তালিকা হচ্ছে ‘দুর্নীতিবাজ’ ঠিকাদারদের

Untitled-117-5ccdf5621846d

মানসম্মতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য স্বচ্ছ ও দক্ষ ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত পাঁচ বছরে মানহীনভাবে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। সংশ্নিষ্ট সূত্র বলছে, মূলত যেসব ঠিকাদার দুর্নীতিবাজ ও অদক্ষ তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। এর অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে (২০১৪-২০১৮) যেসব উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, সেগুলোর ঠিকাদারদের বিস্তারিত তথ্য নিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সম্প্রতি সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও  সংস্থায় চিঠি দিয়ে গত পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন হয়েছে এমন সব প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক জাজরীন নাহার স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রত্যেকটি প্রকল্পের নাম, ব্যয়, বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং প্রকল্পটি কোন ঠিকাদার বাস্তবায়ন করেছেন, সেই তথ্য দিতে বলা হয়েছে। ওই ঠিকাদার উন্মুক্ত, সরাসরি না সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে কাজ পেয়েছিলেন তাও জানাতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের গুণগত মান বিষয়ে বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থার প্রধানদের মতামত দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম সমকালকে বলেন, এটি সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কারণ এখন প্রকল্পের মান নিয়ে সুশীল সমাজ ও সরকারের ভেতরেই প্রশ্ন উঠছে। এ জন্য দেখা দরকার কারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। একই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বারবার প্রকল্প পাচ্ছে কি-না দেখা দরকার। তাদের অন্য কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা আছে কি-না সেটা জানাও জরুরি। পাশাপাশি যেসব ঠিকাদারের প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তাদের চিহ্নিত করা দরকার। এ জন্য সব পক্ষ থেকে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোর নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে পর্যাপ্ত জনবল না থাকা, যথাযথভাবে প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়া, দরপত্র আহ্বানে দেরি করা, বারবার দরপত্র, মামলা, ডিপিপিপি সংশোধন, একই ব্যক্তিকে একাধিক প্রকল্পের পিডি করাসহ বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে প্রকল্পে ঠিকাদাররা নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। বিভিন্ন অজুহাতে সময়মতো কাজ শেষ করে না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এতে সময় বেশি লাগে। অনেক প্রকল্পে এ কারণে ব্যয় বেড়ে যায়। এ ছাড়া রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার, প্রকল্প শেষ হওয়ার পরপরই ভবন বা স্থাপনা ভেঙে পড়া, এমনকি চলমান অবস্থায় ভেঙে পড়ার ঘটনাও আছে। কিন্তু সরকার টেকসই উন্নয়ন চায়। যে কারণে এসব খাতে দুর্নীতি বন্ধ করা সরকারের লক্ষ্য।

সূত্র জানায়, মানহীনভাবে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে বা সময়মতো বাস্তবায়ন হয়নি- ওই সব প্রকল্পের ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি-না সেটাও দেখা হবে। কীভাবে কাজ পেয়েছে তাও বিশ্নেষণ করা হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উন্নয়ন সহায়তা থোকসহ এডিপিতে ১৫২১ প্রকল্প ছিল। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৬৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে ১৪৫৭টি প্রকল্প ছিল, যাতে বরাদ্দ ছিল ৭৭ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৫৫৭টি প্রকল্পে ৯৩ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রকল্প ছিল ১৭১০টি, আর বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপিতে মোট প্রকল্প ছিল ১৭২৩টি। এসব প্রকল্পে এক লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

এডিপির প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে বিনিয়োগ প্রকল্প। এ ছাড়া কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, জেডিসিএফ ও উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্প থাকে। ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পদের মাধ্যমে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। কোনো বছরই এডিপির পুরোটা বাস্তবায়ন হয় না। এমনকি সংশোধিত এডিপিও বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।

Pin It