সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণেই কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ পরিস্থিতিতে ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্তি বরাদ্দ দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে দলটি। এসময়ে কৃষকদের বর্তমান সংকট উত্তরণে ১১ দফা প্রস্তাবও তুলে ধরা হয় দলটির পক্ষ থেকে।
শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।
কৃষকদের বর্তমান সংকট উত্তরণে ১১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল না কিনে মধ্যসত্ত্বভোগী চালকল মালিক ও দলীয় লোকদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করে তাদেরকে সরকার মুনাফা পাইয়ে দিচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকার ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কৃষককে কমপক্ষে তিন মাসের জন্য সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে প্রদান, সরকারি পর্যায়ে ধান-চাল গুদামজাত করতে প্রয়োজনে বেসরকারি গুদাম ভাড়া করা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচিতে অধিক পরিমাণ চাল বিতরণ করা, ধান ক্রয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করা, প্রান্তিক চাষী ও ক্ষেত মজুরদের বিশেষ সুদবিহীন ঋণ প্রদান, সরকার দলীয় কর্মীদের ধান ক্রয়ের অনুমতি বাতিল করা, ধান উপাদন সম্পর্কে সরকারি সঠিক তথ্য প্রদান, মৌসুমের আগেই ধান সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা, ধান-চাল সংগ্রহের পরিমাণ কমপক্ষে বোরো উৎপাদনের ১৫ শতাংশ করা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কৃষকদের বর্তমানে যে দুরবস্থা তা সরকারের ভুল নীতির প্রতিফলন। সরকার বলছে- চাল উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পন্ন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে চাল উৎপাদনের পরিমাণ তিন কোটি ৬২ লাখ মেট্রিক টন। আবার এই সময়ে সরকারি ব্যবস্থায় খাদ্যশষ্য আমদানি হয়েছে ৯৭ দশমিক ৭ লাখ মেট্রিক টন। একদিকে বলা হচ্ছে যে, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন, অন্যদিকে চাল আমদানি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র সুবিধাভোগীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য চাল আমদানি করা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, চাল আমদানির কারণেই কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের পকেট ভারী করার জন্য তাদের ধান কেনার অনুমতি দিয়ে সরকার কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। বর্তমান সংকট উত্তরণে কৃষকদের থেকে বেশি পরিমাণ ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সরকার কৃষকদের ন্যায্য দাবির কথা কানে নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কৃষকদের এই বিক্ষোভকে সাবোটেজ দাবি করেছেন। তাদের কয়েকজন নেতা বিভিন্ন রকমভাবে এটার সঙ্গে আবার বিএনপিকে জড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কারণ তাদের কাছে বিএনপি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। উঠতে বসতে শয়নে-স্বপনে তারা সবখানেই বিএনপি ভূত দেখতে পায়। তারা বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলে সব জায়গায় জড়াতে চায়।
ফখরুল বলেন, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। সরকার এই খেলাপি ঋণ গ্রহিতাদের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়েছে। তারা ব্যাংক লুটপাটকারীদের দুধ-কলা দিয়ে পুষছেন। অথচ এই খেলাপি ঋণের মাত্র ১০ শতাংশ বরাদ্দ দিলে সরকার আরো ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কৃষি বিষয়ক সহ-সম্পাদক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক ও কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।