বিক্ষিপ্ত সংঘাত-সংঘর্ষ, প্রাণহানি, ইভিএম ভাংচুরের মতো নানা অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২০টি রাজ্যের ৯১ আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়। এদিন বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। ভোটগ্রহণ চলাকালেই এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেন, নির্বাচনে আবার ‘মোদিঝড়’ দেখা যাচ্ছে। খবর বিবিসি, এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
ভারতের এই সপ্তদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর দিনই পশ্চিমবঙ্গের দিনহাটায় চার ঘণ্টাতেই নির্বাচন কমিশনে ৪৬২টি অভিযোগ এসেছে। এ রাজ্যে দুটি আসনে বৃহস্পতিবার ভোট হয়। পশ্চিমবঙ্গে সকালে ভোট চলার মধ্যেই রাজ্যের দিনহাটায় একটি বুথে ঢুকে ইভিএম, ভিভিপ্যাট ভাংচুরের ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ঘটনায় বিজেপি-তৃণমূল একে অন্যকে দোষারোপ করেছে।
এদিকে প্রথম ধাপের ভোটেই রক্ত ঝরেছে অন্ধ্রপ্রদেশে। রাজ্যের তাডড়িপাত্রী কেন্দ্রে ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক টিডিপি নেতা নিহত হয়। ঘটনাটিকে ঘিরে অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর উত্তাল হয়ে ওঠে।
ছত্তিশগড়ের বস্তারেও ভোটের দিন সকালে মাওবাদী-সেনা গোলাগুলি হয়েছে। নারায়ণপুরে আইটিবিপি জওয়ানদের একটি কনভয় ভোটকেন্দ্রের দিকে যাওয়ার সময় হামলা চালায় মাওবাদীরা। পাল্টা গুলি চালিয়ে মাওবাদীদের দলটিকে হঠিয়ে দেন জওয়ানরা।
উত্তরপ্রদেশের কৈরানায় ভুয়া ভোটারদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালিয়েছে বিএসএফ। ২০-২৫ জন ভুয়া ভোটার ভোটকেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। তাদের কারও কাছে পরিচয়পত্র ছিল না। তারা আক্রমণাত্মক আচরণ করায় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালান ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিএসএফ জওয়ানরা। কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
উত্তরপ্রদেশের গৌতম বুদ্ধনগরের একটি বুথে পুলিশ কর্মীদের ‘নমো (নরেন্দ্র মোদি) ফুডস’ লেখা জলখাবারের প্যাকেট বিলির অভিযোগ উঠেছে। বলা হয়েছে, বিজেপির পক্ষ থেকেই ওই খাবারের প্যাকেট বিলি করা হয়েছে পুলিশ কর্মীদের। গেরুয়া রঙের প্যাকেটের গায়ে লেখা ছিল ‘নমো ফুডস’।
এদিকে বৃহস্পতিবার আসামের শিলচরের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘হাওয়া কোনদিকে বইছে, তা আপনারা নিজেরাই একটু চোখ-কান খোলা রাখলে বুঝতে পারবেন। দেশের কয়েকটি অংশে প্রথম দফার নির্বাচনের প্রবণতা থৈকে আমরা যা বুঝতে পারছি, তা হলো, ফের আরেকবার বিশাল মোদিঝড় আসতে চলেছে। সেই ছবিটি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।’
এদিকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার দল। এতে প্রশ্ন উঠেছে যে, ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর পর কি এবার কংগ্রেসের প্রধান রাহুল গান্ধীর ওপর প্রাণঘাতী আক্রমণ নেমে আসতে চলেছে? বৃহস্পতিবার আমেথি থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসের দাবি, তখন বন্দুকের নিশানায় রাখা হয়েছিল তাকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে কংগ্রেস জানিয়েছে, মিডিয়ার সঙ্গে রাহুল যখন কথা বলছিলেন তখন একটি লেজার তার মাথার দিকে লক্ষ্য করে রাখা ছিল। দলের অনুমান, স্নাইপার রাইফেলের লেজার সেটি।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, বিজেপির আমলে ভারতের স্বাধীনতা বিপন্ন। বৃহস্পতিবার দার্জিলিংয়ে একটি নির্বাচনী জনসভা থেকে এমনই অভিযোগ করেন তিনি।
- ভোট দিলেন বিশ্বের সবচেয়ে খর্বকায় নারী
সাত দফার নির্বাচনের প্রথম দফায় গতকাল অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, জম্মু ও কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, উড়িষ্যা, সিকিম, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং লাক্ষাদ্বীপে ভোট গ্রহণ করা হয়।
ভারতজুড়ে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ হবে ১৮ এপ্রিল। এরপর ২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফা, ২৯ এপ্রিল চতুর্থ দফা, ৬ মে পঞ্চম, ১২ মে ষষ্ঠ দফা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ১৯ মে শেষ হবে সাত দফার ভোটগ্রহণ। ২৩ মে ভোট গণনার পর ফল ঘোষণা করবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।