মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী মিয়া উ শহরে আরাকান আর্মির খোঁজে সেনা অভিযানে গোলাগুলিতে শিশুসহ অন্তত ছয় বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার স্থানীয় বাসিন্দারা এ খবর জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রাখাইনের বৌদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দল আরাকান আর্মির খোঁজে সোমবার রাতে মিয়া উ শহরে সেনাবাহিনীর আনাগোনা বেড়ে যায়।
সেনাবাহিনীর গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয় বলেও জানান স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু মিও ও খাউং সায়াতাও।
তিনি নিজে আহত ছয় ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেন; যাদের মধ্যে সাত বছরের একটি ছোট্ট বালিকাও রয়েছে।
তিন বলেন, “ওই মেয়েটির হাত পোড়া ছিল। কেউ ভয়ে বাইরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিল না। আমি আহতদের সাহায্য করতে বাইরে যাই।
“আমি সেনাবাহিনীর ছয়টি গাড়ি দেখতে পাই, যেগুলো থেকে চারিদিকে গুলি ছোড়া হচ্ছিল।”
মিয়ানমারের ঐতিহ্যবাহী শহর মিয়া উ বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থানগুলোর (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) একটি। সেখানে শতাধিক শতাব্দী প্রাচীন প্যাগোডা রয়েছে, যেগুলো দেখতে সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর শত শত পর্যটক সেখানে ভ্রমণে যায়।
যুক্তরাজ্যের দুই পর্যটক রোববার মিয়া উ শহরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ক্রিস্টোফার ক্যাডি নামে ম্যানচেস্টারের বাসিন্দা ৩২ বছরের ওই যুবক টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। ভিডিওতে তিনি ও তার বাগদত্তা একটি প্যাগোডার ভেতর হাঁটছিলেন।
তাদের বলতে শোনা যায়, “বাইরে কিসের আওয়াজ হচ্ছে ভেবে যদি আপনি অবাক হন তবে বলব, ওটা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রাইফেলের গুলি এবং বিস্ফোরণের শব্দ।”
প্যাগোডায় প্রবেশের পাঁচ মিনিটের মাথায় গোলাগুলি শুরু হয়ে যায় জানিয়ে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “যখন দেখলাম গোলাগুলি চলছেই, আমি ভিডিও করা শুরু করলাম।”
গোলাগুলির কারণে ভয়ে-আতঙ্কে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান মিয়া উ’র বাসিন্দারা।
শউই তুন অং নামে একজন বলেন, “গোলাগুলির কারণে আমি বাইরে বের হওয়ার সাহস পাই না। আমি এখনো বাড়ির দরজা বন্ধ করে রেখেছি। এখানকার পরিস্থিতি ভালো না, বেসামরিক মানুষরা চরম বিপদে আছে।”
গোলাগুলির বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সোমবার রাতে মিয়া উ শহরে নিরাপত্তা টহল শেষে ফেরার পথে সেনাবাহিনীর একটি বহর আরাকান আর্মির হামলার শিকার হয়।
“আরাকান আর্মির জঙ্গিরা বেসামরিক নাগরিকদের বাড়িতে লুকিয়ে আছে।”
এ বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
আরাকান আর্মির মুখপাত্রও ফোন ধরেননি।