বগুড়ায় বিএনপির ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেছেন দলটির মহাসচিব– এমন খবরের ছড়িয়ে পড়ার পর এই ‘কমিটি’ বাতিলের দাবিতে জেলা বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা বুধবার রাতে দলটির জেলা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে আহ্বায়ক এবং দলের বিলুপ্ত জেলা কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম ও একই কমিটির সহ-সভাপতি ফজলুল বারী তালুকদার বেলালকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কেন্দ্র থেকে বুধবার বগুড়া বিএনপির ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তা অনুমোদন করেন।
বগুড়া বিএনপি ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আহ্বায়ক কমিটি গঠনের এ খবর বুধবার সন্ধ্যায় ছড়িয়ে পড়লে দলের বিলুপ্ত জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামের অনুসারী নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ইফতারের পর রাত সাড়ে ৭টার দিকে তারা শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করে। এরপর বিএনপির দলীয় পদবী স্থগিত করা শাহ্ মেহেদী হাসান হিমুর নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী রাত পৌনে ৮টার দিকে জলো বিএনপির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় সেখানে সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। আধা ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভকারীরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান।
দলের পুনর্গঠন নিয়ে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ মে বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ওইদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিগগিরই আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথাও জানানো হয়।
বগুড়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ বিএনপির পুনর্গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আভ্যন্তরীণ বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধের জের ধরে গত ২৯ এপ্রিল দুই গ্রুপে পাল্টাপাল্টি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এক পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন দলের তৎকালীন জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং অপর পক্ষে ছিলেন সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান। তার আগে গত ২৫ এপ্রিল ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়া বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আয়োজিত সভায় সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় তৎকালীন দলের জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস এবং প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাহ্ মেহেদী হাসান হিমুর পদ-পদবী স্থগিত করা হয়। এর প্রতিবাদে ওইদিন রাতেই দলের জেলা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এবং পরদিন সাবেক সাংসদ সিরাজের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। অবশ্য ২৬ এপ্রিল রাতে আবার দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া হয়।
বুধবার ঘোষিত নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বগুড়ায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এক পক্ষ একে স্বাগত জানালেও আরেক পক্ষ নীরব রয়েছেন। নতুন আহ্বায়ক কমিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কনভেনিং কোনো কমিটি হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে দলের পক্ষ থেকে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। আমরা কেবল ফেসবুকেই দেখছি। যদি কোনো কমিটি হয়ে থাকে তাহলে সেটি কেমন পারফরম্যান্স করবে সেটি সময়ই বলে দেবে।’
তবে বিলুপ্ত জেলা কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি আলী আজগর হেনা বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাদেরকে যোগ্য মনে করেছেন তাদের দিয়েই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন। আমরা মনে করি এই কমিটি খুব দ্রুততার সঙ্গে তৃণমূল থেকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে বগুড়ায় বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর মধ্য দিয়ে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলনকে বেগবান করতে সক্ষম হবেন।’