সিটিটিসির সহকারী কমিশনার অহিদুজ্জামান নূর বলেন, মুতাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখনও অনেক বিষয়ে মুখ খুলছে না সে। সম্প্রতি রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে সিটিটিসির প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া বাংলাদেশি এফটিএফদের বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা যাতে দেশে ফিরতে না পারে, সে জন্য ইমিগ্রেশনে তালিকাও দেওয়া হয়। এর পরও কেউ দেশে ফেরার চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুতাজের পাসপোর্ট নম্বর বিই-০০৪৯৬৯৬। গ্রেফতারের পর তার কাছে সৌদি আরবের একটি আইডি কার্ড, গাড়িচালকের লাইসেন্স, মোবাইল ফোনসেট, কথিত আইএস ম্যাগাজিনসহ আরও কিছু নথিপত্র পাওয়া যায়। সৌদি আরবে তার কাজের সনদের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তুরস্ক থেকে আর সৌদি আরবে ফেরার ইচ্ছা ছিল না তার। তাই এই সনদের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো উদ্যোগও নেয়নি সে। তার ছক ছিল তুরস্ক থেকে ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়ার।
এখনও মুতাজের সঙ্গে কোনো বাংলাদেশির যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সিরিয়ায় গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার তথ্য থাকায় এ বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক থেকে কারা দেশে ফিরেছে, তাদের সবার তথ্য বিশ্নেষণ করেছে পুলিশ। এরপর মুতাজকে শনাক্তের পর তাকে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে।
সিটিটিসির এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, আরবি ছাড়া অন্য কোনো ভাষা না জানায় মুতাজের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া দুস্কর। আরবি জানা একজনের সহায়তায় মুতাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিরিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করার বিষয়টি এখনও অস্বীকার করছে সে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, সিরিয়ায় গিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল সে।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সিরিয়ায় যারা আইএসের হয়ে যুদ্ধ করেছে, একাধিক বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখে। মুতাজও এমন একটি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে ছিল। তার ব্যবহূত ল্যাপটপ এবং ফোনসেটও সেই গোয়েন্দা সংস্থা তাদের হেফাজতে নিয়েছে।
পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, সৌদিতে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠলেও মুতাজের পাসপোর্ট বাংলাদেশের। সৌদি আরবে থেকেই এটি সে সংগ্রহ করে। ২০১৬ সালে প্রথম সৌদি আরবের বাইরে পা রাখে মুতাজ। ওই বছর সে তুরস্কে গিয়ে কিছুদিন পর আবার সৌদি আরবে ফিরে আসে। ২০১৭ সালে আবারও তুরস্কে গিয়ে সৌদি আরবে ফিরে আসে মুতাজ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে মুতাজ তুরস্ক হয়ে অবৈধভাবে যায় সিরিয়ায়। কিছুদিন যুদ্ধ করে আবার তুরস্কে এফটিএফের আস্তানায় অবস্থান নেয়। সেখানে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করেছে এমন অনেক সিরিয়া এবং সোমালিয়ার নাগরিকও ছিল। মুতাজের মোবাইল নম্বরের কললিস্টের সূত্র ধরে তার পরিচিতজনদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে।
দশ ভাই এক বোন মুতাজের। বাবা মারা যাওয়ার পর সে কিছুদিন জেদ্দায় বড় ভাইয়ের কাপড়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। পরে চাকরি নেয় অন্য প্রতিষ্ঠানে। এইচএসসি সমমানের লেখাপড়া করেছে সে।
জন্ম সৌদি আরবের জেদ্দায়। বাংলাদেশে কখনই আসা হয়নি মুতাজ আবদুল মজিদ কফিল উদ্দিন ব্যাপারীর (২৫)। যদিও বাবা কফিল উদ্দিন ব্যাপারীর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের সখীপুরে। তবে বসবাস করতেন মূলত সৌদিতে। একাধিক বিয়েও করেন তিনি। মুতাজের মা পাকিস্তানি নাগরিক হালিমা। কেবল দু-চারটি বাংলা ও ইংরেজি শব্দ জানে আরবি ভাষাভাষী মুতাজ। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে এই মুতাজ সৌদি আরব থেকে গিয়েছিল সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে। একপর্যায়ে সে অবস্থান করে তুরস্কের ফরেন টেররিস্ট ফাইটারদের (এফটিএফ) আস্তানায়- যারা সিরিয়া ও ইরাকে যুদ্ধ করেছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হয়ে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামে। দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠে সে। সেখান থেকে গত রোববার তাকে গ্রেফতারের পর সোমবার চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) মুতাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।