আলো নিভিয়ে কালরাত স্মরণ

Black-night-5c992c2fe756d-5c99403e4d01a

ঘন তমসাচ্ছন্ন এক রাত নেমে এসেছিল এ ভূখণ্ডে। মর্মন্তুদ সেই রাতের স্মরণে এক মিনিটের জন্য আঁধার হলো পুরো দেশ। আঁধারবিনাশী চেতনার আলোয় দৃপ্ত স্তব্ধতার এ আয়োজন ছিল একাত্তরের সেই কালরাত স্মরণে। গতকাল সোমবার রাত ৯টা থেকে ৯টা এক মিনিট দেশের অনেক স্থানেই আলো জ্বলেনি। ১৯৭১ সালে এই রাতে অপারেশন সার্চলাইটের অতর্কিত হত্যাযজ্ঞে হতচকিত ঢাকাবাসীর ঘরে ঘরে যে আলো নিভিয়ে দিতে হয়েছিল, তারই স্মরণে দ্বিতীয়বারের মতো ছিল এ প্রতীকী আয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দেশব্যাপী এক মিনিটের এই ‘ব্ল্যাক আউট’ কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে সরকারি উদ্যোগে এবার আলো নেভানো হয়নি। কিছু কিছু স্থানে স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবেই মানুষ আলো নিভিয়ে অংশ নেয় এ কর্মসূচিতে। অনেকে মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কালরাতের কর্মসূচি পালনকালে ব্ল্যাক আউটের সময় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শহীদ মিনারে ৪৮টি মশাল জ্বালিয়ে আলোর মিছিল বের করে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

কালরাত স্মরণে সভাপতি এ. কে. আজাদের নেতৃত্বে মোমবাতি প্রজ্বালন করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।

গণমাধ্যমসহ যেসব প্রতিষ্ঠান রাতে চালু থাকে তারাও এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির নেতৃত্বে সমকাল পরিবার এদিন তাদের কার্যালয়ের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালনের কর্মসূচির আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সন্তান ও নতুন প্রজন্মের একঝাঁক তরুণ-তরুণী মোমবাতি হাতে জাদুঘরের শিখা চিরঅম্লান অঙ্গনে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল রাতে সমকালকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের গ্রাহকদের ব্ল্যাক আউট কর্মসূচির জন্য রাতে এক মিনিট বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছিল। অনেকেই মেনেছেন। আবার কেউ কেউ পালন করেননি। সরকারিভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখলে সিস্টেমে বিপর্যয় দেখা দিত। তাই তারা সেটা করেনি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, জনগণের স্বতঃস্ম্ফূর্ত অংশগ্রহণে সব জায়গায় বিদ্যুৎ বন্ধ না হওয়াটা দুঃখজনক। এটা হওয়া উচিত ছিল। আমাদেরও ব্যর্থতা আছে, কারণ আমরা তাদের সেভাবে জানাতে পারেনি। আরও বেশি প্রচার করতে পারলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে এ কর্মসূচি সফল করা সম্ভব হতো।

গতকাল সারাদেশে পালিত হয়েছে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’। তাই সারাদেশে সব আয়োজনেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ দেখা গেছে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধোত্তর নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছিল ব্যাপক উদ্দীপনা ও স্বতঃস্ম্ফূর্ততা। দিনভর বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের কর্মসূচিতে আলোক প্রজ্বালনের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ ছাড়াও ছিল আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গীতিনাট্য, কবিতা আবৃত্তি, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্থাপনাশিল্পের প্রদর্শন প্রভৃতি। এসব আয়োজন থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিও উঠেছে অযুতকণ্ঠে। সে সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ়প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন সবাই।

Pin It