ছাত্রলীগের নতুন পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া ৯৭ জন নানা কারণে বিতর্কিত বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ নেতারা।
তাদের দাবি, এদের কেউ বিবাহিত, কেউ অনুপ্রবেশকারী, কেউ মাদকসেবী, কেউ মামলার আসামি, কারও বয়স পেরিয়ে গেছে, কেউ চাকরিজীবী, কেউ ছাত্রদল কিংবা শিবির থেকে আসা।
ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে দাগি হিসেবে ১৭ জনকে চিহ্নিত করে তাদের বাদ দেওয়ার আশ্বাস সরকার সমর্থক সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব দেওয়ার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে ৯৭ জনের তালিকা হাজির করল বিক্ষুব্ধরা।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ওই সংবাদ সম্মেলনে এই তালিকা প্রকাশ করে তাদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে তারা।
সম্মেলনের এক বছর বাদে চার দিন আগে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর বেঁধেছে গোল। সংগঠটির একটি অংশ এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করলে তাদের উপর হামলাও চালায় কমিটিতে স্থান পাওয়ারা।
এরপর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলার মধ্যে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১৭ জনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়ার কথা জানান।
ওই ১৭ জনকে বাদ দেওয়ার আশ্বাসের পাশাপাশি কমিটি প্রকাশের পর বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী।
তাদের সেই হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে সংবাদ সম্মেলনে আসা ছাত্রলীগের আগের কমিটির প্রচার সম্পাদক সাঈফ উদ্দিন বাবু বলেন, “৩০১ সদস্যের যে কমিটি করা হয়েছে, সেখানে শতাধিক বিতর্কিত লোকের জায়গা হওয়া সত্বেও ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাত্র ১৭ জনের নাম প্রকাশ করেছে।
“আমরা তাদের প্রতি আহ্বান রাখছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতো বাকি সকলকে খুঁজে বের করে সংগঠন থেকে বিতাড়ন করতে হবে।”
দাগিদের ‘ছাত্রলীগের টিউমার’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগ আদর্শের সংগঠন, অপকর্মকারীদের অভয়ারণ্য নয়।।”
সাঈফ বলেন, “যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সে নিদের্শনার বাস্তবায়ন আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। সেহেতু আমরা আর নতুন কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছি না।
“আর যদি এর ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে আমরা পরবর্তীতে আন্দোলনে যাব। এর জন্য আমরা কোনো সময় বেঁধে দেব না। কারণ আমরা আস্থা রাখছি।”
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসিমউদদীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান বলেন, “বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘ এক বছর পর আমাদেরকে একটি বিতর্কিত কমিটি উপহার দিয়েছে। তারা কীভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতর্কমুক্ত কমিটি দেবে, সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। নতুন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
“এছাড়াও দুঃখের বিষয় হল, যারা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠনকে বিতর্কমুক্ত করতে প্রতিবাদ জানিয়েছে, তাদেরকেই বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গত কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ, উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও নবগঠিত কমিটির উপ সাংস্কৃতিক সম্পাদক ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, কুয়েত-মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও নবগঠিত কমিটির উপ পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ফরিদা পারভীন, সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা প্রমুখ।
ছাত্রলীগ নেতৃত্বের দেওয়া ১৭ জন
সহ-সভাপতি তানজিল ভুইয়া তানভীর, সুরঞ্জন ঘোষ, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, আতিকুর রহমান খান, বরকত হাওলাদার, শাহরিয়ার বিদ্যুৎ, মাহমুদুল হাসান তুষার, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, তৌফিকুল হাসান সাগর, সাদিক খান, সোহানী হাসান তিথি, মুনমুন নাহার বৈশাখী, দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব, উপ সম্পাদক রুশি চৌধুরী, আফরিন লাবনী।
বিক্ষুব্ধদের দেওয়া তালিকা
