ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার দুঃস্বপ্ন ভুলতে ক্রিকেটাররা উন্মুখ ছিলেন পরিবারের কাছে ফিরতে, দেশের নিরাপদ বলয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে। নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দেওয়া মাহমুদউল্লাহ ঢাকায় পৌঁছানোর পর জানান, খুব ভাগ্যবান বলেই ফিরে আসতে পেরেছেন তারা।
শনিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সেখানেই সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানান মাহমুদউল্লাহ।
“আমি যে কিভাবে শুরু করবো…আমরা খুব ভাগ্যবান। আমরা যে এখানে বসে আছি, আপনাদের সবার দোয়ায়। বাবা-মা, পরিবার-পরিজন সবার কাছে ফিরে আসতে পেরেছি।”
শুক্রবারে ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে যাওয়ার পথে যে দৃশ্য দেখেছেন তা এত ঘণ্টা পরেও বর্ণনা করার শক্তি যেন পাচ্ছেন না টেস্ট দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
“এটা বর্ণনা করতে পারবো না আমরা কিসের মধ্যে আছি, আমরা কি দেখেছি। নিউ জিল্যান্ডের মতো দেশে এমন ঘটনা খুবই অপ্রত্যাশিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে, আমাদের দলের সবাই সারারাত ঠিক মতো ঘুমাতেও পারিনি। যখন রুমের মধ্যে ছিলাম তখন বুঝতে পারছিলাম আমরা কতটা ভাগ্যবান। আর সবচেয়ে বড় কথা নিউ জিল্যান্ডের মতো দেশে এরকম ঘটনা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক।”
সেই ঘটনার পর কেবল যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেরার কথাই ভাবছিলেন মাহমুদউল্লাহরা। দেশে ফিরে স্বস্তি ফিরেছে তাদের মনে। ট্রমা কাটিয়ে যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক হয়ে উঠতে সবার সাহায্য চাইলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
“বোর্ডের সঙ্গে যখন আমাদের কথা হলো ওনারা তাড়াতাড়ি আমাদের ফেরার ব্যবস্থা করলেন এজন্য বিসিবিকেও ধন্যবাদ, পাপন ভাইকেও ধন্যবাদ। ওনারা আমাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা সবার কাছে।”
“দোয়া চাই যেন আমাদের এই মানসিক অবস্থা থেকে আমরা তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে পারি। আর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকেও ধন্যবাদ। অবশ্যই বিসিবিকেও ধন্যবাদ।”
ক্রাইস্টচার্চেই শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল নিউ জিল্যান্ড-বাংলাদেশ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট। আগের দিন শুক্রবার জুমার নামাজের আগে ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয় ৪৯ জন।
ওই দুই মসজিদের একটি, আল নূর মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ দল যেখানে অনুশীলন করছিল, সেই হ্যাগলি ওভালের কাছেই আল নূর মসজিদ। অল্পের জন্য দল রক্ষা পায় হামলার শিকার হওয়া থেকে।
মসজিদে হামলার পর হোটেলে ফিরে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ বলেছিলেন, টিম বাসে করে মসজিদের ৫০ গজ কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন তারা। পরে মসজিদ থেকে রক্তাক্ত মানুষদের বেরিয়ে আসতে দেখে তারা থমকে যান।
পরে বাস থেকে নেমে হ্যাগলি পার্কের মাঝ দিয়ে ফিরে আসেন মাঠে। পরে ফেরেন হোটেলে। আর ৩-৪ মিনিট আগে পৌঁছে গেলেও তারা মসজিদের ভেতরে থাকতেন।
ভয়াবহ ওই হামলার পর টেস্ট বাতিল হয়। পরদিনই ঢাকার পথ ধরেন ক্রিকেটাররা।