মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সেই প্রক্রিয়ার অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাকে নন অপারেশনাল ইউনিটে সংযুক্ত করা হতে পারে। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র শনিবার সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে নুসরাত হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী থানার দুই এসআইকে শনিবার সাসপেন্ড করা হয়। তারা হলেন- এসআই মো. ইউসুফ ও মো. ইকবাল আহাম্মদ। ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জে ও ইকবালকে খাগড়াছড়িতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে নুসরাতের ঘটনায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের সংশোধিত বিধিমালা (শৃঙ্খলা ও আপিল) অনুযায়ী বুধবার তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয় পুলিশ সদর দপ্তর।
সোনাগাজীর ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তর তদন্তের জন্য যে কমিটি গঠন করেছিল সেই প্রতিবেদনে এসপি, ওসিসহ চার জনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়। ওসি ও দুই এসআই’র বরখাস্তের মধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হলো। এর আগে ঘটনার পর ওসিকে নামমাত্র প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ওসি এবং দুই এসআইকে সাসপেন্ড করার মধ্য দিয়ে তারা এখন বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন। যাদের অন্য যেসব ইউনিটে সংযুক্ত করা হয় তা শাস্তির অংশ। এটা কোনও বদলি নয়। সংযুক্তিকালে তাদের কোনো দায়িত্ব প্রদান করা হয় না।
২৭ মার্চ এক ছাত্রীকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিপীড়ন করেছে- এটা জানার পর সোনাগাজী থানার এসআই ইকবাল হোসেন মাদ্রাসায় অধ্যক্ষর কক্ষে যান। ওই সময় নুসরাত ও তার বান্ধবীদের সেখানে ডেকে নেওয়া হয়। সিরাজকে দেখে সেখানে অচেতন হয়ে পড়েন নুসরাত। তখন এসআই ইকবাল নুসরাতকে বলেন, ‘এই মেয়ে ঢং করো না। তোমার সঙ্গে এমন কিছু হয়নি যে বেহুশ হয়ে যেতে হবে। এগুলো আমরা জানি।’
অভিযোগ আছে- শুরু থেকেই এসপি- এডিএম এবং ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার অপচেষ্টা চালায়। তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজাতে চেয়েছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ওসি জানিয়েছিল, নুসরাতের ঘটনা আত্মহত্যা হতে পারে। এসপিও শুরু থেকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হন। এ ঘটনার তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি এসএম রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সম্রাট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।