সহ সভাপতি তানজিল ভুইয়া তানভীর, রেজাউলকরিম সুমন, আরিফিন সিদ্দিক সুজন, আতিকুর রহমান খান, বরকত হোসেন হাওলাদার, আবু সালমান প্রধান শাওন, শাহরীয়ার কবির বিদ্যুৎ, ফুয়াদ রহমান খান, সাদিক খান, তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী, এস এম তৌফিকুল হাসান সাগর, তৌহিদুর রহমান হিমেল, মাহমুদুল হাসান, সৃজন ভুইয়া, তৌহিদুর রহমান পরশ, আবু সাঈদ, খালিদ হাসান নয়ন, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, রুহুল আমিন, সোহানী হাসান তিথী, মাহমুদুল হাসান তুষার, এস এম হাসান আতিক, সুরঞ্জন ঘোষ, জিয়ান আল রশিদ, সোহেল রানা, মুনমুন নাহার বৈশাখী, তরিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন তপু, তানজীদুল ইসলাম শিমুল, এম সাজ্জাদ হোসেন, আলিমুল হক, মাজহারুল ইসলাম মিরাজ, রাকিব উদ্দিন, তৌহিদুল ইসলাম জহির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী, মোঃ শাকিল ভুইয়া, মোর্শেদুল হাসান রুপম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলম, সোহানুর রহমান সোহান, কৃষি সম্পাদক এস এম মাসুদুর রহমান মিঠু, ধর্ম সম্পাদক তাজউদ্দিন, আন্তর্জতিক সম্পাদক রাকিনুল হক চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক মোঃ রাকিব হোসেন, আইন সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাৎ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আসিফ ইকবাল অনিক, পাঠাগার সম্পাদক জাভেদ হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক সিজাদ আরেফিন শাওন, আরিফ শেখ, নিলায়ন বাপ্পী, উপ-দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আব্দুল্লাহ বিন মুন্সি, মোমিন শাহরিয়ার, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক সৌরভ নাথ, উপ-সাংস্কিৃতিক সম্পাদক আফরীন লাবনী, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ফুয়াদ হাসান, ওয়াহিদুজ্জামান লিখন, এস এম মাহবুবুর রহমান সালেহী, উপ-পাঠাগার সম্পাদক রুশী চৌধুরী, উপ-প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক মেসকাত হোসেন, উপ-গণশিক্ষা সম্পাদক মনিরুজ্জামান তরুন, উপ-ত্রান ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক সালেকুর রহমান শাকিল, ফেরদৌস শাহরিয়ার নিলয়, উপ-স্বাস্থ সম্পাদক ডাঃশাহজালাল, শফিউল ইসলাম সজিব, উপ-কৃষিশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম হাসিব মীর, উপ-গণযোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন জসিম, সুশোভন অকর্, নাজমুল হুদা সুমন, উপ- বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক মোঃ তুষার, রাকিবুল ইসলাম সাকিব, উপ-আপ্যয়ন সম্পাদক শাহরীয়ার মাহমুদ রাজু, উপ-মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক হিরণ ভুইয়া, বেলাল মুন্না, উপ-কর্মস্ংস্থান বিষয়ক সম্পাদক অভিমুন্য বিশ্বাস অভি,আল ইমরান, উপ-ক্রীড়া সম্পাদক বায়েজিদ কোতয়াল, উপ-অর্থ সম্পাদক মহসিন খন্দকার, সহ-সম্পাদক জাফর আহমেদ ইমন, তানভীর আব্দুল্লাহ, সামিহা সরকার, ফারজানা ইসলাম রাখি, তামান্না তাসনিম তমা, মোঃ মেহেদী হাসান রাজু, আঞ্জুমান আরা অনু, আসিফ রায়হান, শফিকুল ইসলাম কোতয়াল, শেখ আরজু, সোহেল রানা সান্ত, রনি চৌধুরী,ওমর ফারুখ, রেজাউল করিম, সদস্য ফয়সাল করিম দাউদ খান, ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি এবং আরিফ হোসেন।
সাঈফ বলেন, “যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এটা শুধু অভিযোগ। আমাদের দাবি থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক। একইসাথে তারা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করুক।”
এই তালিকায় নাম আরও বাড়তে পারে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “তালিকায় আরও নাম যোগ হবে। একইসাথে এই তালিকায় বিভিন্নভাবে অভিযোগের ভিত্তিতেই নামগুলো এসেছে। কিন্তু যাদের দোষ প্রমাণ হবে না, তাদের নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।”
বিক্ষুব্ধদের তালিকার বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বপ্রণদিত হয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তাদেরকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে।
“এরপরেও যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর অথবা দপ্তর সেলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ জমা দিতে হবে। কিন্তু যারা এইসব ভিত্তিহীনঅভিযোগ তুলছে, তারা ছাত্রলীগের ভালো চায় না। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাব্বানী বলেন, “কমিটি ঘোষণার পূর্বে তো কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। তাহলে এখন এসব ঢালাওভাবে অভিযোগ নিয়ে আসা হচ্ছে কেন? এইসব প্রমাণ করে তারা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করছে।”
এই সবের জন্য ছাত্রলীগের কথিত সিন্ডিকেটকেও দায়ী করেন তিনি।