যা যা জানা গেছে ক্রাইস্টচার্চের হামলাকারী সম্পর্কে

shooting-gunman

সবুজে ঘেরা শান্ত শহর ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে যে হামলাকারীরা প্রার্থনারত অন্তত ৪৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের একজন তার পরিচয়ের জানান দিয়েছে অস্ত্রের ওপরে লেখা বার্তা আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা তথাকথিত ম্যানিফেস্টোতে।

নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল নূর ও লিনউড মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে ওই হামলা চালানো হয়।

এর মধ্যে আল নূর মসজিদের হামলাকারী পুরো ঘটনা তার হেলমেটে লাগানো ক্যামেরায় ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করেন।

বিবিসি বলছে, ২৮ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম ব্রেন্টন ট্যারেন্ট, তিনি অস্ট্রেলিয়ার একজন নাগরিক।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তাকে বর্ণনা করেছেন ‘উগ্র ডানপন্থি একজন সন্ত্রাসী’ হিসেবে।

আর ওই হামলাকারী তার তথাকথিত ‘ম্যানিফেস্টোতে’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

তবে হোয়াইট হাউজ ক্রাইস্টচার্চের ওই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে, ট্রাম্প নিজেও টুইট করে হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।

নিউজিল্যান্ডের পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যার অভিযোগ দায়েরের কথা জানালেও তিনি ব্রেন্টন ট্যারেন্ট কি না, তা নিশ্চিত করেনি।

একটি মসজিদে হামলার পুরো ঘটনা হেলমেটে লাগানো ক্যামেরায় ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করে হামলাকারী একটি মসজিদে হামলার পুরো ঘটনা হেলমেটে লাগানো ক্যামেরায় ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করে হামলাকারী

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলা চালানোর আগে ট্যারেন্ট তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ৭৩ পৃষ্ঠার একটি কথিত ‘ম্যানিফেস্টো’ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি নিজেকে বর্ণনা করেছেন ভাষায়, সংস্কৃতিতে, রাজনৈতিক বিশ্বাস আর দর্শনে, আত্মপরিচয়ে এবং বংশপরিচয়ে একজন ইউরোপীয় হিসেবে।

হামলার উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে নিজের অভিবাসনবিরোধী ও মুসলিমবিরোধী অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। এক জায়গায় তিনি নিজেকে ‘এথনোন্যাশনালিস্ট এবং ফ্যাসিস্ট’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।

গার্ডিয়ান লিখেছে, ব্রেন্টন ট্যারেন্ট ম্যানিফোস্টোতে নিজের অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছেন নরওয়ের কুখ্যাত খুনি অ্যান্ডার্স বেরিং ব্রেইভিকের কথা বলেছেন।

২০১১ সালের জুলাই মাসে অসলোতে বোমা বিস্ফোরণ এবং উটোয়া দ্বীপে গুলি চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যা করেন। ওই অপরাধে আদালত তাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

ব্রেন্টন ট্যারেন্টের ব্যবহৃত ম্যাগাজিন‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ নাম দিয়ে ওই ম্যানিফোস্টোতে বলা হয়েছে, দুই বছর ধরে তিনি ওই হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। হামলার জন্য নিউ জিল্যান্ড তার প্রথম পছন্দ ছিল না। তবে পরিকল্পনায় নির্ধারিত সময়ের তিন মাস আগেই তিনি ক্রাইস্টচার্চকে হামলার জন্য বেছে নেন।

হামলার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করলে বাড়তি প্রচার পাওয়া যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র তথা রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়বে এমন ভাবনা থেকেই অটোমেটিক রাইফেল ব্যবহারের সিদ্ধান্তের কথা সেখানে লিখেছেন ট্যারেন্ট।

লাইভ ভিডিওতে দেখা গেছে, সেসব অস্ত্র ও ম্যাগাজিনের ওপর সাদা রঙে বেশ কিছু নাম লিখেছেন ট্যারেন্ট। ব্রিটেনের ডেইলি মিরর ওই নামগুলো বিশ্লেষণ করে হামলাকারীর উদ্দেশ্য ও বক্তব্য বোঝার চেষ্টো করেছে।

একটি ম্যাগাজিনের ওপর লেখা ছিল রদারহ্যাম, আলেসান্দ্রে বিসনেত্তা ও লুকা ত্রাইনির জন্য।

আলেসান্দ্রে বিসনেত্তা ২০১৭ সালে কানাডায় একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তার যাবজ্জীবন সাজার রায় হয়।

আর উগ্র ডানপন্থি ইটালীয় নাগরিক লুকা ত্রাইনি ২০১৮ সালে মাসেরাতা শহরে গুলি চালিয়ে আফ্রিকা থেকে আসা ছয় অভিবাসীকে হত্যা করেন।  তার ঘরে পাওয়া গিয়েছিল হিটলারের লেখা মেইন ক্যাম্ফ।

Pin It