প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য এই মে মাসে গুগলের আই/ও মঞ্চে হাজির হল নতুন চমক নেক্সট জেনারেশন অ্যাসিসট্যান্ট। কণ্ঠস্বরের নির্দেশনা শুনে ফোনের নানা কাজ সহজেই করে দেবে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স সহযোগী।
একদম ‘শূন্য’ থেকে একে গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন জাহিদ সবুর। বয়স ত্রিশ পেরুতেই ‘একটা বিশেষ কিছু’ বনে গেছেন এই বাংলাদেশি। এটা সহজ ছিল না মোটেই, কিন্তু ফাঁকি দিয়ে সেই কঠিন পথ পাড়ি দিতে চাননি তিনি, আর তাতেই ধরা দিয়েছে সাফল্য।
বিশ্বজুড়ে গুগলের লাখ খানেক কর্মীর মধ্যে প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার আছেন মোটে আড়াইশ জন। এরমধ্যে একজন বাংলাদেশের জাহিদ সবুর। গুগলের পরিচালকদের মধ্যেও প্রথম বাংলাদেশি তিনি।
তার কর্মস্থল এখন সুইজারল্যান্ড। সেখান থেকেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জাহিদ সবুরের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার গুগল জয় আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।
গুগলে শুরু থেকে এখন
২০০৭ সালে গুগলে যোগ দেওয়ার দিনটি এখনও রোমাঞ্চিত করে জাহিদ সবুরকে। তবে দেশে থাকাকালে নিজেকে নিয়ে তার যত গর্ব ছিল, গুগল কার্যালয়ে গিয়ে তা ভেঙে যায়।
“আমি যখন গুগলে প্রথম ঢুকলাম, তারপরে যেসব খবর বের হল, তাতে দেখা যায় যে বাংলাদেশির গুগল জয়। আমি যখন বাংলাদেশে ছিলাম, ইউনিভার্সিটিতে ছিলাম, প্রোগ্রামিং কমপিটিশন করতাম, সব জায়গাতেই মনে হত, আমি একটা বিশেষ কিছু হয়ত। তারপর গুগলে ঢোকার পর মনে হল আমি কেউ না।”
মাত্র এক যুগের মধ্যেই গুগলের প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার পদটি নিজের করে নেবেন, সেটা তখন ভাবতে পারেননি তিনি। গুগলে লেভেল-থ্রিতে যোগ দিয়েছিলেন। এর দুই ধাপ উপরে সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, এরপর রয়েছে স্টাফ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদ।
গুগলের অনেকের মতো জাহিদও মনে করতেন, ওই পর্যন্ত পৌঁছেই অবসর তার ভবিতব্য।
“তখন ভাবতাম, ওটা যদি হয়ে যায়, তাহলে রিটায়ার করতে পারব। বাংলাদেশ থেকে তখনও কেউ স্টাফ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়নি। ওটাও যখন হয়ে গেল তারপর জানলাম, তার উপরে সিনিয়র স্টাফ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।”
এরও কয়েক ধাপ উপরে ‘প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার’ পদটি।
জাহিদ বলেন, “ওটা আসলে চিন্তাও করিনি। দেখতে দেখতে কীভাবে যেন সেটা হয়ে গেলাম।”
কী করছেন, কী করবেন
বড় পদে আসীন হওয়ার পর গুগলে নিজের টিমকেও গ্রুমিং করতে হয় জাহিদকে। তবে তার ভাষায়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটা হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
কাজটি যে সহজ নয়, তা বোঝাতে তিনি বলেন, “এখন আমি যত মিটিংয়ে যাই, বেশিরভাগ মিটিংয়ে আমি মোস্ট সিনিয়র পারসন। এজন্য আমাকে সতর্কও থাকতে হয়। সবাই যেন ফ্রিভাবে কথা বলতে পারে, সেটা দেখাও আমার দায়িত্ব।
“যেটা বেস্ট ডিসিশন সেটা নিতে হয়। এটা সব সময় আইডিয়াল ডিসিশন হয় না। কারণ পারফেকশন অনেক সময় সম্ভব না। যেটা করলে সবচেয়ে ভালো হবে, সেটা করতে হয়।”
প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পর নিজের কাজের পরিসর আরও বিস্তৃত হবে জানিয়ে জাহিদ বলেন, “এখন যে ফ্রিডমটা আছে, যে স্কেলে এখন আমি করতে পারি; এটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় জিনিস।”
