দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউশ জাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। অন্তত পাঁচ শতাধিক ডিম আহরণকারী শনিবার দিবাগত রাত ৯টা থেকে রোববার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ২৩০টি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করে। সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার কেজি, যা গত বছরের তুলনা এক তৃতীয়াংশ মাত্র। আহরিত ডিম আধুনিক পদ্ধতিতে সরকারি হ্যাচারির পাশাপাশি সনাতন পদ্ধতিতে মাটির তৈরি কুয়াতে ফোটাতে ব্যস্ত সময় পার করছে ডিম সংগ্রাহকরা। সবকিছু ঠিক থাকলে এসব ডিম থেকে ফোটানো রেণু আগামী বুধবার থেকে বিক্রি শুরু হবে।
অমাবশ্যা ও জো না থাকলেও বজ্রসহ বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে শনিবার সকালে নদীতে মা মাছ ডিমের নমুনা ছাড়ে। পরে দিবাগত রাত ৯টার দিকে মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে। সকাল থেকে নদীতে অবস্থান করা ডিম আহরণকারীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম আহরণ করে। নদীর নোয়াহাট থেকে শুরু করে মদুনাঘাট এলাকায় ডিম আহরণ করা হয়। প্রতি নৌকায় গড়ে দেড় বালতি (২০লিটার) হিসেবে ২৩০টি নৌকা থেকে প্রায় ৭ হাজার কেজি পানি মিশ্রিত ডিম আহরিত হয়। প্রতি ৬০ কেজি ডিম থেকে তিনদিন বয়সী ১ কেজি রেণু ফোটানো সম্ভব হয়। সে হিসেবে সবকিছু ঠিক থাকলে এবারের সংগৃহীত ডিম থেকে তিনদিন বয়সী প্রায় ১১৭ কেজি রেণু ফোটানো সম্ভব হবে বলে ধারণা করছে সংগ্রহকারীরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক জানান, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় সরকারী হ্যাচারির ১৩৩টি কুয়ায় বিনামূল্যে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজ করছেন ডিম আহরণকারীরা। এ ছাড়া অনেকেই নদীর পাড় ঘেষা এলাকায় বেসরকারীভাবে তৈরি ১৪১টি মাটির কুয়ায়ও আহরিত ডিম থেকে রেণু ফোটাচ্ছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে তিনদিন পর এসব রেণু বিক্রি করবেন ডিম আহরণকারীরা।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, মৎস্য নিধন ও নদীতে ইঞ্জিত চালিত যান বন্ধের চেষ্টা করেছি। নদী থেকে আহরিত ডিম নিরাপদে ফোটানের জন্য ডিম সংগ্রাহকদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগীতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া হালদার রেণুর সঙ্গে কেউ যেন স্থানীয় হ্যাচারির রেনু মিশিয়ে ভেজাল করতে না পারে সে জন্য দুইটি ভ্রাম্যমাণ আদালত তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য, হালদা নদী থেকে ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল ২২৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল ১৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালের ২ মে ৭৩৫ কেজি, ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল ও ১২ জুন ২৮০০ কেজি, ২০১৪ সালের ১ মে ১৬৫০০ কেজি, ২০১৩ সালের ৫ মে ৪২০০ কেজি, ২০১২ সালে ৮ এপ্রিল ২১২৪০ কেজি, ২০১১ সালে ১৮ এপ্রিল ১২৬০০ কেজি, ২০১০ সালে ২২ মে ৯০০০ কেজি ও ২০০৯ সালে ২৫ মে ১৩২০০ কেজি ডিম সংগৃহীত হয়।