বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা কেন এই হিংসা, প্রতিহিংসা, ক্ষোভ, হত্যাযজ্ঞের মধ্যে নেমে পড়েছি? কেন আমাদের রাফিকে (নুসরাত জাহান) এভাবে নির্যাতিত হয়ে মরতে হয়? কেন? আমি জানি না। এই উত্তর আমাদের রাজনীতিবিদদেরই দেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হয়েছি, সুন্দর বাংলাদেশ দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ব্যর্থ হয়েছি তোমাদের নিরাপত্তা দিতে।’
আজ বুধবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন। জিয়া শিশু একাডেমি আয়োজিত দশম জাতীয় শিশুশিল্পী প্রতিযোগিতা ‘শাপলাকুঁড়ি’ উপলক্ষে এক পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার উত্তর দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’ এ সময় শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তারপরও আমি স্বপ্ন দেখি। আমি স্বপ্ন দেখি, এই বাংলাদেশ একটা সুন্দর ও সমৃদ্ধির দেশ হবে। আমি স্বপ্ন দেখি, এই শিশুরা নির্ভয়ে বিচরণ করবে। কোথায়ও তাদের ওপরে কখনো আঘাত আসবে না। আমাদের মেয়েদের পুড়িয়ে মারবে না। এই স্বপ্নগুলো আমরা দেখি।’
নিজের শৈশবের স্মৃতিচারণা করে শিশুদের উদ্দেশে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিমুহূর্তে আমরা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। যন্ত্রের কাছে চলে যাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তে আমরা প্রযুক্তির কাছে হেরে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালে একটি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। কেন করেছিলাম? আমরা সবাই বইয়ে পড়ি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। তাই না? কিন্তু সেই স্বাধীনতাযুদ্ধ কেন করেছিলাম? তখন আমরা যে দেশে বাস করছিলাম, সেই দেশটা নিজেদের দেশ বলে মনে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, কেউ বুঝি আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে। আমরা নিশ্বাস নিতে পারতাম না। এটা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চেয়েছিলাম, সে কারণে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম।’
বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁরা অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু যে মানুষটি স্বাধীনতা যুদ্ধের “ঘোষণা” দিয়েছিলেন এবং নিজেই অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই মানুষটির নামেই জিয়া শিশু একাডেমি। তোমরা নামটি শুনেছ। কিন্তু তোমরা জানো না। কারণ, তোমাদের বই থেকে আস্তে আস্তে নামটি মুছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নামটি বারবার আমরা বলতে চাই। কারণ, যে মানুষটি স্বাধীন–মুক্ত বাতাসের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, এই কথাটি আজকে ভুলে গেলে চলবে না।’
পরে আবৃত্তি, অভিনয়, সংগীত, নৃত্যের ১৩টি একক ও তিনটি দলীয় বিষয়ে ক-খ বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানপ্রাপ্ত ৮৫ জন খুদে শিল্পীকে ‘শাপলাকুঁড়ি-২০১৮’ পুরস্কার ও সনদ প্রদান করা হয়। পরে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীরা মনোজ্ঞ সংগীত পরিবেশন করে।
আয়োজক সংগঠনের মহাপরিচালক এম হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ, ১০ম জাতীয় শিশুশিল্পী প্রতিযোগিতার বিচারক চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদ, অভিনেত্রী রিনা খান, শিল্পী শফি মণ্ডল, শিল্পী জিনাত রেহানা প্রমুখ বক্তব্য দেন।