ভ্যাট আইন কার্যকর নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচে গেছে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার মুখে ভ্যাট আইন এত দিন ধরে কার্যকার না করতে পারার মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট দেওয়ার আগে মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর এই দাবি করেন তিনি।
কয়েক দফায় পেছানোর পর নতুন অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
সব পণ্য বিক্রির উপর অভিন্ন হারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিতে ২০১২ সালে আইনটি করেছিল সরকার। ২০১৬ সালের ১ জুলাই তা কার্যকরের পরিকল্পনাও ছিল।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক বছর পিছিয়ে ২০১৭ সাল থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
কিন্তু ২০১৭ সালে এসে আবার বিরোধিতার মুখে পড়ে ভ্যাট আইন; তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আইনের কার্যকারিতা আরও দুই বছর পিছিয়ে দেন।
আইনটি কার্যকরের সময় ঘনিয়ে আসার পরও তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আলোচনা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়ে আসছিল ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী নেতারা বলছিলেন, কোন পণ্যে কত শতাংশ ভ্যাট বসবে, তা নিয়ে তাদের অস্পষ্টতা কাটছে না।
অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এনবিআর কর্মকর্তাদের পাশে রেখে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যবসায়ীদের আর কোনো ‘আপত্তি নেই’। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কিছুটা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছিল; সেটি পুরোপুরি ‘কেটে গেছে’।
বৈঠকে থাকা এফবিসিসিআইর বিদায়ী সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, “দেশের উন্নয়নে আমরা অর্থমন্ত্রীর পাশে আছি। উনি আমাদের বলেছেন, কোনো পণ্যে ট্যাক্স বৃদ্ধি পাবে না। তবে ট্যাক্সের আওতা আরও বাড়বে। ভ্যাটের কারণে পণ্যের দাম বাড়ুক, এটা অর্থমন্ত্র্যী চান না।”
অর্থমন্ত্রীও বলেন, “আসছে বাজেটে কোনো পণ্যে ভ্যাটের হার বাড়বে না বরং কমবে।”
সব পণ্যের জন্য একই হারে ভ্যাট নির্ধারণ না করার পক্ষপাতি ছিলেন আগের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছিলেন, ভ্যাটের হার হবে কয়েক স্তরের, আর এ বিষয়ে ২০১৯ সালে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
পণ্য ভেদে ভ্যাটের হারের ধরন কী হবে- বাজেটের আগে তা খোলাসা করতে চাননি মুহিতের উত্তরসূরি মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, আইনগত কারণে ভ্যাট আইনের সব তথ্য এখন প্রকাশ সম্ভব নয়।
“কোন পণ্যে কী হারে ভ্যাট বসবে, ব্যবসায়ীরা তা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে। আমরা তাদেরকে বলেছি, বিদ্যমান যেসব আইন আছে, তাতে বাজেট ঘোষণার আগ পর্যন্ত কোন পণ্যে কত শতাংশ হারে ভ্যাট বসবে, সে তথ্য প্রকাশের কোনো নিয়ম নেই। বাজেট ঘোষণার আগে এসব তথ্য প্রকাশ করা যায় না।”
তবে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করতে পেরেছেন দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং ব্যবসায়ীবান্ধব আইন হবে। সেটা বোঝানোর পর ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত হয়েছেন। যার ফলে এনবিআরের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আর কোনো দূরত্ব নেই।”
আগামী ১ জুলাই থেকেই ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীরা ‘সর্বাত্বক সহযোগিতা’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
“সব কিছু জনবান্ধব আর দেশের অগ্রগতির লক্ষ্যে সুন্দরভাবে করা হবে। ভ্যাট দিতে কেউ কষ্ট পাবে না, সব কিছুই করা হবে উইন-উইন অবস্থানে।”
ভ্যাট আইনের বিরোধিতায় মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দোকানিরাই সোচ্চার ছিলেন, তারা সড়কেও নেমেছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন কার্যকরের পর যদি কোথাও কোনো সীমাবদ্ধতা ধররা পড়ে, তবে তা সময়োপযোগী করার পদক্ষেপ নেবে সরকার।
এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা থাকলে তা পরবর্তীতে সংশোধন ও পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কাম্য।”
তিনি বলেন, ভ্যাট আইন সংস্কারে এফবিসিসিআই ও এনবিআরের যৌথ উদ্যোগে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে, যারা ভ্যাট আইন সংস্কারে ভবিষ্যতে কাজ করবে।
ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এই বৈঠকে এফবিসিসিআই নতুন সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহ-সভাপতি বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।