“নতুন আইডিয়া মানে হচ্ছে নতুন ট্রান্সফরমেটিভ আইডিয়া। মানুষ এখন যেভাবে গুগলের সার্ভিস বা প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করে, সেটাকে একদম ট্রান্সফর্ম করে ফেলা ফিউচারিস্টিকভাবে।
“আজকে যেভাবে ব্যবহার করছে আগামী পাঁচ বছর পরে আরেকভাবে ব্যবহার করবে। সেই ব্যবহারটা যেন এখনকার চেয়ে অনেক বেশি ভ্যালু এনে দেয় একজন গুগল ব্যবহাকারীকে; সারা পৃথিবীর যে কোনো কোন থেকে যেন তারা বেনিফিটেড হতে পারে, এটা হচ্ছে আমার মিশন আর ভিশন। সবকিছুই এটাকে ঘিরে।”
তার নেক্সট জেনারেশন অ্যাসিসটেন্ট টপকে যেতে পারে অ্যাপলের সিরিকে; এমন কথা লিখেছে কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনও।
তবে এখানেই থেমে থাকছেন না জাহিদ, এরই মধ্যে নতুন ভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
বিষয়টি ‘গোপনীয়’ বলে এখন শুধু এটুকু জানালেন, ‘এক্সসাইটিং’ কিছু একটা নিয়েই ভাবছেন আজকাল।
যেভাবে গুগলে
বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে গুগল থেকে ডাক পেলেও জাহিদ সবুর যোগ দেন গ্রাজুয়েশন পর্ব শেষ করে।
বাংলাদেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহিদ ছিলেন প্রথম শিক্ষার্থী, যাকে গুগল সরাসরি নিয়োগ দেয়।
জীবনের ওই বিশেষ মোড় নিয়ে তিনি বলেন, “একটা প্রোগ্রামিং কমপিটিশনের পুরস্কার বিতরণি পর্বে গুগল আমাকে জানায়, কাল সকালে ইন্টারভিউ হবে।…মাসখানেক পরে তারা কিছু রেফারেন্স চায়, ট্রান্সস্ক্রিপ্ট চায়, পরে জব অফার।”
ওই প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় নিজের করা সমাধান জমা দিতে গিয়ে অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন জাহিদ।
“প্রোগ্রামিং কনটেস্টে ফাইনালে যাওয়ার জন্য কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে…কনটেস্টের মাঝখানে ইলেকট্রিসিটি চলে যায়। আমার কোনো ইউপিএস-আইপিএস কিছুই ছিল না। আমার কমপিউটার সোজা বন্ধ হয়ে যায়।
“ওটা সময়ভিত্তিক কমপিটিশন ছিল। আর ১৫ মিনিট পর শেষ হয়ে যাবে। আমার সলুশন লেখা ছিল, শুধু সাবমিট করব। কিন্তু আমি সেইভ বাটন প্রেস করার আগে না পরে বিদ্যুত গেল, সেটা মনে করতে পারছিলাম না।
“ইলেকট্রিসিটি আসলো ঠিক এক মিনিট আগে, কমপিউটার স্টার্ট হওয়ার পর আর কয়েকটা সেকেন্ড ছিল; আমি ফাইলটা ওপেন করলাম, দেখি যা সেইভ করেছি তা আছে; আমি সাবমিট করলাম।”
শৈশবেই ‘ইঞ্জিনিয়ার’
ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে কমপিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং করেছিলেন জাহিদ সবুর।
তখনকার আর সবার মতো তার বাবা-মাও চাইতেন, ছেলে চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী হবে।
“তবে আমি ইলেকট্রনিকসে খুব অ্যাডিকটেড ছিলাম। ক্লাস থ্রিতে সায়েন্স ফেয়ারে একটা পুরস্কার ছিল ইলেকট্রনিকসের বই। বইতে অনেক সার্কিট ছিল। ওগুলো টুকিটাকি বানানো শুরু করি। যখন জিনিসটা আরও সিরিয়াস হয়ে যায়, তখন আরও পার্টস দরকার হয়, সোলডারিং আয়রন, মালটিমিটার, রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর, আইসি…
“তখন আমি মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ি, বয়স দশের মতো। আমি নিজে তো আর এগুলো কিনতে পারি না। আমার মা তখন আমাকে স্টেডিয়াম মার্কেটে নিয়ে যেত। মার্কেট বাসা থেকে অনেক দূরে ছিল। মা এগুলো কিনতে সাহায্য করতো। দোকানদারও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত, ভাবত- এই পিচ্চি ছেলেকে এগুলো কিনে দিচ্ছে কেন?”
