন।
২০১৪ সালে ইয়াং বাংলা আত্মপ্রকাশের পর ২০১৫ সালে প্রথম আয়োজন করা হয় জয় বাংলা কনসার্ট। তরুণদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় এই কনসার্টটি এরপর থেকে প্রতি বছর আয়োজন করে আসছে ইয়াং বাংলা।