ড. কামাল কথা বলবেন ক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে

Untitled-116-5cc4b060c9152-5cc4c88c07f33

গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে সিলেট-২ আসনের এমপি মোকাব্বির খানের উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। শিগগিরই দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়ায় মোকাব্বিরকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর জন্য ১০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শোকজ নোটিশও করা হয়েছে তাকে।

গত শুক্রবার রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে মোকাব্বির খানের অংশগ্রহণ ও মূল মঞ্চে স্থান নেওয়ায় দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু অনুষ্ঠানে আসেননি। তার মতো অনেক নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাজ ছুড়ে ফেলে কাউন্সিলস্থল ত্যাগ করেন। গণফোরাম থেকে অনেকে পদত্যাগেরও ঘোষণা দেন।

দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোকাব্বির খানকে শোকজ নোটিশ করা হয়। সেই নোটিশে দলের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করেন। তবে এই নোটিশের বিষয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা জানান, ওই নোটিশ প্রস্তুত করা হলেও মোকাব্বির খানকে দেওয়া হয়নি। ড. কামাল হোসেন নিজে দ্বৈতনীতি অবলম্বন করে তাকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তিনি একদিকে শপথ না নেওয়ার জন্য ঘোষণা দিলেও অন্যদিকে তার পরামর্শেই তাদের দু’জন এমপি শপথ  নিয়েছেন।

দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, মোকাব্বির খানকে নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য তারা কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। তাকে কেউ আমন্ত্রণও জানায়নি। তিনি নিজে থেকে অনুষ্ঠানে আসেন এবং মঞ্চে বসেন। তাকে মঞ্চ থেকে নামানোর জন্য দলের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক খান সিদ্দিকুর রহমানসহ আরও একজন কেন্দ্রীয় নেতা চেষ্টা করেন। তবে তিনি তা করতে অস্বীকার করেন। জোর করে মঞ্চ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হলে সাধারণ নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়তে পারেন আশঙ্কায় তাও করতে পারছিলেন না নেতারা। কাউন্সিলের শৃঙ্খলার স্বার্থেই তা করা হয়নি বলেও জানান তারা।

তাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতার পর দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন তার চেম্বার ও বাসায় মোকাব্বির খানকে পুরোপুরি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে মোকাব্বির খানকে শোকজ নোটিশও পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রশমিত করতেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার মোস্তফা মহসিন মন্টুর বাসায় যান দলের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। সেখানে তিনি মোকাব্বির খানকে শোকজ করার নোটিশে মন্টুর স্বাক্ষর নেন। ২০ এপ্রিলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের তারিখ দিয়েই ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করা হয়। নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য ১০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে গতকালই মোকাব্বির খানের উত্তরার বাসভবন ও তার স্থায়ী ঠিকানায় তা পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। ওই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে বহিস্কারের পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির শীর্ষ নেতাদের।

নোটিশে বলা হয়, গত ১২ জানুয়ারি গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে ২ এপ্রিল শপথ নিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী এবং দলের সিদ্ধান্তের পরিপন্থি। এর বাইরে দলের সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি ছাড়া দলীয় প্যাডে নিজে স্বাক্ষর করে শপথ নিয়েছেন, যা সংগঠনের শৃঙ্খলার পরিপন্থি। এ অবস্থায় দলের গঠনতন্ত্রের ৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা চিঠি পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে জানানো হয়েছে।

দলটির কয়েকজন নেতা জানান, রাজনীতির বাইরেও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মোকাব্বির খানের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। ওই সম্পর্কের কারণে অনেক সময় কামাল হোসেন তাকে কিছু বলতে পারতেন না। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোকাব্বির খান তাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন। পরিস্থিতি এত জটিল হয়ে উঠবে, তা কামাল হোসেনও অনুমান করতে পারেননি।

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সমকালকে বলেন, মোকাব্বির খানকে তাদের বিশেষ কাউন্সিলে কেউ আমন্ত্রণ করেনি। তিনি নিজে থেকেই এসেছেন। তবে তার শপথ নেওয়ার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তার উপস্থিতির জন্য যেসব নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়েছেন, অভিমান করেছেন, তাদের সেই রাগ-ক্ষোভ দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান তিনি।

দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু জানান, তিনি এখনও অসুস্থ। কাউন্সিলের পর তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক জানান, তার সঙ্গে তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করেছেন। এর বাইরে অন্য কেউ করেননি।

Pin It