মন্ত্রিসভায় আকস্মিক পরিবর্তন এনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকার গঠনের চার মাসের মাথায় রোববার দুই মন্ত্রীর দায়িত্ব কমানোর পাশাপাশি এক প্রতিমন্ত্রীর দফতর বদল করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের গুঞ্জন চলে আসছিল কিছুদিন ধরে। তবে কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দফতর পুনর্বণ্টন করলেও এই দফায় মন্ত্রিসভায় কোনো নতুন মুখকে অন্তর্ভূক্ত করেননি প্রধানমন্ত্রী।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী তার আসন্ন জাপান ও সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফেরার পর মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
রোববার বিকেলে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব পুনর্বন্টন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে এর আগে বিষয়টি কেউই আঁচ করতে পারেননি। আদেশটি জারি হওয়ার পরই বিষয়টি সবার নজরে আসে।
রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার পুনর্বিন্যাস করে এই দায়িত্ব বন্টন করেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের দায়িত্ব কমিয়ে শুধুমাত্র স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তিনি এই মন্ত্রণালয়ের দাফতরিক কার্যক্রম চালাবেন।
আর একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। তিনি শুধু পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারকে দায়িত্ব কমিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী করা হয়েছে। একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। অপর দিকে ডা. মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধ্বস বিজয়ের পর তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ জানুয়ারি তার নেতৃত্বাধীন ৪৬ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী নিয়ে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভাকে অনেকে চমক হিসেবে দেখেছেন। কারণ দলের হেভিওয়েট নেতাদের প্রায় সবাইকে বাদ দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভা যাত্রা শুরু করে।
নতুন মন্ত্রিসভা একশ’ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করলেও আগের মেয়াদের মন্ত্রিসভার তুলনায় এবার কাজের গতি অনেকটা কমে আসছিল বলে অনেকেই মনে করছিলেন। বিশেষ করে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে কাজে গতি একেবারেই কমে যাওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দফতর ও দায়িত্ব পুনর্বন্টনের মাধ্যমে দৃশ্যত কাজের গতি ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে কিছুটা দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছিল। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের মধ্যকার দ্বন্দ্বের বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্য হয়ে পড়েছিল। এ নিয়ে গত ১৮ এপ্রিল একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর এমন দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসায় তিনি ডা. মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন বলে সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া পুনর্বন্টনকৃত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব পালন নিয়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছিল। মন্ত্রি ও প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছিল। এ কারণেই মন্ত্রণালয়গুলোর কাজকর্মে কিছুটা হলেও স্থবিরতা দেখা দেয়। এ বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রি-প্রতিমন্ত্রীর দফতর পুনর্বন্টনের এমন সিদ্ধান্ত নেন বলে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।