“যখন মা দেখতেন যে আমি এগুলো ব্যবহার করে জিনিসপত্র তৈরি করতে পারছি, সায়েন্স ফেয়ারে কোনোটাতে ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হইনি, এগুলো দেখার পর মা কখনও ভুলেও বলেননি যে ডাক্তার হতে হবে। মা ধরেই নিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হব।
“ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। পরে এ-লেভেল করার সময় কমপিউটিং স্টাডিজ একটা সাবজেক্ট ছিল, তখন ওটার কারণে কমপিউটার ব্যবহার করা হয়। তারপর আমি কমপিউটারের দিকে ঝুঁকে পড়ি।”
জাহিদের বাবা-মার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। মা ছিলেন পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। বাবা ছিলেন সৌদি আরবে কিং ফয়সাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।
সৌদি আরবে জন্মের পর ছয়-সাত বছর বয়স পর্যন্ত ওই দেশেই ছিলেন জাহিদ। তারপর স্থায়ীভাবে দেশে ফেরার পর বেড়ে ওঠেন ঢাকাতেই।
কখনোই ক্লাসের পেছনের সারির শিক্ষার্থী ছিলেন না জাহিদ।
“ক্লাস-টুতে তিন মাস পড়ে বৃত্তি পরীক্ষা দিই পাড়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে। তখন পর্যন্ত ওখানে কেউ বৃত্তি পায়নি। আমি প্রথম ছাত্র হিসেবে বৃত্তি পাই।”
জাহিদ জানান, মুখস্ত পড়াশোনা একদমই ভালো লাগত না তার।
“ম্যাথ ভালো লাগত, বাবা বায়োলজিতে পিএইচডি হলেও আমার বায়োলজি ভালো লাগত না। বাবাও আর চাপ দেননি।”
হল না পরীক্ষা দেওয়া
জাহিদ এক বছরের জন্য পড়েছিলেন মিরপুরের মনিপুর হাই স্কুলে। পরে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন তার মা।
স্কুলে শেষ পর্যন্ত প্রথম তিন-চারজনের মধ্যেই থাকতেন। ও-লেভেলে ছয়টি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৫টিতেই ‘এ’ তুলে নেন বল জানান জাহিদ। ইংরেজি মাধ্যমে পড়েও বাংলার প্রতি ‘ভীষণ অনুরাগে’ ইংরেজিতে ‘একটু খারাপ’ করেন তিনি।
পড়াশোনার পাশাপাশি নতুন কিছু বানানোর ভাবনা তখনও পিছু ছাড়েনি জাহিদের।
ডায়াল-আপ মডেমে ধীর গতির ইন্টারনেটের ওই সময় ডাউনলোডকে গতিশীল করতে একটা সমাধানও বের করে ফেলেন তিনি।
“ডেটা আপলোড ডায়াল-আপ দিয়ে হলেও ডেটা ডাউনলোড হবে সাধারণ ডিশ এন্টেনা ব্যবহার করে। এতে করে লো লেটেন্সি আর হাই ব্যান্ডউইথ পেতেন ব্যবহারকারীরা।”
ওই উদ্ভাবন নিয়ে এক কমপিউটার প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এরপর দেড় বছরের মধ্যে দুই হাজারেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার নিয়ে দাঁড় করিয়ে ফেললেন নিজের স্টার্ট-আপ। দুই-তিন জন কর্মীও নিয়োগ দিয়েছিলেন নিজের প্রতিষ্ঠানে। বিজ্ঞাপন দিতেন তখনকার দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও।
নিজের গড়া এক সময়ের প্রতিষ্ঠানকে ‘বাণিজ্যিকভাবে সফল’ উদ্যোগ বলেই মনে রেখেছেন জাহিদ সবুর।
এসবে ব্যস্ত হয়ে গেলেন বলে ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার। আর তাতে করে হারালেন পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ।
পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সব বিষয়ে ‘এ প্লাস’ নিয়েই ডিগ্রি শেষ করেন। ভালো ফলাফলের সঙ্গে হাতে তুলে নেন প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড, ভাইস চ্যান্সেলর’স অ্যাওয়ার্ড, সুমা কাম লাউদে অ্যাওয়ার্ড।
গাড়ি নেই
কাজের সুবাদে আর ব্যক্তিগত মিলিয়ে জাহিদ এরই মধ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের শ’খানেক শহর।
কিছুদিন আগেও থাকতেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। এখন থাকছেন জুগ শহরে। বাসা থেকে গুগল কার্যালয়ে যান ট্রেনে চেপে।
