অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ব্যবসায়ীরা যেভাবে চাচ্ছেন, সে অনুযায়ী নতুন ভ্যাট আইন সংশোধন করা হচ্ছে। আগামী জুলাই থেকে এ আইন বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
শনিবার সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখনও ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হয়নি, কাজ শুরু না করে কীভাবে বলব প্রস্তুতি নেই। বাস্তবায়নের পর বোঝা যাবে প্রস্তুতি আছে কি নেই।
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, বিশ্বের কোনো দেশ রাতারাতি ভ্যাট আইন পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আগে ভ্যাটের সিঙ্গেল বা একক রেট করা হয়। তা নিয়ে আপত্তি ছিল ব্যবসায়ীদের। এখন তাদের মতামত নিয়ে একাধিক রেট করা হচ্ছে।
নতুন বাজেটকে সামনে রেখে এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। তবে ওই বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের কিছু বলেননি তিনি। এনবিআরের ভ্যাট, কাস্টম ও আয়কর নীতি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী।
এ সময় এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সিনিয়র সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী বাজেটে ভ্যাট, আমদানি ও আয়কর খাতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে সে বিষয়ে এনবিআরকে দিকনির্দেশনা দেন মন্ত্রী। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিডিপির হিসাব নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছে, সেগুলোর সমালোচনার জবাব দেন তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক এক বিশ্নেষণে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনার চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অংশীদার হবে এমন প্রভাবশালী ২০ দেশের তালিকায় থাকবে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ফিজিতে এশিয়ান ডেপেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভূয়সী প্রশংসা করে এডিবি বলেছে, ‘বাংলাদেশ একটি চমকপদ’ দেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে এবার উচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আভাস দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশ সম্পর্কে দায়িত্ব নিয়েই কথা বলেছে। তাদের হিসাব তো আমরা করিনি। যারা সমালোচনা করেছে, তাদের বলব বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমি ব্যাখা দিতে চাই না। তাদের কাজ (দেশীয় গবেষণা সংস্থা) তারা করছে, আমার কাজ আমি করছি।’
গবেষণা সংস্থা ‘সানেম’ সম্প্রতি বলেছে, বাংলাদেশের এখনকার যে উচ্চপ্রবৃদ্ধি হচ্ছে তার সঙ্গে অর্থনীতির কিছু সূচক সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তারা জিডিপির প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপরোক্ত মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ধারণার ভিত্তিতে কোনো কিছু বলা ঠিক নয়। তথ্য-প্রমাণ দিয়ে বলা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো গোলটেবিলের আয়োজন করলে সেখানে এর জবাব দেবেন বলে জানান মন্ত্রী। বাংলাদেশে কর-জিডিপির অনুপাত যে কম তা অকপটে স্বীকার করেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানান তিনি। কারণ কর আহরণ বাড়াতে নানামুখী সংস্কার নেওয়া হয়েছে। আগামী বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অর্থবছরের শেষে বিশেষ করে মে ও জুনে বেশি রাজস্ব আহরণ হয়। ফলে এবার রাজস্ব আয়ের সংশোধিত যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জিত হবে বলে অর্থমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন তিনি।