জাহিদ বলেন, “আমার কোনো গাড়ি নেই। এখানে বেশিরভাগ মানুষের কোনো গাড়ি নেই। বাসা থেকে দুই-তিন মিনিট হাঁটাপথ…ট্রেন স্টেশন। সেখান থেকে কাজে যেতে ঠিক ২৪ মিনিট লাগে। আমি ২৫ মিনিট বলছি না, কারণ ওটা ঠিক ২৪ মিনিটই লাগে। ট্রেন ছাড়ে যে সময়, ঠিক সে সময়ই ছাড়ে।”
অবশ্য যে কোনো খারাপ আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়ার সমাধান দিলেন নিজেই; সেটা হচ্ছে ভালো একটা আসক্তি গড়ে তোলা।
রাতে নতুন কিছু নিয়ে ভাবনা আর দিনে লম্বা সময় নিয়ে ঘুমুতে পছন্দ করা জাহিদ নিজের অবসর সময় নিয়ে বলেন, “স্পোর্টস আমার কাছে খুবই খুবই জরুরি। বাকি সবকিছু বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু ব্যাডমিন্টন সপ্তাহে দু’বার…এটা বন্ধ হয়নি এবং হতে দেব না। এর বাইরে ফটোগ্রাফি আমি খুব পছন্দ করি। বিশেষ করে যখন ট্রাভেল করি।
“আগে মালটিকপ্টার (ড্রোন) তৈরি করতাম। এখন এটা খুব সহজসভ্য হয়ে গেছে, দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। আমি বলছি সেই ১০ বছর আগে যখন আসলে দোকানে কিনতে পাওয়া যেত না। যেহেতু এখন এত সহজে কিনতে পাওয়া যায়, সেহেতু এখন এটা আর ইন্টারেস্টিং লাগে না।”
গুগলে জাহিদ সব সময়ই কিছু নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করে এসেছেন।
গত বছর লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শোতে (সিইএস) প্রদর্শিত হয় তারই নেতৃত্বে বানানো স্মার্ট ডিসপ্লে ডিভাইসটি।
এখন পর্যন্ত প্রায় ২০টির মতো পেটেন্টের অধিকারী জাহিদের কাছে নিজের বানানো ডিভাইস মানুষ ব্যবহার করছে, এটা ভাবতে ভাল লাগে বেশি।
তিনি বলেন, “দোকান থেকে কিনে আমার বোনকে যখন এটা গিফট হিসেবে দিলাম, তখন আমার খুব অবাক লাগলো, আমার তৈরি একটা জিনিস দোকানে পাওয়া যা! এবং মানুষ সেটা কেনে! এটা আমার জন্য বড় একটা ব্যাপার।”
জীবন ‘সহজ নয়’
‘শেষ পর্যন্ত সাফল্য আসবেই’ এই মন্ত্রে বিশ্বাসী বলে ব্যর্থতায় ঘাবড়ে যেতে চান না জাহিদ সবুর।
তরুণদের কাছে মোটিভেশন হয়ে ওঠার বিষয়ে একটু সর্তকও থাকতে চান তিনি।
“আমি বরং অন্যভাবে বলি, সফল হওয়া-ব্যর্থ হওয়া, এটা জরুরি না। জরুরি হচ্ছে আমরা আমাদের বেস্ট দিচ্ছি কি না। আর খুব ধৈর্যশীল হতে হবে। মানে শর্টকাট খুঁজলে হবে না।
“আমি গতকাল কী ছিলাম, তার থেকে আমি আজকে একটু হলেও এগিয়েছি কি না; যদি আমি এগিয়ে থাকি তাহলে ঠিক আছে। বাকি আরেকজন আমার থেকে ১০ কদম এগিয়ে থাকুক, সমস্যা নেই। আস্তে আস্তে আমিও চলে যাব।”
“প্রতিদিন এক পা আগালে ৩৬৫ দিনে ৩৬৫ পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে যায়,” তরুণদের জন্য এটাই বললেন তিনি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং জরুরি বলেও মনে করছেন গুগলে একমাত্র বাংলাদেশি পরিচালক জাহিদ।
উন্নয়নকে মানুষের সময় সাশ্রয়ের নিরিখে পরিমাপ করায় জোর দিয়ে তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা মিনিট বাঁচানো গেলে সেটা কিন্তু পুরো দেশের জন্য অনেকগুলো মিনিট, অনেকগুলো ঘণ্টা, অনেকগুলো বছর বেঁচে যাবে।
“প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একটা জিনিস কনস্ট্যান্ট – ২৪ ঘণ্টা সময়। সে বিল গেটস হোক আর সে ক্লাস ওয়ানের ছাত্র হোক। সেই সময়ের সবচেয়ে ভালো ব্যবহার যদি করা না যায়, তাহলে কিন্তু বাকি সবকিছু অ্যাফেক্টেড হয়ে যায়।”
জাহিদ বলেন, “কোনটা উন্নয়ন আর কোনটা উন্নয়ন না, এটা যদি আমরা পরিমাপ করতে না পারি, তাহলে কিন্তু ঠিক দিকে যে আমরা যাচ্ছি, সেটাও পরিমাপ করতে পারব না।
“আমার মনে হয়, লক্ষ্য এটা হওয়া উচিৎ না যে সবকিছু ডিজিটাল করতে পারলাম কি না? লক্ষ্য এটা হওয়া উচিৎ যদি ডিজিটাল করে টাইম সেইভ করা যায়, তাহলে অবশ্যই সেটা ডিজিটাল করা উচিৎ।”